রাঙামাটির দুর্গম বাঘাছিড়ি উপজেলার মগবানে ব্যতিক্রম ও ভিন্নধর্মী উদ্যোগ নিয়ে কুকুরের খামার গড়ে তোলেছেন বড় চাকমা ও ছোটো চাকমা নামের দুই ভাই। কুকুর খামার গড়ে তোলে পাহাড়ে আশার আলো দেখাচ্ছেন তারা। বর্তমানে বিলুপ্ত হওয়া দেশীয় সরাইল কুকুরসহ ৫ প্রজাতির কুকুর রয়েছে এই ফার্মে।
জানা গেছে, ২০১৬ সালে বাঘাইছড়ি উপজেলা সদর থেেক ৭ কেিলামটিার দূরে রুপকারী ইউনিয়নের মগবান গ্রামে চাকমা ক্যানলে এন্ড এগ্রো ফার্ম নামে দুই ভাই বড় চাকমা ও ছোটো চাকমা তিনটি কুকুর নিয়ে এই খামারটি শুরু করেন। ২০১৮ সাল থেকে কুকুর বাচ্চা দিতে শুরু করে। মোট এক একর জায়গায় বর্তমানে এই খামারে পাঁচ প্রজাতির ২২ টি কুকুর রয়েছে। এর মধ্যে রাশিয়ান জাতরে ককেশিয়ান শেফার্ড, আলাবাই, জার্মান শেফার্ড, পাকিস্তানি জাতের বোলি কুত্তা ও ব্রাক্ষমবাড়িয়ার দেশীয় সরাইল। এই কুকুর খামার দেখা শুনার জন্য বর্তমানে ৬ জন কর্মচারী রয়েছেন। এই কর্মচারীরা কুকুরদের পরিচর্চাসহ খাবার-দাবার দিয়ে থাকেন। বর্তমানে এই খামারটি রাঙামাটি ছাড়িয়ে সারাদেশে পরিচিতি পেয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই ফার্ম থেকে কুকুরের বাচ্চা কেনার অর্ডার দিয়ে রাখছেন এবং কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিটি কুকুরের বাচ্চা ৭৫ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্ষন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে এসব কুকুর লালনপালন খাবারের প্রচুর অর্থেরও প্রয়োজন হচ্ছে। কুকুদের জন্য মুরগীর মাংসম সব্জিসহ অন্যান্য খাবার দেয়া হয়। এসব ক্রয়ের জন্য প্রতিদিন ২২শ টাকা খরচ পড়ছে।
আরো জানা গেছে, দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় চাকমার ছোট কাল থেকে কুকুরের প্রতি ভীষণ দুর্বলতা ছিল। শখের বশে দুই ভাই তিনটি কুকুর নিয়ে এই বতিক্রমধর্মী এই খামার শুরু করেন। ধীরে ধীরে তা এখন খামারের পরিণত হয়েছে। ভবিষ্যতে সাজেকে ১শ একর জমিতে বৃহত্তর পরিসরে খামার করার চিন্তাভাবনা রয়েছে তাদের।
জানা গেছে, ককেশিয়ান শেফার্ড ও আলাবাই রাশিয়ান সৈন্যরা বন্দীদের পাহাড়া দেয়ার কাজে ব্যবহার করে। এ ছাড়াও ককেশাস অঞ্চলে ভেড়া খামারিরা নেকড়ে থেকে ভেড়াগুলো রক্ষার জন্য ককেশিয়ান শেফার্ড কুকুর ব্যবহার করে। এই দুই জাতরে কুকুর খুবই হিং¯্র। পাকিস্তানি জাতের বোলি কুকুররে মূল আবাসস্থল পাঞ্জাবে। ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পর এই কুকুরগুলোকে ইন্ডয়িান ম্যাসটফি ও পাকিস্তান ম্যাসটফি নামে ডাকা হয়। আর ব্রাক্ষমবাড়িয়ার সরাইল কুকুর বাংলাদেশীয় জাতের হলেও বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। এই কুকুরগুলো অত্যন্ত ক্ষিপ্রগতি সম্পন্ন ও সাহসী।
