পাল্টে গেছে কাপ্তাই উপজেলা অফিসার্স ক্লাব সংলগ্ন খেয়াঘাট।।বৈঠকখানা, গোলঘর আর নানা রঙে সাজানো হয়েছে এই খেয়াঘাটের পাশের এলাকা। বৈঠকখানা ও গোল ঘরে কিছক্ষণ বসে আড্ডা দিলেই মনটা জুড়িয়ে যাবে যে কারোই। এর পাশে রয়েছে কর্ণফুলী নদী। নদীর ওপারে রয়েছে দিগন্তজোড়া পাহাড়ের পর পাহাড়। মনোরম এধরনের দৃশ্য দেখে সবারই ভাল লাগবে। এক সময় এখানে ছিল ময়লা-আর্বজনার ভাগাড়। মূল-মূত্রের দূর্গন্ধে এঘাট দিয়ে চলাচল করাই ছিল দুষ্কর। কাপ্তাই উপজেলা অফিসার্স ক্লাবের পার্শ্বস্থ খেয়া ঘাটের এমন চিত্র হরহামেশাই চোখে পড়তো। দীর্ঘদিন ধরে এমন অবস্থা বিরাজ করলেও বিষয়টি নিয়ে কেউই ভ্রুক্ষেপ করেনি।
সম্প্রতি চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য মইনুল ইসলাম মনা উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে সেখানে বৈঠকখানা, গোলঘর, গাছের ছায়ায় ইট,সিমেন্ট বালি দিয়ে বসার ব্যবস্থা করেছে। হঠাৎ দেখলে কেউ বুঝতেই পারবেনা, কিছুদিন আগেও এ খেয়াঘাট দিয়ে চলাচলকারীরা নাকে রুমাল অথবা নাক ডেকে চলাচল করত। ইউপি সদস্য মনা জানান, একাজে আমার প্রায় তিন লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। তবে আমার একটা স্বার্থ আছে,তা হলো, আমি নিজ খরচে পরিত্যক্ত ময়লার ভাগাড়ে যা করছি, তার বিনিময়ে এখানে একটি `টি স্টল` নির্মাণ করা হয়েছে। সে `টি স্টলটি হবে আমার। এব্যাপারে মঙ্গলবার যোগাযোগ করা হলে কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফ আহমেদ রাসেল বলেন, একসময় এই স্থানটি ময়লার ভাগাড় ছিল।এই খেয়াঘাটের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে দূর্গন্ধে মানুষের নাভিশ্বাস উঠতো। উপজেলা প্রশাসন উদ্যোগ নেওয়ায় এখন এস্থান একটি পর্যটন এলাকায় পরিণত হয়ে উঠেছে। মাসিক ভাড়ায় এটি পরিচালনা করবে একব্যক্তি। তিনি আরো বলেন,ইতিমধ্যে এখানে গোলঘর,টি-স্টলসহ কিছু স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। আরো কিছু স্থাপনা তৈরী করা হবে।এখানে "ওয়াই-ফাই" ব্যবস্থাসহ বেশ কিছু ফ্রী` সুযোগ- সুবিধা থাকবে পর্যটকদের জন্য। যাতে তারা এসে একনজরে "কাপ্তাই উপজেলা এবং কর্ণফুলী নদীর সৌন্দর্য" উপভোগ করতে পারে।এছাড়া পর্যটকরা যাতে বিনে পয়সায় কিছু সময় বসে বিশ্রাম নিতে পারে সে ব্যবস্থা করা হবে।
প্রসঙ্গত, কাপ্তাই উপজেলার সাবেক নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুহুল আমীন প্রায় কয়েকমাস আগে প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিলেন এ খেয়াঘাটের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার। তিনি ময়লাা- আর্বজনা যুক্ত স্থানটি পরিষ্কার করার নির্দেশ দেন। তারপর সেখানে সিমেন্টের কিছু কাজ করান। এবং কিছু স্থাপনা করার চিন্তা থাকলেও সময়ের অভাবে তা সম্ভব হয়নি। কারণ তিনি অন্যত্র বদলী হয়ে যান। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে সেখানে তৈরী করা হয়েছে নানা স্থাপনা। ফলে সেখানে বিরাজ করছে অত্যন্ত মনোরম পরিবেশ।
উল্লেখ্য, কাপ্তাই উপজেলা সদর থেকে চিৎমরম ইউনিয়নের উজানছড়ি এবং ওয়াগ্গা চা বাগানে যেতে মানুষজনকে প্রতিদিন ঘাটটি দিয়ে নদী পার হতে হয়। এছাড়া প্রতি বুধবার সাপ্তাহিক বাজারের দিন হাজার খানেক মানুষ যাতায়াত করে থাকেন ঘাটটি দিয়ে। এঘাটে এত দিন ময়লা-আবর্জনা ফেলা হতো। মল-মূত্রও ত্যাগ করতো। বসতো মাদকসেবীদের আড্ডা।ছোট্ট উদ্যোগে জায়গাটি এখন রুপ নিচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের অপেক্ষার স্থানে। স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন স্কুলগামী ছাত্রছাত্রীরা খুব বিরক্তি নিয়ে নাক চাপা দিয়ে জায়গাটি দ্রুত পার হতো। নৌকা আসতে দেরি হলে অপেক্ষমাণ লোকজন কোথাও বসার সুযোগও ছিল না। সন্ধ্যায় এই জায়গাটি মাদক সেবনের নিরাপদ স্থান হিসেবে পরিচিত ছিল। কেউ কেউ মূত্রত্যাগও করতো। কিন্তু এখন এস্থানটি অবসর কাটানোর একটি নিরাপদ ও অপূর্ব সন্দর স্থানে পরিনত হয়েছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.