বৃহস্পতিবার ঢাকার গণ ভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিশেষায়িত জাহাজ সিভাসু গবেষনা তরী উদ্বোধন করেছেন। এর মাধ্যমে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে মাছের উৎপাদনসহ কাপ্তাই হ্রদের জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চট্টগ্রাম ভেটেনারী ও এনিম্যাল সাইয়েন্সেস বিদ্যালয়ের( সিভাসু) সক্ষম হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও এর হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ^বিদ্যালয়ে উদ্যোগে ৩কোটি ৮৭ লাখ টাকার ব্যয়ে সিভাসু’র এই গবেষণা তরীটি নির্মাণ করেছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে নারায়ণগঞ্জের একটি জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান রাঙামাটির পুরনো হেলিপ্যাড এলাকায় এ জাহাজ তৈরির কাজ শুরু করে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে পরীক্ষামূলকভাবে এ জাহাজ হ্রদে নামানো হয়। এ তরীতে প্রায় ১৫টি বিষয় নিয়ে গবেষণার কাজ করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে হ্রদের বিভিন্ন প্রজাতির মাছের সংখ্যা বের করা, মাছের অভয়াশ্রম সৃষ্টির জন্য স্থান নির্বাচন, হ্রদে চাষযোগ্য সম্ভাব্য প্রজাতি বের করা, সময়ের সঙ্গে হ্রদের বিভিন্ন ভৌত রাসায়নিক পরিবর্তন বিশ্লেষণ করা, বিলুপ্তপ্রায় মৎস্য প্রজাতি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা, বিভিন্ন মাছের প্রজনন ক্ষেত্রের বাস্তব অবস্থা নিরূপণ, প্রজননক্ষেত্র নষ্ট হওয়ার কারণ বিশ্লেষন ও পদক্ষেপ গ্রহণ, স্থানীয় জনশক্তিকে খাঁচায় ও পেন কালচারের মাধ্যমে মাছ চাষে উদ্যোগী করা, ঘোনায় মাছ চাষের সুবিধা-অসুবিধাগুলো যাচাই করা, হ্রদের মাছের প্রাকৃতিক খাদ্যের বিস্মৃতির অবস্থা নিরূপণ, প্রাকৃতিক খাদ্যের উৎপাদন বাড়াতে করণীয় নির্ধারণ, হ্রদ ভরাট হওয়ার কারণ উদ্ঘাটন, বিশ্লেষণ ও নিরূপণে উদ্যোগ এবং হ্রদের দূষণ দূরীকরণে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
এছাড়া এ জাহাজের মাধ্যমে হ্রদের মাছ কমে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান ও সংরক্ষণে নানা পরিকল্পনা, উদ্যোগ এবং সিভাসুর এমএস ও পিএইচডি লেভেলের শিক্ষার্থীরা সারা বছর গবেষণা কার্যক্রম চালাতে পারবেন।
উল্লেখ্য,বিশেষায়িত গবেষণা তরীরটির মাধ্যমে বহুমুখী গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে মালয়েশিয়া সরকার তাদের কৃত্রিম হ্রদ ‘লেক কেনিয়র’-এর হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।
কাপ্তাই হ্রদে মাছের উৎপাদন লক্ষে গবেষনা লক্ষে বৃস্পতিবার ঢাকার গণ ভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী সিভাসু গবেষনা তরীটি উদ্ধোধন করেন। এসময় সেখানে অন্যান্যর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুল উশৈ সিং এমপি, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মেজর (অব:) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং গণভবনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। রাঙামাটি অংশে উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটির ২৯৯নং আসনের সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার, রাঙামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা, জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদ, রাঙামাটি ৩০৫ পদাধিক ডিভিশনের ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ মাইনুর রহমান, পুলিশ সুপার আলমগী, চট্টগ্রাম ভেটেনারী ও এনিম্যাল সাইয়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি গৌতম বুদ্ধ দাশ, ভিসি, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. প্রদানেন্দু বিকাশ চাকমা, চট্টগ্রাম ভেটেনারী ও এনিম্যাল সাইয়েন্সেস বিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. এম নূরুল আবছার খান, সাবেক সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার ও জেএফ আনোয়ার ছিনুসহ প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা।
প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পর পর দীপংকর তালুকদারসহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা সিভাসু গবেষনা তরীটি পরিদর্শনে যান।
চট্টগ্রাম ভেটেনারী ও এনিম্যাল সাইয়েন্সেস বিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. এম নূরুল আবছার খান বলেন, কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য সম্পদের জন্য একটা বড় আধার। এতদিন ধরে এ ধরনের গবেষনার জন্য সুযোগ-সুবিধা ছিল না। যার কারণে ৬৮ হাজার ৮শ হেক্টরের একটা বিশাল জল সম্পদের মধ্যে বছরের মধ্যে মাত্র দশ হাজার ১ মেঃটন মাছ উৎপাদন হচ্ছে, যেখানে উৎপাদন করার কথা ছিল এক থেকে দুই লাখ মেঃটন। প্রধানমন্ত্রী এ গবেষননার জন্য সিভাসু তরী নির্মাণে অর্থ দিয়েছেন এই গবেষনাগারটি মাধ্যমে হ্রদটির হানারোর যৌবন ফিরে পাওয়ার জন্য চেষ্টা করবো। এর মাধ্যমে হ্রদের সংশ্লিষ্ট যে জনগোষ্ঠী রয়েছে তাদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নসহ মৎস্য সম্পদের টেকসউ উন্নয়নসহ মৎস্য সম্পদের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটা বড় ভূমিকা রাখবে।
চট্টগ্রাম ভেটেনারী ও এনিম্যাল সাইয়েন্সেস বিদ্যালয়ের ভিসি গৌতম বুদ্ধ দাশ বলেন, এই গবেষনারের আসল উদ্দেশ্য হল মাষ্টার্স, পিএইচডি ও ইর্ন্টানিং শিক্ষার্থী রয়েছেন তারা গবেষনা করবেন। গবেষনার মধ্যে অভয়ারণ্য রয়েছে। যা করলে মাছের প্রজনন রক্ষা পারলে মাছের অনেক উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। আর যেসব বিলুপ্ত প্রজাতি মহাশোল এখন পাওয়া যাচ্ছে না তার গবেষনা করা হবে।
২০০ নং রাঙামাটি আসনের সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার বলেন,শুধুমাত্র গবেষনা নিয়ে হবে না তার সাথে আনুসাঙ্গিক অনেক কাজ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কাপ্তাই হ্রদকে দূষন মুক্ত করতে হবে, যত্রতত্র বর্জ্য পদার্থ ফেলা হয় তা না ফেলানোর জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। এখানে কাপ্তাই হ্রদকে সংরক্ষনের জন্য আইন করা যেতে পারে। আইনটা কঠোরভাবে পালন করা যেতে পারে। যাতে লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করা যেতে পারে। তিনি হ্রদের ড্রেজিং করা প্রয়োজন। হ্রদ থেকে কচুরিপানা অপসারণ করারও পরামর্শ দেন।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.