রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি বেহাল অবস্থায় পরিণত হয়েছে। একদিকে চিকিৎসক সংকট অন্যদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবকাঠামোসহ নানান সংকটে ভরপুর। ফলে উপজেলাবাসী চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
জানা গেছে, ১৯৭৯-৮০ সালের দিকে রাঙামাটির কাউখালী উপজেলা সদরে মোট ৬ একর জমির উপর ১০ শষ্যা বিশিষ্ট এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি স্থাপিত হয়। এ উপজেলায় ৪টি ইউনিয়নে প্রায় নারী-শিশু ও পুরুষ মিলে প্রায় ৬০হাজার লোকজনের বসবাস রয়েছে। এছাড়া এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এ সীমানা দেয়াল থাকলেও তা ভেঙ্গে গেছে। ফলে সীমানা প্রাচীর না থাকায় অরিক্ষত হয়ে পড়েছে কমপ্লেক্সেটি । ইতোমধ্যে কমপ্লেক্সে জমির কিছু অংশ দখল হয়ে গেছে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, এ কাউখারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট ৫টি বিভাগ রয়েছে। এগুলো হল স্বাস্থ্য পরিদর্শক শাখা, বহির বিভাগ, অন্তঃবিভাগ, ল্যাবব্রোটরি ও স্টোর রুম। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী কনসালটেন্ট, গাইনী, মেডিসিন, সার্জারী, এ্যানেস্টিসিয়াসহ ১৩ জন চিকিৎসক থাকা থাকলেও কাগজে কলমে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৮জন। এ ৮ জন চিকিৎসকের মধ্যে বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদে মাত্র ১জন চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন। বাকী ৭জন চিকিৎসকের মধ্যে ৫জন চিকিৎসক রাঙামাটি ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে এবং রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে ১ জন চিকিৎসক প্রেষনে, শিক্ষা ছুটিতে ১জন চিকিৎসক এবং অপর ১জন চিকিৎসক দীর্ঘ দিন ধরে ছূটিতে রয়েছেন। এছাড়া ৪ জন স্বাস্থ্য সহকারীর(মেডিকেল এ্যাসিসটেন্ট) মধ্যে মাত্র ১জনই কর্মরত রয়েছেন। এছাড়া নার্স, ল্যাব টেকনেশিয়ানসহ বিভিন্ন পদে লোকবল অপ্রতুল রয়েছে।
সম্প্রতি সেমিপাকা এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুরদুরান্ত থেকে আসা অনেক নারী ও শিশু চিকিৎসা নিতে আসলেও চিকিৎসক না থাকায় ফিরে যাচ্ছেন। কমপ্লেক্সের সমস্ত আউট ডোরে ঝুলছে তালা। কমপ্লেক্সের ভেতরে গিয়ে নারী ও শিশু ওয়ার্ডে রোগী দেখা মিলেও ওয়ার্ডে অপরিস্কার এবং টয়লেটের দরজা ভাঙ্গা ও দুরগন্ধে ভরা। আবার পুরুষ ওয়ার্ডে কোন রোগীরও দেখা মিলেনি। কমপ্লেক্সটি স্থাপনের পর এখনো সংস্কার না করায় কয়েকটি অংশে ভেঙ্গে পড়েছে।
এলাকার লোকজন ও রোগীরা দীর্ঘ দিন ধরে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়মিত চিকিৎসক ও পর্যাপ্ত ঔষধ না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কাউখালীবাসী দীর্ঘ দিন ধরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়মিত চিকিৎসকের উপস্থিতি দাবী জানিয়ে আসলেও কর্তৃপক্ষ কোন কথা কর্ণপাত করেনি। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে চিকিৎসকের দুরের কথা মাত্র ১ জন স্বাস্থ্য সহকারী (আনন্দ বাবু) দিয়ে পরিচালনা করা হচ্ছে। এই স্বাস্থ্য সহকারী চিকিৎসক হলেও তিনি আর স্বাস্থ্য সহকারী হলেও তিনি।
এলাকাবাসীরা আরো জানান, কাউখালীতে একটা কথা প্রচলন হয়ে গেছে যে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সর্ব রোগের ঔষধ হিসেবে প্যারাসিটামল সিরাপ রোগীদের দেওয়া হয়ে থাকে। এলাকাবাসী অবিলম্বে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে এলাকার লোকজনের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতের দাবী জানিয়েছেন।
জেলা সিভিল সার্জন ডা.স্নেহ কান্তি চাকমা কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাত্র ৮জন চিকিৎসকের মধ্যে মাত্র ১জন চিকিৎসক(উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা) রয়েছেন জানিয়ে বলেন, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক যে নেই তা সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সভায় অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে ফ্যাক্স ও চিঠির মাধ্যমে এ বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক পদায়নের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে আশ্বাস পাওয়া গেছে। আশাকরি দু`এক দিনের মধ্যে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে।
তিনি আরো বলেন, এমনিতে রাঙামাটি জেলায় ১৭৬ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ৭২ জন। ৭২ জন চিকিৎসক দিয়ে এ বড় জেলায় চিকিৎসা সেবা দেওয়া কঠিন। তারপরও চিকিৎসকরা কঠোর পরিশ্রম করে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.