বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার(এমএনলারমা) ১৯৭২ সালে সংবিধানে বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্তি চেয়েছিলেন সেটি আজকে রাষ্ট্র ও সংবিধান সংস্কারে তার প্রতিফলন ঘটছে বলে মন্তব্য করেছেন বক্তারা।
তারা বলেন, ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়নের সময় এমএন লারমা এ দেশের ভিন্ন ভিন্ন জাতিসত্তাসমূহের সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভব করেছিলেন। তাই তিনি সংবিধানে দেশের শোষিত, নিপীড়িত, অধিকারহারা শ্রমিক, কৃষক, জেলে, তাঁতি ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী জাতিসত্বাসহ বঞ্চিত মানুষের কথা সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির জন্য জোরালোভাবে সংসদের ভেতরে ও বাইরে দাবী তুলে কার্যকর ও যুক্তিযুক্ত ভূমিকা রাখার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। যেখানে কোনো অভাব থাকবে না, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ থাকবে না, বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। কিন্তু উগ্র জাত্যাভিমানী শাসকগোষ্ঠী এমএন লারমার প্রস্তাবিত যৌক্তিক সংশোধনী আমলে নেয়নি। অনেক সময় তুচ্চ তাচ্ছিল্যে করে তাঁকে অপমানিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের শাসনতন্ত্র রচনায় এমএন লারমার গণপরিষদ ও পরবর্তী জাতীয় সংসদে প্রদত্ত সংশোধনী আমলে না নেওয়ার কারণে আজকে দেশের এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা এমএন লারমার ৮৫তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার রাঙামাটিতে কবিতা পাঠ ও আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
বক্তারা আরো বলেন, এমএন লারমা ছিলেন দূর দৃষ্টিসম্পন্ন একজন রাজনৈতিক নেতা, যিনি সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদের ঊর্ধ্বে উঠে সব মেহনতি মানুষের কথা যেমন ভাবতেন, তেমনি সংসদে দাঁড়িয়ে তাদের কথা বলে গেছেন বলিষ্ঠ কণ্ঠে। এতে বুঝা যায় এমএন লারমার চিন্তার গভীরতা কতট াগভীর ও দূরদর্শী ছিলেন। তাই এখন সময় এসেছে বর্তমানে সংবিধান সংস্কারে এমএন লারমার স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নে, তবে কতটুকু বাস্তবায়ন হবে জানা নেই। আমাদের প্রত্যাশা সংবিধান সংশোধন হোক বা পুর্নলিখনসহ যাই হোক না কেন সংবিধানে যাতে আদিবাসীদের ভাষা,সংস্কৃতি, কৃষ্টি, জীবনাচার ও আতœপরিচয়ের কথা সাংবিধানিকভাবে প্রতিফলন ঘটে। আমাদের নায্য অধিকার ও আতœমর্যাদা নিয়ে যাতে আমরা বেঁচে থাকতে পারি। তবে আমাদের এসব নায্যতার অধিকার ও দাবী নিয়ে রাজপথে যাতে নামতে বাধ্য করা না হয় তারও আহ্বান জানান বক্তারা। পাশাপাশি বক্তারা এমএন লারমার প্রদর্শিত আদর্শ ধারণ করে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহবান জানান।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের উদ্যোগে জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তি দেবী তংচংগ্যার সভাপতিত্বে অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্য দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য চঞ্চু চাকমা, শিক্ষাবিদ শিশির চাকমা প্রমুখ। আলোচনা সভার শুরুতে এমএন লারমার সংক্ষিপ্ত জীবন সংগ্রাম পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন জেলা কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক উওয়াই নু মারমা। এর আগে বাংলায় ও আদিবাসীদের নিজস্ব মাতৃভাষায় বিভিন্ন কবির ও স্বরচিত বিপ্লবী কবিতা পাঠে অংশ নেয় শিশু-কিশোর থেকে তরুন-তরুনীরা।
উল্লেখ্য, এমএন লারমার ১৯৩৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট মৌজার মহাপুরম(মাওরুম) গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। ১৯৭২ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি গঠন করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন।
--হিলবিডি/সম্পাদনা/সিআর.