দেশের প্রধান বৌদ্ধধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রাঙামাটির রাজবন বিহারে ২৪ ঘন্টার মধ্য তুলা থেকে সূতা বের করে চীবর তৈরীর বেইন ঘর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে দুই দিনব্যাপী কঠিন চীবর দান উৎসব শুরু হয়েছে।
রাজ বন বিহার পাশে অবস্থিত রাঙামাটির রাজ বন বিহারের ৪৯তম কঠিন চীবর দানোৎসবের প্রথম দিনে মহা পুন্যবতী উপাসিকা বিশাখা কর্তৃক প্রবর্তিত নিয়মে ২৪ ঘন্টার মধ্যে চরকা সূতা কাটা থেকে কাপড় তৈরীর স্থান বেইন ঘর ফিতা কেটে উদ্ধোধন করেন রাজবন বিহার আবাসিক ভিক্ষিুপ্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির। পরে পুণ্যার্থীদের পঞ্চশীল গ্রহণ ও মহামঙ্গল সূত্র পাঠ করেন ভিক্ষুসংঘ। এরপর চরকায় সুতা কেটে চীবর বুনন উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট নারী উদ্যোক্তা মঞ্জুলিকা চাকমা। এ সময় রাজবন বিহার উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সহসভাপতি নিরুপা দেওয়ান, সম্পাদক অমিয় খাসী, অ্যাডভোকেট সস্মিতা চাকমাসহ অন্য কর্মকর্তা ও পুণ্যার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। বেইনের মাধ্যমে সেই সূতা, কাপড় বুনন, রং ও সেলাই করে চীবর(রং বস্ত্র) তৈরীতে এবার দুই শতাধিক বেইনে প্রায় কয়েক হাজার পূর্নার্থী সারারাত চীবর প্রস্তুত করবেন। ২৪ ঘন্টার মধ্যে তৈরীকতৃ চীবর কাল শুক্রবার বিকালে ধর্মীয় অনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে হাজার হাজার পূনার্থীর উপস্থিতিতে ভিক্ষু সংঘের উদ্দেশ্য দান করা হবে। অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার থেকে রাজবন বিহারে অগণিত পুণ্যার্থীর ঢল নামছে। কঠিন চীবর উৎসবকে ঘিরে রাজ বন বিহার এলাকায় নানান খাবারদাবারসহ বিভিন্ন পণ্য সামগ্রির দোকান বসানো হয়েছে। কঠিন চীবর দানোৎসব ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছে জেলা পুলিশ। বুধবার রাজবন বিহার এলাকা পরিদর্শন করেছেন পুলিশ সুপার ড. এসএম ফরহাদ হোসেন। এ সময় সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ ভিক্ষুসংঘ, দর্শনার্থী ও পুণ্যার্থীদের নির্বিঘ্ন যাতায়াতে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ এবং জনসমাগম ব্যবস্থাপনায় তদারকির নির্দেশনা দেন তিনি।
রাজবন বিহার উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমিয় খীসা বলেন, বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব কঠিন চীবর দান। এবারও রাজবন বিহারে দুদিনব্যাপী এ উৎসবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কঠিন চীবর তৈরি শেষে তা বৌদ্ধভিক্ষুদের সমীপে দান করা হবে শুক্রবার বিকালে। অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন কয়েকশ’ বৌদ্ধভিক্ষু। এটি রাজবন বিহারের ৪৯তম কঠিন চীবরদান উৎসব। প্রতিবছর প্রবারণা পূর্ণিমা শেষে কঠিন চীবর দানোৎসবের আয়োজন করেন বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা।
উল্লেখ্য, আজ থেকে আড়াই হাজার বছরেরও আগে মহামতি গৌতম বুদ্ধের প্রধান সেবিকা মহাপুণ্যবতী বিশাখা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চরকায় সুতা কেটে তুলা তৈরি, রংকরণ, বুনন ও সেলাইসহ চীবর (বৌদ্ধভিক্ষুদের পরিধেয় গেরুয়া বস্ত্র) তৈরি সম্পন্ন করে তা গৌতম বুদ্ধ সমীপে দানকার্য সম্পাদন করেছিলেন। এজন্য এ মহাপুণ্যানুষ্ঠানকে বৌদ্ধরা দানোত্তম কঠিন চীবর দান হিসাবে আখ্যায়িত করেন। পরিনির্বাণপ্রাপ্ত বৌদ্ধধর্মীয় মহাগুরু শ্রাবক বুদ্ধ শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের স্বর্গীয় অনুভূতি থেকে বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে রাঙামাটি রাজবন বিহারে সর্বপ্রথম কঠিন চীবর দানোৎসবের আয়োজন করা হয়।
--হিলবিডি২৪/সস্পাদনা/সিআর.