রাঙামাটির বরকল সদর উপজেলাবাসীর বিদ্যূৎ সুবিধা দেয়ার লক্ষে স্থাপিত ৩টি বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রায় ৭ কোটি টাকার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি অযত্নে অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে। এসব প্রকল্পের মালামাল তদারকি সংরক্ষণ অথবা চালুর কোন উদ্যোগ নেই।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিদ্যুতায়ন প্রকল্প কর্তৃপক্ষের। জানা যায়- বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ১৯৮৫ সালে সর্বপ্রথম বরকল সদর এলাকায় ৩টি বড় জেনারেটর মেশিনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহের উদ্যোগ নেয়। জেনারেটর মেশিন দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রকল্পে তৎসময়ে ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় এক কোটি টাকা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বছর দুয়েক সদর এলাকায় কয়েকটি পরিবার বিদ্যুৎ সুবিধা পেলেও নানান অনিয়ম ও র্দূনীতির কারণে বন্ধ হয়ে যায় এ প্রকল্পের কার্যক্রম। প্রকল্পের কর্মকান্ড বন্ধের পর থেকে আজও পর্ষন্ত চালুর কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
এরপরে ২০০৫ সালে দ্বিতীয়বার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড পার্বত্য চট্টগ্রাম বিদ্যুৎতায়ন প্রকল্পের অধীনে সৌর প্যানেলের মাধ্যমে ১০কিলোওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প হাতে নেয়। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় তিন কোটি টাকা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে উপজেলা সদরের সরকারী অফিস,ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসত বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হলেও প্রকল্পের বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় কাংঙ্খিত সুফল পায়নি সদর এলাকাবাসী। তবে তিন বছর আগে নাম মাত্র বিদ্যুৎ সরবরাহের পর বন্ধ হয়ে যায় এ সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প। বর্তমানে সৌর প্যানেল,ব্যাটারী ও ইনভেটর মেশিন গুলো অযত্নে অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়াও ২০০৬ সালে তৃতীয় বারের মত সদর এলাকায় ছড়ার উপর বাঁধ দিয়ে পরীক্ষামূলক ভাবে ৫০ কিলোওয়াট জল বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহের জন্য প্রকল্প নেয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।
প্যান এশিয়া পাওয়ার সার্ভিস লিমিটেড (পাস) নামে ঢাকার এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্পের কাজ পায়। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি প্রকল্পের কাজ শেষ না করে তড়িঘড়ি করে তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মনিস্বপন দেওয়ানকে দিয়ে প্রকল্প উদ্বোধন করে দায় সারেন। এরপর আর জল বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আলোর মুখ দেখেনি। এভাবে পরপর তিনটি বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হলেও সঠিক ব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম র্দূনীতির কারনে একটি প্রকল্পের ও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়নি বলে সদর এলাকার মানুষদের অভিযোগ। বর্তমানে সংরক্ষনের অভাবে অযত্নে অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে প্রকল্পের কোটি কোটি টাকার এ সব মালামাল।
সদর এলাকার মেম্বার হাবিবুর রহমান,ব্যবসায়ী বিরোজয় চাকমা, ইদ্রিস সওদাগর ও উৎপল চাকমা জানান, অনিয়ম র্দূনীতির কারনে তিনটি বিদ্যুৎ প্রকল্পের মধ্যে একটির ও বাস্তবায়ন হয়নি। প্রকল্পের নামে বার বার প্রতারণার শিকার হওয়ায় বিদ্যুতের আলো থেকে এ উপজেলার মানুষ এখনো আমরা বঞ্চিত রয়েছি।
বরকল সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান প্রভাত কুমার চাকমা জানান, উপজেলার সদর এলাকায় বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করার জন্য যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) উদ্যোগ নিয়েছে তা এলাকার মানুষের কোন উপকারে আসেনি। বর্তমানে কোটি টাকার সম্পদ পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে না রেখে নতুন করে মেরামত করে চালুর উদ্যোগ নেয়া অথবা নিলামে মালামাল গুলো বিক্রি করে দেয়া দরকার বলে চেয়ারম্যান অভিমত ব্যক্ত করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের উপ পরিচালক মোঃ আব্দুল মুত্তাহী জানান, তিনি এ প্রকল্পে নতুন বদলী হয়ে এসেছেন। আগে কি প্রকল্প নেয়া হয়েছে সেই ব্যাপারে তিনি কোন কিছুই জানেন না।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রধান প্রকৌশলী দীপক খীসা জানান, প্রকল্প তিনটি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের অধীনে বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রকল্প গুলো আমাদেরকে (পিডিবি)কে হস্তান্তর করা হয়নি। যার কারণে প্রকল্প গুলো সম্পর্কে আমি তেমন কিছু জানি না। তবে প্রকল্প গুলো পাইলট প্রকল্প। পরীক্ষামূলক করা হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্প গুলো কি অবস্থায় আছে তা আমি জানি না।
–হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.