ফেরি চালু হওয়ার দীর্ঘ ৩০ বছরেও কাপ্তাইয়ের রাইখালী ও রাঙ্গুনীয়ার লিচুবাগান সড়কের কর্ণফুলী নদীর ওপর সেতু নির্মিত হয়নি। এতে প্রতিদিন শত শত বাস, ট্রাক, জীপ, সিএনজি, মাইক্রো ও চাঁদের গাড়িতে চলাচলরত যাত্রীসাধারণ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।
এ সড়কে একটি সেতু নির্মাণের জন্য এ অঞ্চলের জনসাধারণ দু’যুগ ধরে প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে। তাদের এই দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান আদৌ হবে কি? তারা জানতে চায়। প্রচুর সম্ভাবনাময় এ অঞ্চলের মানুষের ভোগান্তি দূর এবং ব্যবসায়িক সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৮৬ সালে কর্ণফুলী নদীর এই স্থানে ফেরি চালু করা হয়।
পার্বত্যাঞ্চলের মূল্যবান বাঁশ, গাছ, মৌসুমী ফলমূল, তরিতরকারি সহ বিভিন্ন মালামাল রাজস্থলী-রাইখালী ও বান্দরবান-রাইখালী সড়ক হয়ে দেশের নানা স্থানে সরবরাহ করা হয়। অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ব্যবসায়িক এলাকা হওয়া সত্ত্বেও যোগাযোগের ক্ষেত্রে এ এলাকার সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে ফেরি পারাপার ব্যবস্থা। কারন বান্দরবান থেকে রাঙামাটি বা খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা অথবা রাঙ্গামাটি থেকে রাজস্থলীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী বাসসহ অন্যান্য যানবাহনকে শুধুমাত্র ফেরিটি পারাপার হতে ২-১ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়।
এতে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অগ্নিকান্ডের সময় দমকল বাহিনীর গাড়ী যেতে অনেক সময় লেগে যায়। ফলে তাৎক্ষনিক আগুন নিভানো সম্ভব হয়না। সম্প্রতি অগ্ন্কিান্ডে দমকল বাহিনীর গাড়ী পারাপারে বিলম্বের জন্য প্রায় ৪০টির অধিক দোকান ঘর ও বসতবাড়ী পুড়ে গেছে।
কর্ণফুলী নদীর এ ঘাটে শুধুমাত্র একটি ফেরি থাকায় ইচ্ছেমতো ফেরি পারাপার করা যায় না। কারণ নির্দিষ্ট সময় ব্যতীত ফেরি চলাচল করেনা। ফলে নির্দিষ্ট সময়ে ফেরি ছাড়ার একটু পরে কোন ধরনের যানবাহন ঘাটে এসে পৌঁছালে পুনরায় ফেরি পেতে তাকে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। যে কারণে দুরের পথে পাড়ি দেওয়া অনেক যানবাহনকে নির্দিষ্ট সময়ে ফেরি ধরার উদ্দেশ্যে দ্রুত বেগে গাড়ি চালিয়ে আসায় দূর্ঘটনা কবলিত হতে হচ্ছে।
এদিকে, কাপ্তাইয়ের রাইখালী এলাকায় রয়েছে তিন পার্বত্য জেলার একমাত্র কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, ১৯৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত চন্দ্রঘোনা থানা, কাপ্তাই উপজেলার একমাত্র নারানগিরি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, কাপ্তাই উপজেলা পশু সম্পদ কার্যালয়, পার্বত্য জেলাধীন আঞ্চলিক তুলা উন্নয়ন কার্যালয়। রাজস্থলী উপজেলায় রয়েছে বিভিন্ন সরকারি অফিসসহ বেশ কয়েকটি সেনা ক্যাম্প ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনা। এছাড়া কাপ্তাই পাল্পউড বাগান বিভাগের আওতাধীন রাজস্থলী ও বান্দরবান জেলায় বিশাল এলাকা জুুড়ে রয়েছে বনবাগান। এসব বাগান থেকে বাঁশ ও গাছ এ সড়ক হয়েই প্রতিদিন কর্ণফুলী পেপার মিলে আনা হয়ে থাকে।
স্থানীয় অধিবাসীরা জনান, ১৯৯১ সালে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী কর্ণেল (অবঃ) অলি আহমদের কাপ্তাই সফর কালে এলাকাবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে কর্ণফুলী নদীর রাইখালী-লিচুবাগান ফেরি পারাপারের স্থলে একটি সেতু নির্মানের ঘোষনা দেওয়া হয়। অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘ ১৯ বছরেও মন্ত্রীর ঘোষনার বাস্তবায়ন হয়নি। অথচ শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারনে লিচুবাগান থেকে প্রায় ২৫-৩০ কিলোমিটার দূরে রাঙ্গুনিয়ার গোডাউন এলাকাধীন কর্ণফুলী নদীতে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
অপরদিকে, রাঙামাটি জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদের স্থানীয় একটি সূত্র জনায়, ফেরি এলাকার সীমানা নির্ধারনের জটিলতার কারনে সেতু নির্মানে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। কারন ফেরির এক অংশ রাঙ্গামাটি জেলাধীন কাপ্তাইয়ের রাইখালীতে। অপর অংশ চট্টগ্রামের রাঙ্গুনীয়া উপজেলাধীন লিচুবাগানে অবস্থিত।
সেতুটি নির্মিত হলে পুরো অঞ্চলজুড়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটার পাশাপাশি মাত্র কয়েক বছরেই সেতু নির্মানের দ্বিগুন অর্থ টোল আদায়ের মাধ্যমে উঠে আসবে। অপরদিকে জনসাধারণের ভোগান্তি দুর হবে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.