নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় জুরাছড়ি উপজেলায় দুগর্ম দুমদুম্যা ইউনিয়নের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনের ইতি টানতে হয়। ২০১০ সালের আগে এ দৃশ্য ছিল ইউনিয়ন জুড়ে। এলাকাবাসীর সহযোগীতায় বগাখালী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় বদলে দিয়েছে দৃশ্য। এবছর প্রথম জেএসসি পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করে শত ভাগ পাশ করার গৌরব অর্জন করেছে বিদ্যালয়টি।
বগাখালী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে দুমদুম্যা বগাখালী এলাকাবাসীর উদ্যোগে বগাখালী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগীতায় ও এলাকাবাসীর চাঁদায় তিন কক্ষ বিশিষ্ট আধা-পাকা ও দু কক্ষ বিশিষ্ট কাচা ভবন নির্মাণ করা হয়। বিদ্যালয়টি পাঠদান অনুমতি ও এমপিওভুক্তি না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের কাছ মাসিক ফি এবং এলাকাবাসীর চাঁদার টাকায় দিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা মেটানো হয়। তবে বিদ্যালয়ের ১শ ৪২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৯০ জনের কাছ থেকে বেতন-ফি নেওয়া হয়। শ্রেণী ভেদে মাসিক বেতন ৫০ থেকে ৭০ টাকা নেওয়া হয়ে থাকে। বাকি শিক্ষার্থীরা বিনা বেতনে পড়ছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, বগাখালী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় চালু হওয়ার পর বনযোগীছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অধীনে জেএসসি পরীক্ষা চালু করা হয়েছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে বহুবার আবেদন করা হলেও কোন ফলশ্রুতি পাওয়া যাচ্ছে না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা ও বিদ্যালয়ের খরচ মেটাতে এলাকাবসীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষদের কাছ থেকে অনুদান নেওয়া হচ্ছে। বগাখালী এলাকায় ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে কোন মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই। বর্তমানে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে ১৪২ শিক্ষার্থী রয়েছে। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি চলছে। বিদ্যালয়ে চার জন শিক্ষক ও একজন পিয়ন রয়েছেন। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সহযোগীতায় ২ থেকে ৪ মাস পর পর তাঁদের বেতন-ভাতা মেটানো হচ্ছে। তবে প্রায় সময় শিক্ষকদের বেতন ভাতা বকেয়া পড়ে থাকে। এই অবস্থায় বিদ্যালয়টি কত দিন চালু রাখা যাবে তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকরা।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি শান্তি কুমার তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, বগাখালী ও আশপাশের এলাকার মানুষ জুমিয়া ও অতি দরিদ্র। এখানকার অভিভাবকদের দূরে নিয়ে গিয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করানো সম্ভব নয়। অথচ দুমদুম্যা ইউনিয়নের বগাখালীতে কেবল একটি উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে। তবে সরকারী-বেসরকারী মিলে ১৪টি মতো প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অভাবে প্রতি বছর শত শত শিক্ষার্থী ঝড়ে যাচ্ছে। ছয় বছর আগে এলাকাবাসীর উদ্যোগে বগাখালী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। দ্রুত এমপিওভুক্ত না হলে বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রধান শিক্ষক অমর বিকাশ চাকমা বলেন, এই বিদ্যালয়ে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী রয়েছে। এখন এই বিদ্যালয়টি ঠিকিয়ে রাখতে হলে সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন।
মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদুল্লাহ বলেন, বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান উন্নীত করতে সঠিক সিদ্ধান্ত না আসায় এ বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে সিদ্ধান্ত পাওয়া গেলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা শিক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ভাইস চেয়ারম্যান রিটন চাকমা বলেন, বিদ্যালয়টি দুমদুম্যাবাসীর একটি আশার আলো। বিদ্যালয়ের ধারা বাহিকতা ধরে রাখতে দুর্গমতার বিশেষ বিবেচনায় কর্তৃপক্ষের পাঠদান ও এমপিও ভুক্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরী।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.