স্বামী মারা গেছে পাঁচ বছর আগে। ছেলে-সন্তান নেই। বসতভিটা ছাড়া কোন জায়গা জমিও নেই। পাননা বিধবা ভাতাও। সারাদিন কোমড় তাঁত বুনে যা আয় হয় তা দিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন চলে। খাগড়াছড়ি পানছড়ি উপজেলার চেংগী ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের মধু মঙ্গল পাড়া গ্রামের বিধবা ভাতাহীন মৃত বরুণ কুমার চাকমার স্ত্রী ইন্দ্র লতা চাকমার কোমড় তাঁত পিনন বুনে দিন-যাপনের চিত্র এটি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে কোমড় তাঁত বুনছেন ইন্দ্র লতা চাকমা। তিনি বলেন, ৫ বছর আগে বার্ধক্যজনিত কারণে আমার স্বামী স্বর্গীয় হয়েছেন। আমাদের সাংসারিক জীবনে কোন সন্তান নেই। বসতভিটা ছাড়া আমাদের কোন জায়গা জমি নেই। তাই আয় রোজগারের কোন উপায়ও নেই। পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে প্রতিদিন কোমড় তাঁত পিনন বুনতে হয়। প্রতি কেজি সূতার দাম ৫০০-৭০০টাকা কিনতে হয়। একটি পিনন তৈরীর জন্য কমপক্ষে ৮০০গ্রাম সূতা লাগে। শরীর সুস্থ থাকলে দু’ সপ্তাহে একটি পিনন বুনতে পারলে সূতার খরচ বাদে এক জোড়া পিনন থেকে ২৫০-৩০০টাকা লাভ থাকে। পিননের দাম দাম ভাল হলে একটা পিনন থেকে ৪০০-৫০০টাকাও লাভ থাকে। বর্তমানে একজোড়া পিনন ৬০০-৭০০টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাই পিনন বুনে চলতে এখন খুবই কষ্ট হচ্ছে। প্রতিমাসে মাত্র ২টি পিনন বুনতে পারি। তা দিয়ে খেয়ে না খেয়ে কোন রকম দিন চলে। আমার স্বামী স্বর্গীয় হওয়ার পর থেকে বিধবা কার্ড করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে অনেকবার ধর্না দিয়েছি। কোন লাভ হয়নি। তাই এ ব্যাপারে এখন আর কারো কাছে ধর্না দিই না।
তাঁর প্রতিবেশী সাবেক ইউপি সদস্য রমেশ বিকাশ চাকমা। তিনি জানান,বেচারী খুবই অসহায়। তাঁদের সংসারে কোন ছেলে-সন্তান নেই। নেই জায়গা জমিও। তাই পিনন বুনে আয় ছাড়া কোন উপায়ও নেই। ছেলে মেয়ে, জায়গা জমি না থাকায় প্রতিদিন তাঁকে অনেক সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। বিধবা কার্ড থাকলে কিছুটা হলেও সহয়ক হতো।
স্থানীয় দোকানদার শ্যামল বিকাশ চাকমা বলেন, গ্রামের সবচেয়ে অসহায় বিধবা নারী তিনি। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে তাঁকে কোমড় তাঁত পিনন বুনে জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। বিধবা কার্ড করে দেওয়ার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অনেকবার বলা হয়েছে। কেউ করে দেননি।
সংশি¬ষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শিশু কুমার চাকমা বলেন, আমরা ইউপি ক্ষমতা পাওয়ার পর থেকে নতুন করে বিধবা কার্ড করার অনুমোদন আসেনি। বিধবা ভাতা পাওয়া কোন বিধাব মারা গেলে ওই বিধবার কাডর্টি তাঁর নামে দেওয়া যাবে। নতুবা নতুন করে কার্ড অনুমোদন আসলে তিনি পাবেন। এছাড়া কোন উপায় নেই। নতুন অনুমোদন আসলে অগ্রাধিকার ভিত্তিত্বে তাঁর জন্য বিধবা কার্ড করে দেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে পানছড়ি উপজেলা সমাজসেব অধিদপ্তরের চেংগী ইউনিয়নের দায়িত্বরত মাঠসহকারী হিরো লতা চাকমা বলেন, বিধবা কার্ড করে দেওয়ার দায়িত্ব সংশি¬ষ্ট ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধিদের। তারাই বিধবা নারীদের বিধবা কার্ড করে দেন। তাঁদের অনুরোধে আমরা বিধবা কার্ড করে দিই।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.