• Hillbd newsletter page
  • Hillbd rss page
  • Hillbd twitter page
  • Hillbd facebook page
সর্বশেষ
রাঙামাটিতে মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট ও ডিপ্লোমা ফার্মামিষ্টদের কর্মবিরতি পালন                    ৯৯নং রাঙামাটি আসনের বিএনপির প্রার্থী দীপেন দেওয়ানের মতবিনিময় সভা                    নবাগত জেলা প্রশাসক নাজমা আশরাফীর সাথে সাংবাদিকদের মতবিনিময়                    শিক্ষক নিয়োগে কোটা বৈষম্যের প্রতিবাদে রাঙামাটিতে বৃহস্পতিবার থেকে ৩৬ ঘন্টার হরতাল                    তরুণ কবি ম্যাকলিন চাকমার একগুচ্ছ কবিতা                    সাজেকে মোবাইল নেটওয়ার্ক ফের চালুতে স্বস্তি                    চ্যাম্পিয়ন বিলাইছড়ি রাইংখ্যং একাদশ                    ফেন্সি স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টস’র রাঙামাটিতে গ্র্যান্ড ওপেনিং                    বিলাইছড়িতে ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর উদযাপিত                    খাগড়াছড়ির অনন্য এক প্রাথমিক শিক্ষক রুপা মল্লিক,যাঁর পথচলার বাঁকে বাঁকে শ্রম আর সাফল্য                    পরবর্তী বাংলাদেশের এনসিপি নেতৃত্বে দেবে-হাসনাত আবদুল্লাহ                    রাঙামাটিতে তিন দিনের সাবাংগী মেলার উদ্বোধন                    চট্টগ্রাম আঞ্চলিক তথ্য অফিসের গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা                    বিলাইছড়িতে যুবদলের ৪৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন                    কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে ডুবে এক যুবকের মৃত্যু                    কাউখালী বেতবুিনিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত                    রাঙামাটি রাজ বন বিহারে দুদিনের কঠিন চীবর দানোৎসব সম্পন্ন                    রাঙামাটির রাজবন বিহারে দুই দিনব্যাপী কঠিন চীবর দান উৎসব শুরু                    বৃহস্পতিবার থেকে দুদিন ব্যাপী শুরু হচ্ছে রাজ বনবিহারে ৪৯তম কঠিন চীবর দান                    রাঙামাটির সীমান্তবর্তী দুর্গম হরিণায় বিজিবির মানবিক সহায়তা                    বিলাইছড়িতে প্রকল্প পরিদর্শনে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক                    
 
ads

রাঙামাটির বিখ্যাত বৌদ্ধ তীর্থ যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্র

বিহারী চাকমা, : হিলবিডি টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 10 Mar 2017   Friday

সৌন্দর্য্যের লীলানিকেতন রাঙামাটির যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্র। এটি একটি বৌদ্ধ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৩’শ ফুট উচু পাহাড়ে যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্র নামে ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় বিখ্যাত এই বিহারটি।

 

রাঙামাটি শহরের উত্তর-পুর্ব দিকে সদর উপজেলার বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নে এর অবস্থান। এই পাহাড়টির পুর্ব নাম ছিল বন্দুক কোণা মোন। দুর থেকে অনেকটা বন্দুকের মত দেখাত বলে স্থানীয়রা এর নামকরণ করেছিলেন। কিন্তু ১৯৮২ সালে যখন এখানে বৌদ্ধ বিহার প্রতিষ্ঠা করা হয় তখন নাম দেয়া হয় যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্র। পার্বত্য চট্টগ্রামের কিংবদন্তি বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের পরামর্শে এখানে বৌদ্ধ বিহার প্রতিষ্ঠা করেন এলাকবাসী।

 

স্থানীয়রা জানান, প্রায় শত বছর আগে ইমিলিক্যা চাকমা যম নামে এক তান্ত্রিক সাধক বসবাস করেছিলেন। তিনি চাকমা বৈদ্যদের তন্ত্র-মন্ত্র ও যোগ সাধনার মাধ্যমে হিংস্র পশুর আক্রমণ ও বিষধর সাপের দংশন থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার কৌশল জানতেন। এমনকি ভবিষ্যৎও বাণী করতেন। তিনি বেঁচে থাকার সময় বলেছিলেন, এই পাহাড়ে একদিন আনন্দ মেলা বসবে। বৌদ্ধ বিহার হবে। হাজার হাজার মানুষের সমাগম হবে ইত্যাদি। কিন্তু সেসময় তার কথাগুলোকে কেউ ভালোভাবে বিশ্বাস করত না।  

