রাঙামাটির একমাত্র কাউখালীর মিনি মৎস্য হ্যাচারী প্রকল্পের মাধ্যমে রাঙামাটির দশ উপজেলায় কৃত্রিমভাবে উৎপাদিত মাছের রেণু ও পোনার চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলায়ও সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে একদিকে পার্বত্য এলাকায় মাছ চাষের আগ্রহ বাড়ছে অন্যদিকে আমিষের চাহিদা মিটানো সম্ভব হচ্ছে।
জানা গেছে, রাঙামাটির দশ উপজেলায় মাছের রেণু ও পোনার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে ২০০৪ সালে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রনালয় থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম মৎস্য চাষ উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে কাউখালী উপজেলায় মিনি মৎস্য হ্যাচারী প্রকল্পটি স্থাপন করা হয়। কাউখালী উপজেলা সদরের রাঙ্গিপাড়া এলাকায় অবস্থিত প্রায় সাত একর জমিতে এ মিনি মৎস্য হ্যাচারী খামারে রয়েছে ৭টি পুকুর রয়েছে।
এর মধ্যে ৫টি নার্সারী পুকুর অপর দুটি হচ্ছে মা মাছ উৎপদানের পুকুর। এ খামারে রুই,কতলা,মৃগেল,শরপুতি, গ্রাসকার্প ও বিগহেডসহ মোট ৬ জাতের মাছের রেণু ও পোনা কৃত্রিমভাবে উৎপাদন করা হয়ে থাকে। আর এসব রেণু ও পোনা রাঙামাটি জেলার বসরবাসরত মৎস্য চাষীদের মাঝে স্বপ্ল দামে বিক্রি করা হয়। চলতি বছরে এ খামার থেকে ৩৮ থেকে ৪০ কেজি রেণু বিক্রি করা হয়েছে।
এদিকে, কাউখালীর মৎস্য চাষীরা অভিযোগ করেছেন, এ হ্যাচারী খামারে কৃত্রিমভাবে উৎপাদিত মাছের রেণু ও পোনা অল্প খরচে ও পরিবহনে সহজ হওয়ায় চাষীদের চাহিদা বেশী রয়েছে। তবে উৎপাদিত এসব মাছের রেণু ও পোনা কাউখালীর চাষীরা চাহিদা অনুযায়ী পাচ্ছেন না। অধিকাংশ উৎপাদিত মাছের রেণু ও পোনা রাঙামাটির বাইরে খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে। তারা স্থানীয় চাষীদের চাহিদা মেটানোসহ আরো বেশী করে উৎপাদনের দাবী জানিয়েছেন।
কাউখালীর মিনি মৎস্য হ্যাচারী প্রকল্পের খামার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আল রাজীব জানান, পুকুর থেকে মা মাছ ধরার পর ৬ থেকে ৭ ঘন্টার পর হরমোন ইনজেক্টশন দেওয়া হয়। এর পর প্রজাতী ভেদে মা মাছগুলো ৬ থেকে ১০ ঘন্টার মধ্যে ডিম দিয়ে থাকে। পরে ডিম সংগ্রহ করে হ্যাচিং জারে মধ্যে রাখা হয়। পরে ২৪ ঘন্টার পর ডিম থেকে রেণু বের করা হয়। রেণুগুলো হ্যাচিং জারে রেখে ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে রেখে খাদ্য দেওয়া হয় এবং ৫দিন পর রেণুগুলো চাষীদের কাছে বিক্রি করা হয়।
তিনি আরো জানান, এই মিনি মৎস্য হ্যাচারী উৎপাদিত রেণু ও পোনা রাঙামাটির দশ উপজেলার মৎস্য চাষীদের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। তাই চাহিদা অনুযায়ী এ খামারের কৃত্রিমভাবে রেণু ও পোনা উৎপাদন করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামে মৎস্য চাষের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের লক্ষে এ খামার উৎপাদিত মাছের রেণু ও পোনা পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী অধিবাসীদের মাঝে অতি স্বপ্ল দামে বিক্রি করা হয়। তিনি বলেন, পার্বত্য এলাকায় বসবাসরত পাহাড়ী জনগোষ্ঠী আগে মাছ চাষ করতো না।
এখন প্রকল্প থেকে অল্প খরচে এবং অতি অল্প সময়ে পরিবহনের উপযোগী হওয়ায় এ অঞ্চলে মাছ চাষে নতুন নতুন ক্রিক হচ্ছে এবং চাষীরা নিজেরাই উদ্ধুদ্ধ হয়ে পুকুর তৈরী করে মাছ চাষের দিকে ঝুকঁছেন। এতে করে রাঙামাটিসহ পার্বত্য জেলায় মাছ চাষ উৎপাদনে বিপুল সম্ভবনা দেখা দিয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আব্দুর রহমান জানান, কাউখালী মৎস্য হ্যাচারীর উৎপাদিত রেণু ও পোনা রাঙামাটি জেলায় চাহিদা পূরনের পাশাপাশি খাগড়াছড়ি বান্দরবান ও চট্টগ্রামের কিছু কিছু জায়গায় রেণু ও পোনা সরবরাহ করা হচ্ছে। এ হ্যাচারীতে প্রতি বছর আরো উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায় তারই লক্ষে চারটি জারে ডিম ফুটানো হতো গেল বছর থেকে ৮টি জারে ডিম ফুটানো হচ্ছে। এতে করে আগে যে চাহিদা ছিল তার আরও বাড়ায় তার চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.