রাঙামাটি পার্বত্য পরিষদের প্রাথমিক শিক্ষকসহ তৃতীয় ও চতূর্থ শ্রেনীর কর্মচারী নিয়োগে বাছাই কমিটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের প্রতিনিধি রাখার প্রথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে বাছাই কমিটিতে আঞ্চলিক পরিষদের প্রতিনিধি রাখার পরিষদের প্রবিধানমালায় নেই এবং স্বচ্ছতার সাথে শিক্ষসহ তৃতীয় ও চতূর্থ শ্রেনী কর্মচারী নিয়োগ করা হচ্ছে বলে দাবী করেছেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা।
সংশ্লিষট সূত্রে জানায় গেছে, তৎকালীন এরশাদ সরকার ১৯৮৯ সালের দিকে তিন পার্বত্য জেলায় স্থানীয় শাসন পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার পরিষদ গঠন করেন। ওই সময় আইন পাস করে তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলায় স্থানীয় সরকার পরিষদ গঠন করা হয়। এ পরিষদের চেয়ারম্যানসহ ৩৪ জন সদস্য করা হয়। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ এর নাম সংশোধন করে পার্বত্য জেলা পরিষদ করা(রাঙামাটি,খাগড়াছড়ি, বান্দরবান)। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে হাইকোর্টে রিট করা হলে পরিষদে চেয়ারম্যানসহ ৫ সদস্য বিশিষ্ট সদস্যর আর্ন্তবতীকালীন পার্বত্য পরিষদ গঠন করে তৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকার। সর্বশেষ এ অন্তর্বর্তীকালীন তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য সংখ্যা ৫ থেকে ১৫ সদস্যে বৃদ্ধির করে গত ২০১৪ সালের ১ জুলাই সংশোধিত আকারে জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়। পরে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান আর্ন্তবতীকালীন পার্বত্য জেলা পষিদ(সংশোধন) বিল-২০১৪ আকারে পাস হয়। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তির আলোকে গঠিত এ পরিষদের কাছে সরকারের পক্ষ থেকে এ পর্ষন্ত কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পর্যটনসহ ২৫টি বিভাগ হস্তান্তর করা হয়েছে। জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের এসব হস্তান্তরিত বিভাগের তৃতীয় ও চতূর্থ শ্রেনী কর্মচারী নিয়োগের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটির জেলার দশ উপজেলায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শূন্য পদে ৩শ২৫টি পদে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য গত ১৬ মার্চ সার্কুলার জারি করে। শুক্রবার এসব পদে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে, ২৯৯নং আসনের নির্বাচিত রাঙামাটির সাংসদ উষাতন তালুকদার ও আঞ্চলিক পরিষদ সদস্যরা অভিযোগ করেছেন জেলার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগসহ তৃতীয় ও চতূর্থ শ্রেনী কর্মচারী নিয়োগের বাছাই কমিটিতে আঞ্চলিক পরিষদের প্রতিনিধি রাখার প্রথা থাকলেও তা মানছে না রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। ফলে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা জবাবাদীহিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়াও কয়েকমাস আগে রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের এক ভিডিও কনফারেন্সের সময় প্রধানমন্ত্রী পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে আঞ্চলিক পরিষদের প্রতিনিধিত্ব রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তাছাড়াও ডা.মানিক লাল দেওয়ান ও জগৎ জ্যোতি চাকমার নেতৃত্বাধীন বিগত দুই জেলা পরিষদে আঞ্চলিক পরিষদের প্রতিনিধি রাখলেও পরবর্তী জেলা পরিষদে রাখা হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
তবে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের হস্তান্তরিত বিভাগের কর্মচারী নিয়োগ প্রবিধানমালা, ২০০০ এর ৭ এ ধারায় উল্লেখ রয়েছে নিয়োগের উদ্দেশ্য পরিষদ কর্তৃক একটি বাছাই কমিটি গঠিত হবে। এতে সভাপতি হবেন পরিষদের চেযারম্যান, সদস্য সচিব হবেন হস্তান্তরিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, সদস্য হিসেবে থাকবেন পরিষদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, সদস্য হবেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিষয় ভিত্তিক কমিটির আহ্বায়ক এবং সদস্য হবেন পরিষদের ৩ সদস্য( দুই জন উপজাতীয় ও ১জন অউপজাতীয় যারা চেয়ারম্যান দ্বারা নিযুক্ত হবেন)।
বিধিমালার ৭এর ধারা ৩-এর উপধারায় আরও উল্লেখ রয়েছে বাছাই কমিটিগুলোতে চেয়ারম্যান বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োজন বোধে এক বা একাধিক ব্যক্তিকে বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন, তবে এরূপ সদস্যের সংখ্যা কোনক্রমেই তিন এর অধিক হবে না।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতা কেএসমং মারমা জানান,পার্বত্য চুক্তির আইন অনুযায়ী তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের তত্বাবধানকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে একমাত্র আঞ্চলিক পরিষদ। কিন্তু জেলা পরিষদের নিয়োগসহ অন্যান্য বিষয়ে আঞ্চলিক পরিষদকে সম্পুর্ণ উপেক্ষা করা হচ্ছে। তার মতে, আঞ্চলিক পরিষদের প্রতিনিধি রাখা হলে নিয়োগসহ অন্যান্য সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ইচ্ছা বা পকিল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারবে না জেলা পরিষদ। এ কারণে আঞ্চলিক পরিষদের প্রতিনিধি রাখা হয় না।
২৯৯নং আসনের রাঙামাটির নির্বাচিত সাংসদ উষাতন তালুকদার বলেন, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের নিয়োগের বাছাই কমিটিতে প্রবিধানমালায় আঞ্চলিক পরিষদের প্রতিনিধি রাখার বাধ্যতা না থাকলেও প্রথা অনুযায়ী তা চলে আসছে। এছাড়া নিয়োগ কমিটিতে জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনের প্রতিনিধিকেও রাখা হয় না।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়মের আশংকায় গুজব শুনা যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষে আঞ্চলিক পরিষদের প্রতিনিধি রাখা উচিত বলে দাবী করেন।
এ ব্যাপারে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা যেহেতু প্রবিধানমালায় নেই সেহেতু আইন মেনে চলতে হবে উল্লেখ করে বলেন, জেলা পরিষদের হস্তান্তরিত বিভাগের কর্মচারী নিয়োগের প্রবিধানমালা অনুযায়ী শিক্ষকসহ তৃতীয় ও চতূর্থ শ্রেনী কর্মচারী নিয়োগ অত্যন্ত স্বচ্ছতার সাথে করা হচ্ছে। বিগত জেলা পরিষদ ও এ আইন মেনেই কর্মচারী নিয়োগ করেছিল।
তিনি বলেন,নিয়োগের ক্ষেত্রে কোথাও দুর্নীতি হচ্ছে না। দুর্নীতির হয়ে থাকলে তার প্রমাণ করুন। তার ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, শিক্ষক নিয়োগের প্রশ্নপত্র সম্পুর্ণ গোপনীয়তার মধ্যে রাখা হয়। প্রশ্নপত্র ফাসের কোন প্রশ্নই উঠে না। কারণ লিখিত পরীক্ষার সময় নিয়োগের বাছাই কমিটিকে রুমের থাকতে হয়।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.