বান্দরবানের লামা উপজেলার ২নং লামা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের হাসপাতাল পাড়ায় পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়ে দুই শিশুসহ ৫ জন নিহত ও ৪ জন আহত হয়েছে। শনিবার ভোর রাত ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, টানা বর্ষনে লাম উপজেলায় ২নং ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের হাসপাতাল পাড়ায় পাহাড় ধসে পড়ে। এতে ঘুমানো অবস্থায় আকস্মিক পাহাড় ধসে গিয়ে মাটি চাপা পড়ে ৫ জন নিহত ও ৪ জন আহত হন। ঘটনার খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, দমকল বাহিনীসহ স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত ও আহতদের উদ্ধার করে। নিহতরা হলেন রোজিনা আক্তার (৩০), ছেলে সাদ্দাম হোসেন (৫), রোজিনার ভাই মো: সাগর (১৪), বাবা মো: বশীর (৫৫) ও আমেনা বেগম (৩২)। এ ঘটনায় মাটি চাপা পড়ে নিখোঁজ রয়েছে রোজিনার মেয়ে ফাতেমা বেগম (৮)।। লাশ উদ্ধারের জন্য সেনা বাহিনী, দমকল বাহিনী, উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় লোকজন তৎপরতা চালাচ্ছে। আহতরা হলেন সেতারা বেগম(৪৫), দলুমিয়া(৭০), আরাফাত(১৮) ও জয়তুন বিবি(৬০)। তাদের লামা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহত স্বজনদের আহাজারীদের এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে।
এদিকে,ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনপ্রতি ২৫ হাজার, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ১০ হাজার, জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়েছে।
ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা, জেলা পরিষদ সদস্য লক্ষীপদ দাশ, লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার খালেদ মাহমুদ, লামা পৌরসভার মেয়র আমির হোসেন, লামা উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আলহাজ মোহাম্মদ ইসমাইল, জেলা পরিষদ সদস্য মোঃ জহিরুল ইসলাম, লামা থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ সিরাজুল ইসলাম, উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা খন্দকার মোঃ ফিজানুর রহমানসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
উপজেল নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদ মাহমুদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, নিহত পরিবারকে সকল ধরনের সহায়তা দেয়া হয়েছে।
এদিকে, টানা বৃষ্টিপাতের কারনে লামার সাথে দেশের অন্যান্য স্থানের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এছাড়া টানা চার দিন ধরে লামা উপজেলায় বিদ্যূৎ বিচ্ছিন্ন্ রয়েছে। ফলে দুর্ভোগ আরও বেশী বাড়িয়ে দিয়েছে।
অপরদিকে, বর্তমানেও বরিশাল পাড়াসহ পাহাড় ধস ঝুঁকিতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে শতশত পরিবার মারাত্নক ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। এসব পরিবারগুলোকে উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভার ও ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে বার বার মাইকিং করে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য বলা হলেও এখনো কেউ সরে যায়নি। এছাড়া প্রবল বর্ষণের কারনে উজান থেকে নেমে আসা সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে লামা পৌর এলাকার দুই সহস্রাধিক ঘরবাড়ি ৩-৪ফুট পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। ভেঙ্গে একাকার হয়ে গেছে গ্রামীণ অবকাঠামো। কর্মক্ষম মানুষগুলো যাতায়াতের প্রয়োজনে নৌকা ও কলা গাছের বেলাকে বাহন হিসেবে ব্যবহার করছেন। পাহাড়ি ঝিরির পানি বৃদ্ধি পেয়ে পানি বন্দি হয়ে পড়েছে উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার মানুষ। এসব মানুষের মধ্যে দেখা দিয়ে নিরাপদ পানি ও খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, পাহাড় ধসে ২০০৯ সালে লামা উপজেলার আজিজনগর ও গজালিয়ায় এক পরিবারের ৬জনসহ ১১ জন, ১৯৯৬ সালে লামা পৌর এলাকার রাজবাড়িতে একই পরিবারের ৭জন এবং ২০১২ সালের ২৭ জুন রাতে ফাইতং ইউনিয়নে ২৫ জন, রুপসীপাড়া ইউনিয়নে ২জন ও সদর ইউনিয়নে ২ জন মারা যায়।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.