পাহাড় ধস মূলত মানবসৃষ্ট কারণে ঘটছে। বিস্তারিত তথ্য ও তত্ত্বের ভিত্তিতে গবেষণায় বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত হওয়া গেছে। পাহাড় ধসে জনগণের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করতে হলে দরকার বিজ্ঞান ভিত্তিক পরামর্শ। এখানে স্থায়ীভাবে পাহাড় ধসের দুর্যোগ কীভাবে মোকাবেলা করা যায়- তা বের করে আনতে হবে। মানুষের আবাসস্থল গড়তে হবে পাহাড়ের ভারসাম্য রক্ষা করে।
বুধবার পাহাড় ধসের ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে রাঙামাটি সার্কিট হাউসে পাহাড় ধসের ঘটনায় তদন্তে আসা ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রনালয়ের গঠিত জাতীয় কমিটির অন্যতম সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম বুধবার সাংবাদিকদের এক প্রেস ব্রিফিং-এ এসব মন্তব্য করেন।
কমিটির আহ্বায়ক এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সত্যব্রত সাহা বলেন, গত ১৩ জুন রাঙামাটির ধ্বংস চিত্র একেবারে ভয়াবহ। পাহাড় ও কাপ্তাই লেকের পাড়সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সেসব জায়গায় ভূমিধসের ব্যাপক আঘাত হেনেছে। যা দেখে আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি যে পুরো রাঙাামাটি শহর মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এখানে শুধু জনবসতির জন্য মাটিকাটা পাহাড় নয়, প্রাকৃতিকভাবে রক্ষিত অক্ষত পাহাড়ও ধস হয়েছে। তবে মানবসৃষ্ট ক্ষতিকারক কর্মকান্ডই এর মূল কারণ বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এরপরও যথেষ্ট গবেষণা ও জরিপের দরকার।
এর আগে জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সত্যব্রত সাহার নেতৃত্বে রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনাস্থল সচক্ষে দেখেন। এসময় কমিটির সদস্যরা আশ্রয় কেন্দ্রসমূহ পরিদর্শন ও ক্ষতিগ্রস্থদের সাথে কথাবার্তা বলেন। পরিদর্শনের সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান তরুণ কান্তি ঘোষ, সদস্য (পরিকল্পনা) নুরুল আলমসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ২৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সদস্যরা রাঙামাটিতে পৌছার পর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলার উর্দ্ধতন কর্মকর্তা ও স্থানীয় সুশীল সমাজের সাথে বিশেষ সভা করেন।
জানা যায়, পাহাড় ধসের ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন ভূ-তত্ত্ব ও পরিবেশবিদ, বিশ্লেষক, গবেষকসহ স্থানীয় অভিজ্ঞদের নিয়ে একটি ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ দল গঠন করা হয়। ‘ভূমিধসের কারণ চিহ্নিতকরণ ও ভবিষ্যতে করণীয় নির্ধারণ’ শীর্ষক ২৭ সদস্যের জাতীয় মূল কমিটির সঙ্গে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারসহ রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক, স্থানীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি, পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রতিনিধি ও মেয়রদের কো-অপট করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা স্থানীয়দের মতামতসহ ব্যাপক গবেষণা ও জরিপ চালিয়ে ওই পাঁচ জেলায় পাহাড় ও ভূমিধসের কারণ চিহ্নিত করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করবে। প্রতিবেদনে ভবিষ্যতে করণীয় বিষয়ে সুপারিশ দিতে হবে। এরপর প্রতিবেদনটি প্রথম কার্যদিবসের ১৫ দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বরাবর দাখিল করার কথা রয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও কমিটির আহবায়ক সত্যব্রত সাহা সাংবাদিকের আরো বলেন, পাহাড় ভাঙন আরও হবে। হঠাৎ তা করা যাবে না। মোকাবেলায় আমাদের প্রথম সুপারিশ হবে যারা ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে তাদের প্রাণ বাঁচাতে দ্রুত নিরাপদে সরিয়ে নেয়া। পাহাড় ধসের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য স্থায়ী সমাধানে মানুষকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসে সম্পূর্ণ বিধিনিষেধ আরোপ করতে হবে। যারা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করছে তাদেরকে উচ্ছেদ করতে হবে। এজন্য আইনের কড়াকড়িসহ নতুন করে আইন প্রণয়নেরও দরকার রয়েছে।
এ মুহুর্তে হঠাৎ করে যেমন পাহাড় ধস ঠেকানো সম্ভব নয়, তেমনি হঠাৎ পাহাড় কাটাসহ পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসও বন্ধ করা যাবে না। এজন্য দরকার স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। আর সেটিকে মাথায় রেখে বিস্তারিত গবেষণা ও জরিপ শেষে পাহাড়ধস মোকাবেলায় স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ পেশ করা হবে।
তিনি প্রকৃতির ওপর নির্বিচার অত্যাচার বন্ধে কড়া আইন প্রয়োগসহ অনুমতি ছাড়া কোথাও পাহাড় কাটা, বন উজাড়, যেখানে সেখানে বসতবাড়ি বা স্থাপনা নির্মাণ করে বাস করতেনা দেয়ার মন্তব্য করেন।
উল্লেখ্য,গেল ১৩ জুন ভারী বর্ষনে রাঙামাটি শহরের ভেদভেদীর যুব উন্নয়ন বোর্ড এলাকা,মুসলিম পাড়া.শিমুলতলী এলাকা,সাপছড়ি,মগবান,বালুখালী এলাকায় এবং জুরাছড়ি,কাপ্তাই,কাউখালী ও বিলাইছড়ি এলাকায় ৫ সেনা সদস্যসহ ১২০ জনের মৃত্যূ হয়। পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সংখ্যা ১৮ হাজার ৫৫৮ পরিবার। এর মধ্যে সম্পুর্ণ বাড়ী বিধস্ত হয় ১ হাজার ২৩১ পরিবার।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.