রাঙামাটিতে জুমিয়রাদের ঘরে ঘরে জুমের পাকা ধান কাটার উৎসব চলছে। গেল জুন মাসে পাহাড় ধসের কারণে জুম ধানের আবাদি ফসল কিছু পরিমাণের ক্ষয়ক্ষতি হলেও এ বছর জুমের ফলন ভাল হয়েছে।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ বছর প্রাকৃতি পরিবেশ ভাল থাকায় জুম ধানের ফলন ভাল হয়েছে। এ বছর রাঙামাটি জেলায় জুমের ফসলের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ৫০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৫হাজার ৪০হেক্টর জমিতে। হেক্টর প্রতি গড় ফলন হয়েছে ১ দশমিক ২৫ মেট্রিক টন। এবারের সবচেয়ে বেশি জুম চাষ হয়েছে বিলাছড়ি উপজেলায়। এতে আবাদ হয়েছে ১৭ শ হেক্টর জমিতে। এরপরে রয়েছে বাঘাইছড়ি উপজেলায়। যার উৎপাদন হয়েছে ৮শ হেক্টর জমিতে। তবে গত ১৩ জুন পাহাড় ধসের কারণে ৯১০ হেক্টর জুমের আবাদি জমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
জানা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের উচু পাহাড়ের পাদদেশে গাছ-গাছালি কেটে আগুনে পুড়িয়ে জমিতে যে চাষ করা হয় তার নাম হচ্ছে জুম চাষ। জুম চাষ পাহাড়িদের একটি ঐতিহ্যবাহী প্রথা হলেও এটি একটি জীবন জীবিকার উৎসও বটে। সাধারনত জানুয়ারী-ফেরুয়ারী) মাসে পাহাড়ের ঢাল পরিস্কার করে মার্চ-এপ্রিল মাসে আগুনে পুড়িয়ে মাটি উপযুক্ত করা হয়। এর পর এপ্রিল-মে মাসে পাহাড়ে বৃষ্টি শুরুর পূর্বে সুঁচালো দা দিয়ে গর্ত খুঁড়ে একসঙ্গে ধানসহ নানা সব্জির বীজ বপন করা হয় এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে জুমের ধান ঘরে তুলে থাকেন আদিবাসী জুমিয়ারা। জুমের সাধারনত মেরুং, গেলং, রাঙ্গী, কবরক, কামারাং, বিনি, আমেই, তুর্কি, চড়–ই, সুরি, মধুমলতি ও সোনালী চিকন। এসব উৎপাদিত জুমে উৎপাদিত ধান স্বাদ ও গন্ধ আলাদা এবং সুগন্ধি এবং আঠালো হয়। এছাড়া জুম ধানের পাশাপশি অর্থকরী ফসল হিসেবে শাক-সব্জির মধ্যে ভূট্টা, মারপা, মরিচ, বেগুন, শসা, শিম, তিল, ঢেঁড়স, মিষ্টি কুমড়া, ঝিঙে, করলা, পাহাড়ি আলু,শাবারাং (এক প্রকার সুগন্ধিযুক্ত সবব্জি) চাষ করে থাকে। তাছাড়াও জুমিয়ারা আর্থিক লাভের আশায় তূলা, কচু, হলুদ ও সত্রং ফূলের (গাঁদা ফূল) চাষ করে থাকে।
রাঙামাটি সদর উপজেলার মগবান ইউনিয়নের গবাছড়ি এলাকায় জুম চাষী বিজয় চাকমা অলংগিনি চাকমা শান্তিপ্রভা চাকমা জানান, এ বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এ বছর জুমের ফলন ভাল হয়েছে। জুমের ধান পাকায় ঘরে তোলার জন্য ধান কাটছেন। তারা আরো জানান, ফলন ভালো হলেও সারা বছরের খোরাকি হবে না। উৎপাদিত এই ধান দিয়ে ৭ থেকে ৮মাস খোরাকি হতে পারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটির ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক কৃঞ্চ প্রসাদ মল্লিক বলেন, জুম ক্ষেতে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা ছিল এ বছর সেরকম বৃষ্টিúাত হয়েছে। ইতোমধ্যে শতকরা ৯৮ ভাগ জুম ক্ষেতে ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে।
তিনি আরো জানান, এ বছর ৬ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে জুম ধানের আবাদ হয়েছে। তবে জুন মাসের দিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ৯১০ হেক্টর আবাদি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারপরও ৫ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে জুম ধানের আবাদ হয়েছে। এতে স্থানীয় ক্ষেত্রে লক্ষ্য ছিল ১ দশমিক ৩ মেট্রিক টন। ইতোমধ্যে যে জুম ধান কর্তন হয়েছে তা জাতীয় লক্ষ্য মাত্রার কাছাকাছি তা ১ দশমিক ৪ মেট্রিকটন ফলন পাওয়া গেছে।
তিনি জানান, বিশেষ করে পার্বত্য এলাকায় স্থানীয়ভাবে গেলং, কামরাং,মেরুং,রাঙ্গী,কবরকসহ ১২ জাতের ধান চাষবাদ হয়ে থাকে। রাঙামাটিতে প্রাকৃতিক দুযোর্গ হয়ে গেলেও বাস্তবে জুম ধানের ফলন উৎপাদনে খুব একটা তারতম্য ঘটেনি।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.