রাঙামাটি শহর থেকে ৫৭ কিলোমিটার দূরে সব চেয়ে দুর্গম উপজেলা জুরাছড়ি। এখানে আসা-যাওয়ার একমাত্র উপায় জলপথে যাত্রা। উপজেলা ৪০ হাজার মানুষের স্বাস্থ্য সেবার একমাত্র অবলম্বন হলো ১০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। অথচ এখন সেটিই অসুস্থ্য, শত সমস্যায় জর্জরিত।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৮ সালের দিকে গড়ে উঠে দশ শষ্যা আধপাকা টিন সেডে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি।
১১ জন চিকিৎসক পদের বিপরীতে ৫ জন চিকিৎসক থাকলেও তাদের নেই আবাসিক ব্যবস্থা। যার ফলে মেডিকেল অফিসারগণ পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে । আবার অনেকে জরার্জীর্ণ ভবন দেখে প্রশিক্ষণের নামে প্রেষনে চলে যায়। এছাড়া সিনিয়র নার্সসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আবাসিক ভবন গুলো ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পরেছে।
জানা যায়, ২০০১ সালে পার্শ্ববর্তী উপজেলা বরকলে প্রচন্ড ভূমিকম্পের কারণে কমপ্লেক্স ভবনটির বিভিন্ন অংশে বড় বড় আকারে ফাটন দেখা দেয়। বর্তমানে ভবনসহ চিকিৎসক, কর্মচারী ও সেবিকাদের অফিস ও আবাসিক কক্ষগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এর পর থেকে বছর বছর রংজং সংস্কারে বাড়ছে আরো ঝুঁকি। আবাসিক ভবনগুলোতে এমন কোন দেয়াল নেই যেখানে ফাটল দেখা দেয়নি। টিনের ছিদ্র দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ায় কয়েকটি কক্ষ পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। বাইরের দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে শেওলা জমেছে। টিন গুলোতে জং ধরেছে। এছাড়া কমপ্লেক্স ও আবাসিক ভবন গুলো অরক্ষিত হওয়াই অসংখ্য অবৈধ বসতি গড়ে উঠেছে। শিশু ওয়ার্ডের দরজা ভাঙ্গা, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জুরে বিশুদ্ধ পানির সংকট। ইমার্জেন্সী ডিউটি রুম ও ওয়ার্ড শাখার মেশিন নেই। অপারেশন থিয়েটারে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই। যেগুলো আসে সেগুলো বহুদিনের পুরানো। একটি জলসা এ্যাম্বুলেন্স ছিল-দীর্ঘ বছর ধরে এটি কোন হুদিশ নেই।
২০১২ সালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নতি করন হলেও এখনো ১০ শয্যায় রয়েছে। অথচ তৎসময় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কল্যান মন্ত্রনালয়ের নির্মাণ অধিশাখার উপ-সচিব ডাঃ মোঃ সাজেদুল হাসানের স্বাক্ষরিত আদেশ মূলে ফিজিক্যাল ফ্যাসিলিটিজ ডেভেলপমেন্ট ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ অর্থ বছরে ভবন নির্মাণের কথা ছিল। কেন নির্মিত হয়নি কেউ জানেনা।
সিনিয়র নার্স সুজতা চাকমা জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে বসবাসের ব্যবস্থা না থাকায় অনেক ৩০-৪০ কিলোমিটার দূর থেকে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করতে হয়। এছাড়া আর উপায়ও নেই। থাকতে হচ্ছে। তাছাড়া এখানে বাসা ভাড়া পাওয়াও কঠিন।
আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার মোঃ তোফিকুল আলম বলেন, একদিন ঘুম ঘুম চোখে বারান্দায় কাপড় আনতে গিয়ে দরজার কোণে দেখি সাপ! কি করব ? একে তো সাপ ভীষন ভয় করি। সরকার প্রান্তিক ও তৃণমূলে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে আমাদের প্রেরণ করা হয়- দুর্গম উপজেলায়। কিন্ত নিরাপদ এবং গ্রহনযোগ্য আবাসস্থল কোন বালাই নেই।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আনন্যা চাকমা বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও আবাসিক ভবন গুলো ফাটন দেখা দিয়েছে। তার পরেও আমরা চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
রাঙামাটি জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ বিপাশ খীসা বলেন, জুরাছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি যে অবকাঠামো আসলেই খুব ঝুঁকিপূর্ণ। ৫০ শষ্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মান চলমান প্যাকেজে আগামীতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নে প্রধান স্বাস্থ্য প্রকৌশলীকে অবহিত করা হবে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.