পাহাড়ের অন্যতম উচ্চ শিক্ষার বিদ্যাপীঠ রাঙামাটি সরকারী কলেজে নানান সংকটে জর্জরিত। এর মধ্যে শিক্ষক, আবাসন,পরিবহন সংকট প্রকট রয়েছে।
জানা যায়, ১৯৬৫ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ রাঙামাটি সরকারী কলেজেটি স্থাপিত হয়। ১৯৮৯ সালে রাঙামাটি সরকারী কলেজটিকে দেশের ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ প্রকল্পের অর্ন্তভূক্ত করে এ কলেজটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ হিসেবে উন্নীত করা হয়। এ কলেজেন মোট জায়গা রয়েছে ২৪ একর। বর্তমানে এ কলেজে প্রায ১২ হাজার ছাত্র-ছাত্রী অধ্যায়ন করছে। বর্তমানে কলেজে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী পড়ালেখা ছাড়াও বাংলা,ইংরেজী, বিজ্ঞান, বানিজ্য বিভাগসহ ১৩টি বিষয়ে অনার্স মাষ্টার্স কোর্স চালু রয়েছে। এ কলেজে প্রায় ৫৯ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৪৮জন। এর মধ্যে বাংলা বিভাগের ৩জন, রাষ্ট্র বিজ্ঞানে ২ জন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ১ জন, দর্শনে ৩জন, হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে ১ জন ও প্রাণি বিজ্ঞান বিভাগের ১ জন শিক্ষককের পদ খালী রয়েছে। ফলে শিক্ষক সংকটের কারণে কলেজের পাঠদানের সমস্যাসহ পরীক্ষায় ভালো ফলাফল মিলছে না। কলেজের জন্য ৫ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মিত হলেও জেলা শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে এখনো হস্তান্তর করা হয়নি।
আরো জানা যায়, এ কলেজের ২টি বাস থাকলেও সেগুলো দীর্ঘ দিন ধরে নষ্ট হয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বর্তমানে বাস ভাড়া করে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। তাছাড়া দীর্ঘ দিনের দাবী পুরুষ ও মহিলা হোস্টেল চালু করা যায়নি। ফলে দুরদুরান্ত থেকে আসা গরীব শিক্ষার্থীদের আবাসনের সংকটে সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বর্তমানে কলেজের সীমানা প্রাচীর না থাকায় কলেজটি অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। সীমানা প্রাচীর না থাকায় বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে ঢুকে নানান অপরাধমূলক ঘটনা ঘটছে।
কলেজের শিক্ষার্থী সুমন চাকমা, শান্তনা চাকমা, জিন্নাতসহ অনেক শিক্ষাথী জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামের একমাত্র উচ্চ শিক্ষা প্রত্ষ্ঠিান রাঙামাটি সরকারী কলেজে সকল বিষয়ে শিক্ষক না থাকায় লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটছে। ফলে পরীক্ষার ফলাফল আশানুপ হচ্ছে না। এছাড়া শিক্ষকদের পরিবহন সংকট থাকায় বাইরে থেকে যে বাস ভাড়া করা হয়ে থাকে তাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। তাছাড়া মহিলা ও পুরুষ হোষ্টেল চালু না হওয়ায় প্রত্যান্ত এলাকা থেকে আসা শিক্ষার্থীদের বাসা ভাড়া করে থাকা আর্থিকসহ নানান সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে কলেজের শিক্ষক সংকটসহ কলেজের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ন সমস্যাগুলো উত্তোরণের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানিয়েছে।
রাঙামাটি সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ মঈন উদ্দীন কলেজের শিক্ষক সংকটসহ পরিবহন ও আবাসনের সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, ৮০ লাখ টাকার ব্যয়ে ইতোমধ্যে কলেজের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য ভূমি জরিপ করা হয়েছে। কলেজের ৫তলা বিশিষ্ট নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে তা অচিরেই শিক্ষা প্রকৌশল থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়া হবে। এছাড়া কলেজের যে ছাত্রাবাসটি রয়েছে তা দীর্ঘ দিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। ছাত্রীদের জন্য যে হোষ্টেল রয়েছে তাও এতদিন দিন চালু করা যায়নি। তবে অচিরেই দুটি হোষ্টেল চালু করা হবে। তাছাড়া ৫তলা বিশিষ্ট ছাত্রী হোষ্টেলের ভূমি জরিপ করে কাজের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হবে। এই হোষ্টেলটি হলে দুরদুরান্ত থেকে আসা ছাত্রীদের জন্য আবাসন সংকট দুর হবে। এছাড়া পরিবহন সংকট রয়েছে তার দুটি বাস প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লেখা হয়েছে। আশাকরি দুটি বাস পাওয়া গেলে দুরদুরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীদের পরিবহনের কষ্ট লাগব দুর হবে।
তিনি আরো বলেন, সারাদেশের মধ্যে বৃহত্তর চট্টগ্রামের রাঙামাটি সরকারী কলেজটি এ ক্যাটাগরির একটি কলেজ। এই কলেজের প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য একটি প্রকল্প তৈরী করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। আশাকরি এক দেড় বছরের মধ্যে এসব সংকট সমাধান ও বাস্তবায়ন হলে রাঙামাটি কলেজের চিত্র পাল্টে যাবে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.