প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি, আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট চন্দ্রঘোনা কাপ্তাইকে পৌরসভা ঘোষণা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা পালনকারী রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলায় বসবাসরত প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই তাদের প্রাপ্য নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। অথচ এক সময়ের তিন পার্বত্য জেলার জেলা সদর ও পরবর্তীতে গঠিত মহকুমা শহর কাপ্তাই হতে পারতো প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা এবং এলাকাবাসী পেতে পারত সকল নাগরিক সুবিধা। কিন্তু বিভিন্ন সরকারের অবহেলায় কাপ্তাই নানা দিক থেকে অবহেলিত রয়ে গেছে।
চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনা অবস্থিত। চন্দ্রঘোনা থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পূর্বে কাপ্তাই। এর পাশেই রয়েছে কাপ্তাই হ্রদ। যার আয়তন প্রায় ৭০০ বর্গমাইল। কাপ্তাই হৃদের পাশে কর্ণফুলী নদীর দুধারে রয়েছে রামপাহাড় এবং সীতার পাহাড় নামের গহীন অরণ্য। ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য কাপ্তাই ও চন্দ্রঘোনাকে দেশের এক অনন্য স্থানে পরিণত করেছে।
পাহাড়, নদী, ঝর্ণা উপত্যকা, অরণ্যসহ অসাধারণ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে এই উপশহর পরিণত হয়েছে প্রাকৃতিক লীলাভূমিতে। পাহাড়ি জনপদে উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর জীবনধারা যে কাউকেই আকর্ষণ করবে।
কাপ্তাইয়ের আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটের মধ্যে রয়েছে লেকভিউ, বিএফআইডিসি, শহীদ মোয়াজ্জেম নৌঘাটি, ফ্রিংখিয়ং, বালুচর প্রশান্তি, চিৎমরম বিহার, পাহাড়িকা, বনশ্রী কমপ্লেক্স, জুম রেরাঁ, কেপিএম ভিউ ক্লাব পিকনিক স্পট সহ বহু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত আকর্ষণীয় স্থান। যা সৌন্দর্য পিপাসুদের মনকে আলোড়িত করে। সবদিক বিবেচনা করলে চন্দ্রঘোনা কাপ্তাই একটি আদর্শ পর্যটন শহর হিসেবে পরিগণিত হওয়ার দাবি রাখে।
কাপ্তাই-বড়ইছড়ি থেকে রাঙামাটি, রাইখালী, রাজস্থলী ও রাইখালী-বান্দরবান সড়কপথে বাস, ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন প্রতিদিন চলাচল করে। পার্বত্য জেলাগুলোর বিভিন্ন স্থানসহ চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া, রাউজান ও অন্যান্য এলাকা থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়ী এবং পেশাজীবি মানুষজনের সমাগম ঘটে কাপ্তাইয়ে। প্রতিদিন ভোর হলেই হাজার হাজার মানুষের পদভারে জনজীবন ও এই এলাকার সড়কগুলো ব্যস্ত হয়ে ওঠে। কাকডাকা ভোর থেকেই উপজেলার রাইখালী বাজার, কর্ণফুলী পেপার মিল এলাকা, উপজেলা সদর, কাপ্তাই নতুন বাজার, জেটিঘাট, কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকায় ব্যবসায়ী ও চাকুরিজীবি এবং চন্দ্রঘোনা খ্রীষ্টিয়ান মিশন হাসপাতালে শত শত রোগীর আনাগোনায় নাগরিক জীবনের গতিধারা বেড়ে যায়। এমন কর্মচঞ্চল এলাকা সত্বেও এ এলাকায় এখনও কোন পৌরসভা গড়ে উঠেনি। ফলে নাগরিকরা অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। এ বিষয়ে কথা হয় চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের অধিবাসী মোঃ খায়রুল হাসান জাহাঙ্গীর, উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ সদস্য থোয়াইচিং মারমা, উপজেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বেবী ও কাপ্তাই ইউনিয়নে বসবাসরত আহম্মদ নবীর সাথে। তারা জানান, রাঙামাটি জেলা সদরের পরেই কাপ্তাই উপজেলার অবস্থান। এছাড়া কাপ্তাই দেশের প্রথম শ্রেণীর একটি উপজেলা। অপরূপ সৌন্দর্য্যরে কারণে ইতিমধ্যেই কাপ্তাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রাণী হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। অথচ দেশের অনেক পশ্চাৎপদ এলাকাকে ইতিমধ্যে পৌরসভা ঘোষণা করা হলেও চন্দ্রঘোনা ও কাপ্তাইয়ের মতো প্রাকৃতিক এবং শিল্পসমৃদ্ধ এলাকাকে পৌরসভা ঘোষণা না করে বিমাতা সূলভ আচরণ করা হয়েছে। এ অঞ্চলকে অনতিবিলম্বে পৌরসভা ঘোষণার দাবি করেন তারা। এ নিয়ে চন্দ্রঘোনা ইউপি চেয়ারম্যান বিপ্লব মারমা ও কাপ্তাই ইউপি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আব্দুল লতিফের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারা জানান, এক সময় চন্দ্রঘোনা থেকে তিন পার্বত্য জেলাকে শাসন করা হত। এছাড়া কাপ্তাই ছিল তিন পার্বত্য জেলা সদর। এরপর কাপ্তাইকে মহকুমা করা হয়। সর্বশেষ কাপ্তাইকে থানায় রূপান্তর করা হয়। অথচ জাতীয় অর্থনীতিতে চন্দ্রঘোনা ও কাপ্তাইয়ের বিশেষ ভূমিকার কারণে ইতিমধ্যে এ অঞ্চলের গুরুত্ব অধিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাম্প্রতিককালে সারাদেশে নতুন নতুন পৌরসভা বাস্তবায়িত হলেও কাপ্তাই রয়েছে অবহেলিত। প্রতি বছর কাপ্তাই উপজেলা হতে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পাচ্ছে। এরপরও সবদিক থেকে কাপ্তাই, চন্দ্রঘোনা বঞ্চিত রয়েই গেছে। চন্দ্রঘোনা কাপ্তাইকে পৌরসভা ঘোষণা করা হলে এ অঞ্চলের হারানো গৌরব কিছুটা হলেও রক্ষা পাবে বলে তারা মন্তব্য করেন।
এদিকে জনসংখ্যা ও বসতি বাড়লেও এ অঞ্চলের হাজার হাজার নাগরিক নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ, মোবাইল নেটওয়ার্ক, মশক নিধন কর্মসূচী, গণশৌচাগার, যাত্রীছাউনি, স্থায়ী বাসষ্ট্যান্ড, বিশুদ্ধ পানির অভাব, পানি নিষ্কাশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা, রেশনিং সুবিধাসহ নানা সমস্যায় ডুবে আছে কাপ্তাই উপজেলা। এসব সমস্যার সমাধান করে কাপ্তাইকে পৌরসভা ঘোষণা করা এখন সময়ের যুক্তিসঙ্গত দাবিতে পরিণত হয়েছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.