রাঙামাটিতে বাঁশের তৈরী ফার্নিচার দিন দিন চাহিদা বাড়ছে। ফার্নিচার হালকা, টেকসই ,পরিববেশ বান্ধব ও স্বপ্ল মূল্যে হওয়ায় বর্তমানে এ ফার্নিচারের স্থানীয়ভাবে চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে জেলার বাইরেও।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে, রাঙামাটির বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা আশিকা মানবিক সংস্থার উদ্যোগে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঁশ শিল্পকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিতে এবং কর্ম সংস্থান সৃষ্টির লক্ষে গত ২০০৮ সাল থেকে বাঁশের ফার্নিচার তৈরীর কাজ শুরু করে। প্রথমিক অবস্থায় এর চাহিদা কম হলেও পরবর্তীতে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। মন মাতানো ডিজাইনের বাঁশের ফার্নিচারের মধ্যে রয়েছে শোফাসেট,চেয়ার,স্ট্যান্ড ল্যাম্প ও বিভিন্ন প্রকারের শোফিসসহ নিত্য ব্যবহার্য্য ফার্নিচার। এসব বাঁশের ফার্নিচার হালকা, পরিবেশ বান্ধব ও স্বপ্ল মূল্যে পাওয়া যাওয়ায় এর স্থানীয় মানুষের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে এসব ফার্নিচার স্থানীয়ভাবে চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে জেলা বাইরেও।
কাঠের তৈরী ফার্নিচার চেয়ে তুলনামূলকভাবে বাঁশের ফার্নিচারের দাম অনেকটা সস্তা। তাছাড়া এই বাঁশের তৈরী ফার্নিচার হালকা ও টেকসই হওয়ার ক্রেতাদের মধ্যে চাহিদা বেশী রয়েছে। বাসাবাড়ি ছাড়াও অফিস, রেস্তোরাঁ সাজাতে এই আসবাবের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অপরদিকে বাঁশের ফার্নিচার পার্বত্য অঞ্চলের একটি সম্ভাবনাময় শিল্প। সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই শিল্পকে ঘিরে ব্যাপক কর্ম সংস্থানের সুযোগ রয়েছে। পাশপাশি ফার্নিচার তৈরিতে গাছের ব্যবহার কমিয়ে এলাকার বনগুলো রক্ষা করা সম্ভব হবে।
রাঙামাটিতে বাঁশের ফার্নিচার সাধারনতঃ স্থানীয় ভুদুম বাঁশ দিয়ে তৈরী করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের এই ভূদুম বাঁশ বানিজ্যিকভাবে চাহিদা না থাকায় তুলনামূলকভাবে কম চাষ করা হয়। তবে বর্তমানে বাঁশের ফার্নিচার তৈরীর কারণে এই ভূদুম বাঁশ চাষের আগ্রহ বাড়ছে। এই ভূদুম বাঁশ অন্যান্য বাঁশের চেয়ে মোটা,সরু ও লম্বা হয়ে থাকে। তাই ফার্নিচার তৈরীতে অতিসহজ ও টেকসই। তবে এই বাঁশ থেকে ফার্নিচার তৈরীর আগে পানির মধ্যে দুই থেকে তিন সপ্তাহ রাসায়নিক দ্রবনের মধ্যে ডুবিয়ে রাখতে হয়। এই ট্রিটমেন্টের ওপর নির্ভর করে থাকে বাঁশের ফার্নিচারের স্থায়িত্ব ও গুনগতমান।
ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাঁশের চেয়ে কাঠের ফার্নিচারের চেয়ে দাম তুলনামূলকভাবে কম এবং ফার্নিচারগুলো হালকা ও টেকসই। এই বাঁশের তৈরী ফার্নিচারগুলোতে পার্বত্য চট্টগ্রামের যে সংস্কৃতি রয়েছে তা মিল খুজে পাওয়া যায়।
রাঙামাটি মারী স্টেডিয়ামের পাশে অবস্থিত বেম্বো ফার্নিচার মার্টের ব্যবস্থাপক আদিত্য চাকমা জানান, বাঁশের তৈরী ফার্নিচার স্থানীয় চাহিদা ছাড়াও জেলা বাইরেও এর চাহিদা রয়েছে। বাঁশের ফার্নিচারের মধ্যে রয়েছে শোফা, টেবিল ল্যাম্প, স্ট্যান্ড ল্যাম্প, ওয়াল ল্যাম্প, ষ্ট্রেসহ শোফিস জাতীয় ফার্নিচার রয়েছে। এছাড়া চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ডিজাইনের বাঁশের ফার্নিচার তৈরী করা হয়ে থাকে।
বাঁশের তৈরী ফার্নিচারের উদ্যোক্তা আশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক বিপ্লব চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি,খাগড়াছড়ি,বান্দরবানের লোকজন প্রাকৃতিক সম্পদ বাঁশ,কাঠ ও মাছের উপর নির্ভশীল। তার মধ্যে অন্যতম হল বাঁশ। পার্বত্য চট্টগ্রামের অনাচেকানাচে বাঁশ পাওয়া যায়। তাই এই বাঁশ শিল্পকে কাজে লাগাতে এই বাঁশের তৈরী ফার্নিচার একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস। কারণ এক ট্রাক বাঁশ ঢাকা অথবা চট্টগ্রামে নিয়ে যেতে হলে রাজস্ব ফি হিসেবে ৬হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু এক ট্রাক বাঁশকে ফার্নিচার তৈরী করে নিয়ে যাওয়া যায় তাহলে দশ ট্রাক ফার্নিচার হবে ও দশ লাখ টাকার আয় করা সম্ভব হবে। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের এই বনজ সম্পাদকে কাজে লাগানো গেলেই যা এখানকার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
তিনি আরো জানান, এই বাঁশের তৈরী ফার্নিচার সেগুন কাঠের মতো কারণ এটাকে মেডিসিন দিয়ে ট্রিটমেন্ট করা থাকে বলে অতি সহজেই নষ্ট হয় না। তাই পার্বত্য চট্টগ্রাম ও তার বাইরে সৌখিন মানুষের এই বাঁশের তৈরী ফার্নিচারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
এই শিল্পের কারিগরী প্রশিক্ষণগুলো সরকারের কাছ থেকে পাওয়া যেতো তাহলে এটি একটি বড় শিল্পে পরিনত হবে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের অর্থনীতির বিপ্লবের ক্ষেত্রে একটা বড় অবদান রাখবে বলে তিনি মনে করেন।
রাঙামাটি ক্ষুদ্র ও কূটির শিল্পের(বেসিক) সহকারী ব্যবস্থাপক জামাল নাসের চৌধুরী বলেন, রাঙামাটিতে বিভিন্ন ট্রেডে বেসিক থেকে প্রশিক্ষন দেয়া হয়ে থাকে। বিশেষ করে বাঁশ ও বেতের তৈরীর ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ ও ঋণ সুবিধা দেয়া হয়ে থাকে। রাঙামাটিতে বাঁশ ও বেতের উৎপাদিত পণ্যর বিশাল চাহিদা সারা দেশে রয়েছে। রাঙামাটির বেসিক তার জন্ম থেকে বাঁশ ও বেতের বিভিন্ন প্রশিক্ষন দিয়ে আসছে এবং উৎপাদিত পণ্য সামগ্রি বিক্রয়ের ব্যবস্থা করে দিয়ে থাকে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.