 

উল্লেখ করার মত বিষয় পার্বত্য চট্টগ্রামের বিখ্যাত নদী কর্ণফুলি ও চেঙ্গী নদীর মাঝখানে সুদীর্ঘ পাহাড়ি উপত্যকায় এই যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্রটি তীর্থস্থান হিসেবে ইতোমধ্যে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। এখানেই বনভান্তে সর্বপ্রথম তার রাজবন বিহারের শাখা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বনভান্তের শিষ্য-প্রশিষ্যরা সেখানে নিয়মিত ধ্যান-সাধনা চর্চা ও বৌদ্ধ শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। প্রতিটি বৌদ্ধ পর্ব দিনে ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এরমধ্যে বৈশাখী পুর্ণিমা, আষাঢ়ী পুর্ণিমা, মধু পুর্ণিমা, প্রবারণা পুর্ণিমা, কঠিন চীবর দান, মাঘী পুর্ণিমা, উল্লে­খযোগ্য।

 

এই যমচুগে উঠলেই চেঙ্গী ও কাচালং নদীর স্বচ্ছ ও নীল জলরাশি আগন্তুকদের মন কেড়ে  নেয়। এছাড়া নদীতে চলাচলকারী ছোট বড় নৌযান গুলো ঢেউ তুলে নদীর বুক চিড়ে চলে যাওয়ার দৃশ্য ভাবুকের হৃদয়েও আবেগের সৃষ্টি করে। আশপাশের উচু-নীচু ছোট-বড় পাহাড় গুলোতে সবুজের সমারোহ  যেন অনবরত পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকে। যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্রে গিয়ে একই সঙ্গে হ্রদ ও পাহাড়ের সৌন্দর্য দুটোই দেখা যায়। রাঙামাটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাহাড়ের চুড়ায় অবস্থিত হওয়ার কারণে এটি সকল মানুষের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও  দশর্নীয় স্থান।

 

এখানে রয়েছে শত বছর আগে যম চাকমা রোপিত পত্র-পল­বে সুশোভিত একটি বটগাছ বা বোধিবৃক্ষ। যার নীচে শোভা পাচ্ছে মহামতি গৌতম বুদ্ধের একটি নান্দনিক প্রতিমুর্তি। রয়েছে ভিক্ষুদের বসবাসের জন্য দ্বিতল বিশিষ্ট একটি পাকা ভবন, নির্মাণাধীন রয়েছে তিনতলা বিশিষ্ট বুদ্ধ মন্দির। শমথ ও বিদর্শন ভাবনা অনুশীলনের জন্য রয়েছে ছোট ছোট ভাবনা কুটির ও একটি মাটির গুদাম। ভিক্ষুদের ধর্মদেশনার একটি দেশনালয় রয়েছে। কঠিন চীবর প্রস্তুত করার জন্য একটি বেইনঘর ও   ভিক্ষুদের আহারের জন্য ভোজন শালা, রয়েছে রন্ধনশালা ও অতিথিশালা। 

 

নানা প্রজাতির ফলজ, বনজ ও ওষুধি গাছ ছাড়াও বিহারের বিভিন্ন প্রান্তে ছোট বড় অনেক বটগাছ ও নাগেশ্বর গাছ। এসব গাছের নীচে ছায়ায় বসে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা একাগ্রমনে সুত্র আবৃত্তি ও ধর্মগ্রন্থ পাঠ করেন এবং সুমধুর স্বরে ধর্মীয় গাথা ও বন্দনাদি আবৃত্তি করেন। রয়েছে রঙ-বেরঙের নানা প্রজাতির ফুলগাছ ও ফুলের বাগান। যেখানে আগন্তুকরা এক নজর দৃষ্টি না দিয়ে সেখান থেকে চলে যায় না। বিহারের চারিদিকে ঘোরাফেরা করার সুবিধার্থে সুন্দরভাবে নির্মাণ করা হয়েছে প্রশস্ত রাস্তা।

 

বিহারের পূর্বপাশে রয়েছে যমকুয়া বা যমপুঅ। যম চাকমা এ কুয়া থেকে পানি খেয়েছেন বলে এ নাম। এ কুয়া থেকে এখনো খাবার পানি সংগ্রহ করা হয়। কুয়ার পাশে ছড়ায় ছোট একটা ওয়াল দিয়ে অন্য একটি কুয়াও নির্মাণ করা হয়েছে। ভিক্ষু-শ্রমণ ও দায়ক দায়িকারা সেখানে স্নান কার্যাদি সম্পাদন করেন এবং এই কুয়া থেকে মেশিন দিয়ে বিহারে পানি সরবরাহ করা হয়।

