বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকায় সাবেক সংসদ সদস্য ও জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা মানেবেন্দ্র নারায়ন লারমার(এমএন লারমা) ৩৩ তম মৃত্যূ বার্ষিকী পালিত হয়েছে।
মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৩৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটির উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্ত্বরে আয়োজিত স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি।
কমিটির আহবায়ক ড: মুহাম্মদ সামাদের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার বিপ্লবী স্মৃতি, জীবন দর্শন ও সংগ্রাম নিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সাবেক তথ্য কমিশনার সাদেকা হালিম, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার, বিশিষ্ঠ কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরা, এএলআরডি নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সামসুল হুদা প্রমুখ। স্মরণ সভা সঞ্চালনা করেন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক রোবায়েত ফেরদৌস।
স্মরণসভা শুরু হওয়ার আগে প্রয়াত এই বিপ্লবী নেতার শহীদ স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও ছাত্র সংগঠন। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে অস্থায়ী বেদীতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। এর পরে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
স্মরণভায় জাতীয় কমিটির পক্ষে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৩৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ঈষানী চক্রবর্তী। স্মরণসভার পরে মাদল এবং সংগীতের বিপ্লবী সাংস্কৃতিক পরিবশেনা কারা হয়।
স্বাগত বক্তব্যে কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সঞ্জীব দ্রং বলেন, বাংলাদেশে যখন সংবিধান রচনা করা হয় তখন আমরা মনে করেছিলাম এ সংবিধান হবে পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর, ধর্মনিরপেক্ষ, শ্রেনীহীন সংবিধান। কিন্তু যে সংবিধান আমরা পেয়েছি তা বাংলাদেশে বসাবাসরত জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যলঘু, আদিবাসীদের কথা বলেনা। সংবিধানের সেই বিষয়টি একমাত্র মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা অনুধাবন করে বলেছিলেন, এ সংবিধান দেশের কৃষক, শ্রমিক, মজুর, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু আদিবাসীদের কথা বলে না।
নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে কৃষক, শ্রমিক, আদিবাসীদের অধিকার থাকবে।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ ক্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ছিলেন দেশের প্রথমসারির রাজনৈতিক বিপ্লবী। তিনি উগ্র জাত্যভিমানী ভাবাদর্শের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন, তার আন্দোলন ছিলো মেহনতি মানুষের অধিকারের জন্য।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরা বলেন, বাংলাদেশের আদিবাসী, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালগুদের উপড় সহিংসতা বেড়ে চলেছে।
জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার বলেন, আদিবাসীদের স¦কীয়তা, স্বাতন্ত্র্যতাকে সংরক্ষণ করতে না পারলে পৃথিবীর যে ইতিহাস সে ইতিহাসের সাথে বেঈমানী করা হবে।
সাবেক তথ্য কমিশনার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, তার আন্দোলন ছিলো দেশের নিপীড়িত নির্যাতিত সকল মানুষের অধিকারের জন্য।
বিশিষ্ঠ গবেষক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার স্বপ্ন ছিলো শোষনহীন, শ্রেণীহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। তিনি অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে দেশের মূল ধারার জনগোষ্ঠীর সাথে মিলে একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনের কথা চিন্তা করেছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, সংবিধানে আদিবাসীদের স্বীকৃতি দিতে না পারা ছিল একটি জাতীয় ভুল। আদিবাসীদের প্রতি অন্যায় অবিচার চলমান রয়েছে। শান্তিচুক্তির এত বছর পরেও তার সুষ্ঠু ও যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে এখনো পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশৃঙ্খলা রয়ে গেছে। মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার যে সংগ্রাম সে সংগ্রাম পাহাড় সমতলের আদিবাসীদের একত্রিত করতে পেরেছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.