জাতিসংঘের পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন সহায়তাদান কর্মসূচি প্রকল্পের (ইউএনডিপি-সিএইচডিএফ) শিক্ষা কম্পোনেন্ট-এ বন্ধ হয়ে যাওয়া তিন পার্বত্য জেলায় ২১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করন করতে যাচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে এসব বিদ্যালয়ের জাতীয়করনের জন্য পর্যালোচনা ও সুপারিশ প্রদান সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রনালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, জাতিসংঘের পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন সহায়তাদান কর্মসূচি প্রকল্পের (ইউএনডিপি-সিএইচডিএফ) শিক্ষা কম্পোনেন্ট-এর আওতায় ২০০৩-২০১৪ সাল মেয়াদের জন্য তিন পার্বত্য জেলার প্রত্যান্ত এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়নের লক্ষে ২৩৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করে। এর মধ্যে ২৩টি বিদ্যালয় ইতোমধ্যে জাতীয়করণ করা হয়েছে। বাকী ২১০টি বিদ্যালয়ের মধ্যে রাঙামাটিতে ৮৩টি, বান্দরবানে ৭৮টি ও খাগড়াছড়িতে ৪৯টি বিদ্যালয় জাতিসংঘের পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন সহায়তাদান কর্মসূচি প্রকল্পের (ইউএনডিপি-সিএইচডিএফ) শিক্ষা কম্পোনেন্ট ও পার্বত্য জেলা পরিষদের সমন্বয়ে শিক্ষকদের বেতন ভাতাসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। কিন্তু ২০১৪ সালে এ প্রকল্পের শিক্ষা কম্পোনেন্ট-এর মেয়াদ শেষ হয়। তবে প্রকল্পের শিক্ষা কম্পোনেন্ট-এর মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি করার পর চলতি বছর জুন মাসে এসব বিদ্যালয়ের যাবতীয় কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এসব বিদ্যালয়ে পড়ুয়া প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থী জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
সূত্র মতে,এসব বিদ্যালয়গুলোকে জাতীয়করণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রনালয়ের তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীকে উপানুষ্ঠানিক পত্র দেন। এছাড়াও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়কে এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে চিঠি প্রেরণ করেন। এরই প্রেক্ষিতে প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রনালয় এসব বিদ্যালয় জাতীয়করনের জন্য পর্যালোচনা ও সুপারিশ প্রদানের জন্য প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. জ্ঞানেন্দ্র নাথ বিশ্বাসকে আহ্বায়ক করে একটি আন্তঃমন্ত্রনালয় কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি ১৩ জুলাই আন্তঃমন্ত্রনালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে গঠিত কমিটি আগষ্ট মাসে এসব বিদ্যালয় সরেজমিনে পরিদর্শন, এসব বিদ্যালয়ে জাতীয়করণ করা হলে কি পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন তার বিস্তারিত তথ্যর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে চিঠি প্রেরণ এবং তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করে সরেজমিনে বিদ্যালয় পরিদর্শন করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এছাড়া বিদ্যালয়ের নামে জমি রেজিষ্ট্রেশনের জটিলতা থাকায় বিদ্যালয়গুলোর যথাসময়ে নিবন্ধের আবেদন করতে না পারায় ২০১২ সালে বা পূর্ববর্তী সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহন শর্ত শিথিল করণ বিষয়ে বিশেষ বিচেনা করার সিদ্ধান্ত এবং কমিটিতে মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব সন্তোষ কুমার অধিকারী ও ইউএনডিপি`র প্রতিনিধি এএইচ এম মহিউদ্দীনকে কো-অপ্ট করা হয়।
সূত্র জানায় আন্তঃমন্ত্রনালয়ের বৈঠকে কমিটির আহ্বায়ক ও প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. জ্ঞানেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অন্যান্যর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব(বিদ্যালয়) সন্তোষ কুমার অধিকারী, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক(পলিসি ও অপারেশন) আনোয়ারুল হক, পার্বত্য মন্ত্রনালয়ের যুগ্ন সচিব সুদত্ত চাকমা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব(বিদ্যালয়-১) নুজহাত ইয়াসমিন, ইউএনডিপি-সিএইচডিএফ-এর এ্যাডভাইজার এএইচএম মহিউদ্দীন, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোমিনুর রশিদ আমিন, বান্দরবান জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ইফতেকারুল ইসলাম ও বান্দরবান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আজম।
অনুষ্ঠিত সভায় কমিটির সদস্য সচিব প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব(বিদ্যালয়-১) নুজহাত ইয়াসমিন জানান, এসব বিদ্যালয়গুলো দুর্গম এলাকায় অবস্থিত ও নিকটবর্তী দুরত্বে অন্য কোন বিদ্যালয় না থাকায় শিশুদের শিক্ষার জন্য এসব প্রাথমিক বিদ্যলয় নিতান্ত প্রয়োজন। পার্বত্য এলাকয় জমি রেজিষ্ট্রেশন জটিল বিধায় অনেক বিদ্যালয় রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করে যথাযথ সময়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে বিদ্যালয় রেজিষ্ট্রেশনের আবেদন করতে পারেনি। পরবর্তীতে ৫টি বিদ্যালয় দ্বিতীয় ধাপে এবং ১৮টি বিদ্যালয় তৃতীয় ধাপে জাতীয়করণের জন্য অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে। অবশিষ্ট ২১০টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪১টি বিদ্যালয় রিজার্ভ ফরেষ্ট এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ডিরিজার্ভ ঘোষনা করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে ১টি বিদ্যালয়ের অস্তিত্ব না থাকায় এবং অপর একটি বিদ্যালয়ের জমি সংক্রান্ত ভূল তথ্য থাকায় রেজিষ্ট্রেশন করা যায়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন,বুধবার জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এ ব্যাপারে সভার আয়োজন করা হয়। সভায় কমিটির পক্ষ থেকে বিদ্যালয় পরিদর্শন এবং জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের এলাকায় সরেজমিনে পরিদর্শন ও তথ্যের জন্য নিদের্শ দেয়া হয়েছে। এসব পরিদর্শন ও তথ্যে পাওয়ার পর আগামী ২৬ আগষ্টের মধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের প্রতিবেদন পাঠানো হবে। আশা যাচ্ছে এ বিদ্যালয়গুলো জাতীয়করণের অন্তর্ভূক্ত হবে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.