রাঙামাটিতে বিলাতি ধনিয়া পাতা চাষের আর্থিক লাভবান হওয়ায় দিন দিন চাষীদের এ চাষের আগ্রহ বাড়ছে। তবে এ বছর বিলাতি ধনিয়া পাতা চাষের ফলন ভাল হলেও চাষীরা নায্য মূল্য পাচ্ছেন না।
রাঙামাটি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়,রাঙামাটি জেলায় এ বছর ২শ ১৫ হেক্টর জমিতে বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষ হয়েছে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রতি হেক্টরে ৩০ থেকে ৪০মেট্রিক টন। এ জেলায় রাঙামাটি সদর, কাপ্তাই,রাজস্থলী ও কাউখালী উপজেলায় সবচেয়ে বেশী এ বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষ হয়ে থাকে। এসব এলাকায় চাষীরা এ বিলাতি ধনিয়া পাতা বিক্রি করে পারিবারিক স্বচ্ছলতা মেটায়। এ বিলাতি ধনিয়ার বীজ সাধারনত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসের দিকে বপণ করা হয়। জুলাই থেকে আগষ্ট মাসরে দিকে এ বিলাতি ধনিয়া পাতা উৎপাদন করা হয়ে থাকে। বিলাতি ধনিয়া পাতা খাবার ছাড়াও ঔষধী ও সুগন্ধি তৈরীতে বিদেশে রপ্তানী করা হয়ে থাকে।
এদিকে, এ বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় রাঙামাটি জেলায় বিলাতি ধনিয়া পাতা চাষের উৎপাদন ভাল হলেও এ চাষের সাথে জড়িত চাষীরা নায্য মূল্য পাচ্ছেন না। আগের বছর প্রতি কেজি ১শ টাকা থেকে ১শ ২০ টাকায় বিক্রি করলেও এ বছর ৩০থেকে ৩৫টাকায় বিলাতি ধনিয়া পাতা বিক্রি হচ্ছে। তবে চাষীরা নায্য মূল্য না পাওয়ার জন্য এক শ্রেনী মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটকেই দায়ী করেছেন।
সাপছড়ি এলাকার কৃষক চিরঞ্জিত চাকমা জানান, এ বছর দেড় একর জমিতে বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষ করেছেন। উৎপাদন ভাল হয়েছে কিন্ত দাম নেই। বিলাতি ধনিয়া পাতা চাষের যে খরচ হয়েছে সেই টাকাগুলোও উঠে আসছে না। এক শ্রেনীর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এ বিলাতি ধনিয়া পাতা ক্রয় করে নিয়ে যাওয়ার কারণে তারা নায্য মূল্য পাচ্ছেন না।
কৃষক রঞ্জিতা চাকমা জানান,বিলাতি ধনিয়া পাতা চাষের জন্য এ বছর কর্মসংস্থান ব্যাংক ও স্থানীয় এতটি এনজিও থেকে দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। ধনিয়া পাতার দাম কম হওয়ায় কিভাবে ঋনের টাকা পরিশোধ করবেন বুঝে উঠতে পারছি না।
কৃষক আনন্দ চাকমা জানান, এ বছর বিলাতি ধনিয়া পাতা ব্যাপকভাবে উৎপাদনের কারণে ব্যবসায়ীরা বেশী দাম দিতে চাইছে না। আগের বছর এ বিলাতি ধনিয়া পাতার দাম ভাল ছিল।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাঙামাটি সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আপ্রু মারমা জানান, রাঙামাটিতে পাহাড়ের পাদদেশের সমতল জমিগুলোর সুনিঃস্কাশিত দো-আঁশ মাটি হওয়ায় এবং রোগবালাই কম হওয়াতে এই অর্থকরী ফসল বিলাতি কৃষকদের মাঝে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এ বছর এ চাষের উৎপাদন ভাল হলেও কৃষকরা নায্য মূল্য না পাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে কৃষকরা সংসংগঠিত নয় এবং তাদের মধ্যে কোন সমিতিও নেই। যার কারণে পাইকারী ক্রেতারা কৃষকদের কাছ থেকে খুব কমদামে কিনে নিয়ে শহরাঞ্চলে বেশী দামে বিক্রি করছে। এছাড়া রাঙামাটি জেলায় সংরক্ষানাগার না থাকায় এসব কাঁচামাল সংরক্ষনের সমস্যা হচ্ছে।
অন্যদিকে স্থানীয় পদ্ধতিতে কিভাবে কাচাঁমাল সংরক্ষন করতে হবে কৃষকদের কোন প্রশিক্ষণ নেই। তাই এ চাষে আধুনিক পদ্ধতিতে কৃষদের মাঝে প্রশিক্ষণ ও পণ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা করাসহ ব্যাংক থেকে ঋণ দেয়া হলে রাঙামাটিতে এ চাষে একটি আদর্শ ফসল হিসেবে গড়ে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.