 

স্থানীয়রা জানান যমচুগ পাহাড়টির পুর্ব নাম ছিল বন্দুক কোণা মোন। মোন মানে হচ্ছে উচু পাহাড় চুড়া। দূর থেকে পাহাড়টিকে অনেকটা বন্দুকের মত দেখাতো বলে এলাকার লোকজন এ নামকরণ করেছিলেন ।কথিত আছে প্রায় শত বছর আগে বন্দুক কোণা মোনে ইমিলিক্যা চাকমা যম নামে এক চাকমা তান্ত্রিক সাধক এই পাহাড়ে যোগ সাধনা করেছিলেন। তিনি দীর্ঘকাল যাবৎ সেখানে বসবাস করেন।

 

১৯৮৩ সালে এখানে বৌদ্ধ বিহার প্রতিষ্ঠা কালে ইমিলিক্যা চাকমার স্মৃতিকে ধরে রাখার মানসে তারই নামানুসারে বিহারের নামকরণ করা হয় যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্র। পার্বত্য চট্টগ্রামের কিংবদন্তী বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের দিক-নির্দেশনা ও আর্শীবাদ নিয়ে স্থানীয় লোকজন বিহার প্রতিষ্ঠা করেন। বিহারের পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ৫০টির বেশি গ্রামের মানুষ বিহার প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়ন কাজে এগিয়ে আসে। প্রতিষ্ঠার কয়েক বছরের মধ্যে এলাকাবাসীর প্রচেষ্টায় যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্রটি একটি পবিত্র বৌদ্ধ তীর্থ স্থানে পরিণত করা সম্ভব হয়। বনভান্তের শিষ্যরা এখানে নিয়মিত শমথ ও বিদর্শন ভাবনা অনুশীলন  করেন। কেউ কেউ ধুতাঙ্গব্রতও পালন করেন।

 

ভিক্ষুদের বিদর্শন ভাবনা চর্চা ও বিহারটি তীর্থস্থানে পরিণত হওয়ায় দেশী-বিদেশী পর্যটক ও বৌদ্ধ ভিক্ষু এ বিহার পরিদর্শনে এসেছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন ও ভিক্ষুরা। সাধনানন্দ বনভান্তের প্রধান শিষ্য নন্দপাল মহাস্থবির ১৭ বৎসর এই পাহাড়ে ধ্যান সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছেন বলে তাঁর সতীর্থ, শিষ্য-প্রশিষ্য ও ভক্ত দায়ক-দায়িকাদের বিশ্বাস। বর্তমানে তিনি ভারতের বুদ্ধগয়া ও অরুনাচল, মুম্বাই, কোলকাতা, রাজধানী নয়াদিল্লীসহ বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধধর্ম প্রচার করে চলেছেন। দেশ-বিদেশের নানা প্রান্তের ভগবান বুদ্ধের অহিংসা সাম্য মৈত্রী ও মুক্তির বাণী প্রচারের পাশাপাশি তার গুরু বনভান্তের হিতোপদেশ প্রচারে ব্রতী হয়েছেন। 

 

যমচুগে যেভাবে যাবেন: রাঙামাটি শহর থেকে নদীপথে যমচুগে যাওয়া যায়। রাজবন বিহার ঘাট, শহরের রাজবাড়ী ঘাট, পাবলিক হেলথ ঘাট, বনরূপা সমতা ঘাট, রিজার্ভ বাজার ঘাট থেকে দেশীয় ট্রলার যোগে যাওয়া যাবে। এছাড়া স্পীড বোটেও যাওয়া যায়। রাঙামাটি শহর থেকে স্পীড বোটে যমচুগের ঘাটে পৌঁছতে সময় লাগে মাত্র ৪০ মিনিট। সাধারণ দেশীয় ট্রলারে যেতে সময় লাগে ২ ঘন্টা। ঘাট থেকে হাটা পথে যমচুগে উঠতে সময় লাগে ১ঘন্টা। ওঠার সময় রাস্তার পাশে পাহাড়িদের বাড়ীতে বিশ্রাম নেয়া যায়। রাত্রিযাপনও করা যায়। সেখানকার মানুষ গুলো খুবই অতিথি বৎসল। তাছাড়া যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্রে  যাওয়া হচ্ছে জানলে কদরটা আরেকটু বেড়ে যায়।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

 

ads
ads
এই বিভাগের সর্বশেষ
আর্কাইভ