উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত মাইলষ্টোন স্কুল এন্ড কলেজের সপ্তম শ্রেনীর ছাত্র উক্য সাইং মারমার মরদেহ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গাহালিয়া ইউনিয়নের কলেজ পাড়ার নিজ বাড়ীতে আনা হয়েছে। এসময় উক্য সাইং মারমার মাবাবা,স্বজন ও পাড়াবাসীদের কান্নায় আকাশ ভারী উঠে।
সোমবার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয় বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান। এতে গুরুতর দগ্ধ অনেক শিক্ষার্থীর মতো উক্য সাইং মারমাকেও রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউতে মঙ্গলবার মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটায় মারা যায় সে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঢাকা থেকে রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়ার কলেজ পাড়ার নিজ বাড়ীতে নিহত মাইলষ্টোন স্কুল এন্ড কলেজের ইংরেজী বিভাগের সপ্তম শ্রেনীর মেধাবী ছাত্র উক্যছাইং মারমার মরদেহ পৌছালে এমন হৃদয় বিদারক দৃশ্য অতারনা হয়। এসময় আত্বীয় ও পাড়াবাসীদের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে।
এসময় উক্যছাইং এর মা তেজিপ্রু মারমা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। বলেন, আমার একমাত্র বুকের ধন একলা মরলো কেন? এক সাথে আমরা মরলাম না কেন? হাসপাতালে জ্ঞান থাকার সময় মাবাবাকে দেখতে চেয়েছিল আমার বুকের ধন, কিন্তু আমরা হাসপাতালে পৌছার আগে সে আমাদের ছেড়ে চলে গেলাে। আমার বাবা বাবা বলতে বলতে মূর্ছা যান মা তেজিপ্রু মারমা। এসময় তাকে স্বজনরা পানি ছিটিয়ে তার জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করেন। উক্যসাইং এর বাবা উসাই মং মারমা ও মা তেজিপ্রু মারমা দুজনই স্কুল শিক্ষক। বাবা বাঙ্গালহালিয়া আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আর মা বান্দরবানের রুমা উপজেলা ক্যয়কতেং পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
পাড়াবাসী কাঞ্চন মালা তংচংগ্যা, ক্যওসাচিং মারমা,সুযেক্যচিং ক্যসউ মারমাসহ অনেকে বলেন, সন্তানকে নিয়ে মাবাবার আগামী দিনের যে স্বপ্ন ছিল তা এক নিমিষেই এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় সেই স্বপ্ন সবকিছুই থেমে গেছে। বাবার কত বড় স্বপ্ন ছিল সেনা অফিসার হবে ।কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সময়টুকু পর্যন্ত সে পেলেন না। মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে তার স্বপ্নের অকাল মৃত্যু ঘটলো। তারা আরো বলেন, শিক্ষক বাবা উসাইমং মারমা এক বুক স্বপ্ন আর আশা নিয়ে পাহাড়ি জনপদ থেকে শিক্ষার আলো নিতে ছেলেকে পাঠিয়েছিলেন রাজধানীতে। কিন্তু সেই শিক্ষক বাবার স্বপ্ন এখন কেবল কান্না আর শোকের গল্প। এ ঘটনায় পুরো দেশ যেভাবে কাদঁছে তেমনি রাঙামাটি তথা পুরো রাজস্থলীবাসীও কাদঁছেন।
কান্নাজনিত কন্ঠে ক্যউসাইং দাদা কংহ্লাপ্রু মারমা বলেন, তার নাতি তাকে খুব ভালো বাসতো। সে অত্যন্ত মেধাবি ছিল। একমাত্র নাতিকে হারিয়ে আমরা কি নিয়ে বাচবেন কিছুই বলতে পারছি না বলেন তিনি।
উক্য সাইং পিসি হ্লামাচিং মারমা জানান, গত আষাঢ়ী পূর্নিমার দিনে মোবাইলে উক্যসাইং সাথে কথা হয়েছিল। তার সাথেই এটাই শেষ কথা হবে ভাবতে পারিনি। উ ভাইয়ের স্বপ্ন ছিল তার ছেলেকে ক্যাডেট স্কুলে পড়াবে এজন্য ঢাকার মিরপুরে একটি কোচিং সেন্টারেও এক বছর কোচিং করায়।
তবে তার দুৃর্ভাগ্য ক্যাডেট স্কুলে ভর্তি পরীক্ষায় ঠিকতে পারেনি। তাই এ বছর তাকে মাইলষ্টোন স্কুল এন্ড কলেজের সপ্তম শ্রেনীতে ভর্তি করা হয়। সে স্কুলের হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করতো। তিনি আক্ষেপ করে বলেন তার ভাইয়ের ছেলে উক্যসাইং বোধয় খুবই ক্ষন জন্মা একজন। এতো অল্প বয়সে তাকে যে এভাবে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় হারাবো আমরা কোন দিনই কল্পনা করতে পারিনি।
উক্যসাইং এর বাবা উসাই মং জানান, বুধবার তিন টায় বাঙালহালিয়ায় শশ্মাার তার ছেলেকে শেষ বিদায় জানানো হবে। তার ছেলের মৃত্যু মেনে না নিলেও মেনে নিতে হয়েছে জানিয়ে আরো বলেন, তার ছেলের সাথে সর্বশেষ রোববার মোবাইলে কথা হয়েছিল, তখন বিকাশে তাকে পাচ টাকা পাঠিয়েছি। সোমবার বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি মাইলস্টোন স্কুলে আগুন লেগেছে। পরে স্কুল কর্তৃপক্ষকে কল করেও তাদের পায়। বিকালে তাকে জানালো তার ছেলে হাসপাতালে অসুস্হ তাকে ঢাকায় যেতে হবে। খবর পেয়ে আমরা রওনা দিই কিন্তু হাসপাতালে পৌছার আগে তার ছেলে না ফেয়ার দেশে গেছে। তিনি সরকারের কাছে দাবী জানান, ঢাকার দিন দিন বহুতল ভবন গড়ে উঠছে। এ অবস্থায় বিমানের আর কোন প্রশিক্ষন দেওয়া না হয়।বাঙালহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আদোমং মারমা জানান, উক্যসাইং তার সম্পর্কে আত্বীয়। সে মেধাবী ছাত্র ছিল, আমরা সবাই আদর স্নেহ করতাম। এ মর্মান্তিক ঘটনায় আমরা সবাই শোকাহত ও মর্মাহত।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.