গ্রীস্মের তীব্র তাপদাহে দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলধার কাপ্তাই হ্রদে পানির উচ্চতা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। ফলে একদিকে বিদ্যূৎ উৎপাদনে সংকটসহ মাছের প্রজনন বৃদ্ধিতে ব্যাহত হচ্ছে অন্যদিকে রাঙামাটির সদরের সাথে অন্যান্য উপজেলার সাথে নৌ চলাচলের ব্যাঘাত ঘটায় এলাকার অর্থনীতিতে বিরুপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
উল্লেখ্য, পাকিস্তান শাসনামলে ১৯৬০ সালের দিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে জল বিদ্যূৎ প্রকল্প স্থাপিত হয়। এ প্রকল্প স্থাপনের জন্য কর্নফূলী নদীর উপর বাঁধ দেয়ার ফলে ২৫৬ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে বিশাল জলধারা সৃষ্টি হয় । মানব সৃষ্ট দক্ষিন-পুর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ এ হ্রদ সৃষ্টির ফলে পার্বত্য এলাকায় ৫৪ হাজার কৃষি জমি পানিতে ডুবে যায়। যা চাষযোগ্য জমির প্রায় শতকরা ৪০ ভাগ ধান চাষের জন্য উক্ত জমিগুলো অন্যতম ছিল। এছাড়া এ বাধের কারণে সম্পত্তি ও ঘরবাড়ি ক্ষতি ছাড়াও এক লক্ষের বেশী লোকজন উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়।
কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ২৩০মেগাওয়াট সম্পন্ন ৫টি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে ৩টি ইউনিট থেকে ১১০মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। কাপ্তাই হ্রদের সর্বশেষ তথ্য অনযায়ী বর্তমানে পানির উচ্চতা রয়েছে ৭৬ দশমিক ০৪ এমএসএল। বতর্মান মৌসুমে পানির উচ্চতার স্তর থাকার কথা ছিল ৮২ দশমিক ০৬ এমএসএল। যা হ্রদের পানির উচ্চতা ৬ ফুট পানি কম রয়েছে। এই হ্রদের পানির উচ্চতা ৬৬ এমএসএলের নিচে নেমে গেলে বিপদ সীমা হিসেবে ধরা হয়।
এদিকে, তীব্র তাপদহের কারণে কাপ্তাই হ্রদের পানি দ্রুত হ্রাস পেতে শুরু করেছে। হ্রদের পানি উচ্চতা অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ায় রাঙামাটি জেলা সদরের সাথে দশ উপজেলার মধ্যে ছয় উপজেলা নানিয়ারচর, বরকল, বাঘাইছড়ি, জুড়াছড়ি, লংগদু ও বিলাইছড়ির সাথে নৌচলাচলের মারাত্নক ব্যাঘাত ঘটছে। হ্রদের বুকে জেগে উঠেছে ছোট বড় অসংখ্য দ্বীপ বা ডুবোচর। তাই এসব উপজেলায় বসবাসরত লোজনের যাতায়াতের অবর্ননীয় দূর্ভোগের পাশাপাশি খাদ্য সংকটসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
এছাড়া এসব উপজেলায় উৎপাদিত পণ্য চাষী থেকে ব্যবসায়ীরা বাজারে সঠিকভাবে বাজারজাত করতে না পারায়ও লোকসানে পড়তে হচ্ছে। তাছাড়া তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ অন্যদিকে বিদ্যূতের ঘন ঘন লোডশেডিং এ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন রাঙামাটিবাসী।
জুরাছড়ি উপজেলার বাসিন্দা সাংবাদিক সুমন্ত চাকমা জানান হ্রদের পানির স্তর কমে যাওয়ার কারণে যাতায়াতের অবর্ননীয় দূভোর্গের পাশাপাশি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যর মূল্য দ্বিগুন-তিনগুন বৃদ্ধি পেয়েছে।
অপরদিকে পরিবেশবাদীদের মতে, হ্রদ সৃষ্টির পর থেকে হ্রদের কিছু কিছু জায়গায় সংস্কার বা ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ না নেয়ায় সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে প্রতি শুস্ক মৌসুমরে সময় হ্রদে লঞ্চ ও বোট চলাচল, মৎস্য প্রজনন ও উৎপাদন এবং সর্বোপরি বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে ।
কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোঃ আব্দুর রহমান জানান, প্রকল্পের ৫টি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে ৩টি ইউনিট চালু রাখা হয়েছে। যা এসব ইউনিট থেকে ১১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে পানির উচ্চতা রয়েছে ৭৬ দশমিক ০৪ এমএসএল। বতর্মান মৌসুমে পানির উচ্চতার স্তর থাকার কথা ছিল ৮২ দশমিক ০৬ এমএসএল। যা হ্রদের পানির উচ্চতা ৬ ফুট পানি কম রয়েছে। এসব ইউনিট মাস দুয়েক চালু রেখে বিদ্যূৎ উৎপাদন করা সম্ভব। তবে অতি সহসায় ভারী বৃষ্টিপাত না হলে বিদ্যূৎ উৎপাদনে সমস্যায় সম্মুখীন হতে হবে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.