চাকমা ক্যানলে এন্ড এগ্রো ফার্মের মালিক ও তত্বাবধাায়ক ছোটো চাকমা বলেন,বর্তমানে তার খামারে ৫ প্রজাতির ২২টি কুকুর রয়েছে। কুকুরের বাচ্চার কেনার জন্য লোকজনের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। নভেম্বরের দিকে কুকুর বাচ্চা দেবে। তবে ইতোমধ্যে এসব কুকুরের বাচ্চা কেনার জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে অর্ডার দিয়ে রেখেছে।
চাকমা ক্যানলে এন্ড এগ্রো ফার্মের প্রধান কর্ণধার ও মালিক বড় চাকমা জানান, ছোট বেলা থেকে কুকুরের প্রতি তার দুর্বলতা ছিল। তাই শখের বশতঃ রাশিয়া থেকে ককেশিয়ান শেফার্ড, আলাভাই ও ঢাকা থেকে বোলি কুত্তা সংগ্রহ করে কুকুরের খামার শুরু করেন।
তিনি আরো বলেন, সাজেকে তাদের ১শ একর জমিতে বৃহত্তর আকারের চাকমা ক্যানলে এন্ড এগ্রো ফার্ম করা হবে। সেখানে এই কুকুরের ফার্মটা নিয়ে যাওয়া হবে। ইতোমধ্যে আর্জেন্টিনা থেকে ডগো আর্জেন্টিনো ডিসেম্বর মাসে ও তুর্কিস্থান থেকে জানুয়ারী অথবা ফেব্রুুয়ারী মাসের কানজাল কুকুর নিয়ে আসা হবে। এসব কুকুর সাধারণত শিকারের জন্য ও বাগানসহ অন্যান্য পাহাড়া দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। তিনি জানান, সরাইলের কুকুরের বাচ্চাগুলো ৬০ হাজার টাকা, জার্মান শেফার্ড ৪০ হাজার টাকা, ককেশিয়ান শেফার্ড ও আলাভাই ১লাখ ৫০ হাজার টাকা, বোলি কুত্তা ১লাখ ৩০ হাজার দামে বাচ্চাগুলো বিক্রি হচ্ছে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা পশু সম্পদ কর্মকর্তা উপ-সহকারী পরিচালক প্রণয় খীসা বলেন, বাঘাইছড়ির মতো প্রত্যান্ত অঞ্চলে বড় চাকমা এ ধরনের কুকুরের ফার্ম করেছেন তা একটা সাহসী পদক্ষেপ। শুরু থেকে উপজেলা পশু সম্পদ অফিস থেকে যতটুকু পারা যায় সহযোগিতা দিয়ে আসছি। বিশেষ করে তার ফার্মে আমরা যেটা গুরুত্ব দিচ্ছি তা হচ্ছে ব্রাক্ষমবাড়িয়ার সরাইল কুকুর জাতটি প্রায় বিলুপ্ত হওয়ার পথে। তাই এই সরাইল জাতের ই-িয়ান জাতের সাথে শংকর জাত করে নতুন জাত উদ্ভাবন করছেন তা খুবই প্রশংসনীয় এবং ভালো সরাইল কুকুরের জাত সৃষ্টি হবে আশা রাখি। তবে সরকারী পৃষ্টপোষকতা পেলে আরো বেশী উন্নতি করতে পারবেন।
তিনি আরো বলেন, কুকুরের খামার ঠিকিয়ে রাখা কষ্টকর হলেও বড় চাকমা যেকোনো প্রকারে কুকুরের ফার্মটি ঠিকিয়ে রাখবেন বলে আমাদের জানিয়ছেন। উপজেলা পশু সম্পদ অফিস থেকে যতটুকু সহযোগিতা করায় ততটুকু সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.