তিন পার্বত্য অঞ্চলে (বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি) শাসন, ভূমি ও সম্পদ, অর্থ ও অন্যান্য বিষয়ক আইনের উপর এখনো অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। যা আইনের সুষমকরণ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করছে। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির আলোকে সংশোধিত বা প্রণীত নুতন ও বিশেষ ধরণের পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কিত আইনসমূহ যেমন, পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন- ১৯৮৯ (অভিযোজনসহ), পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন ১৯৯৮ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয় মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত কর্মবন্টন, ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি এবং জাতীয় পর্যায়ের আইন। এ আইনগুলো একটির সঙ্গে অন্যটির সাংঘর্ষিকপূর্ণ। সাধারণ জনগণকে আইনগত সুবিধা দিতে হলে সাংঘর্ষিকপূর্ণ আইনগুলোকে সুষমকরণ করার তাগিদ দিয়েছেন কর্মশালার বিশ্লেষকরা।
সোমবার মেঘলা পর্যটন মোটেলের কনফারেন্স রুমে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ ও সিএইচটিডিএফ (পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন সহায়তা)-ইউএনডিপি যৌথ আয়োজিত পার্বত্য আইনসমূহের সুষমকরণ বিষয়ক কর্মশালায় বক্তারা অভিমত ব্যক্ত করেন।
দিন ব্যাপী এ কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মোমিনুর রশীদ আমিন-এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বোমাং রাজার প্রতিনিধি রাজপুত্র চসিংপ্রু, আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য সাধুরাম ত্রিপুরা মিল্টন, জেলা পরিষদ সদস্যবৃন্দ, ইউপি চেয়ারম্যানগণ, বিভিন্ন মৌজার হেডম্যান (মৌজা প্রধান), কার্বারী (পাড়া প্রধান) ও জেলা পরিষদের ন্যস্ত বিভিন্ন বিভাগের প্রধানগণ।
কর্মশালায় পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের আইনসমূহ সুষমকরণের পথ নকশা বা পরিকল্পনা প্রণয়ন সংক্রান্ত ধারণাপত্র প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, পার্বত্য স্থানীয় বিষয়ক উপদেষ্টা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য গৌতম কুমার চাকমা। প্যানেল আলোচক ছিলেন, আইনজীবী বাসিংথুয়াই মার্মা, মাধবী মার্মা ও জেলা পরিষদ সদস্য লক্ষীপদ দাশ।
কর্মশালায় বক্তারা আরও বলেন, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের বিশেষ আইনে ভূমি সংক্রান্ত বিষয়ে বলা আছে, জেলায় ইজারা, লিজ, বন্দোবস্তি, ক্রয়-বিক্রয় ও হস্তান্তর করতে হলে জেলা পরিষদের পূর্বানুমোদন প্রয়োজন। সেখানে জেলা প্রশাসন এই আইনটি মান্য করে না। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১৯০০ সালের রেগুলেশন এ্যাক্ট আইনের সঙ্গে জাতীয় পর্যায়ের আইন বা সাধারণ আইনে অসঙ্গতি রয়েছে। ১৯০০ সালের রেগুলেশন এ্যাক্ট ও পার্বত্য চুক্তি আইনে প্রথাগত আইনকে বিচারে প্রধান্য দেওয়ার কথা বলা আছে। সেখানে প্রচলিত আইনে পার্বত্য অঞ্চলের এই প্রথাগত আইনকে বিবেচনায় আনা হয় না। এমন আরো অনেক আইন রয়েছে যা একটির সঙ্গে অন্যটির সাংঘর্ষিকপূর্ণ।
প্রবন্ধে বলা হয়, ২০১৪ সালে “জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীর পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন সহায়তা’-এর সহযোগিতায় পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ শাসন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত আইনসমূহের সুষমকরণ বিষয়ে একটি গবেষণা পরিচালিত হয়। এ গবেষণায় আইনের সুষমকরণ প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন , ভূমি ও সম্পদ, অর্থ ও বিবিধ বিষয়ে ২৬টি জাতীয় আইন এবং ১২টি পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল সম্পর্কিত অন্যান্য আইনসহ আরো বিভিন্ন আইন ও বিধিমালা এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মবন্টন ইত্যাদির সুষমকরণ করা অপরিহার্য বলে সুপারিশ করেছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.