পাবত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ১৭ তম বর্ষ পূর্তি আজ। প্রায় দেড় যুগ আগে সম্পাদিত যে চুক্তি পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান নিশ্চিত করার পাশাপাশি দিনের পর দিনএ অঞ্চলের মানুষের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারতো তার পরিবর্তে ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে হতাশা-ক্ষোভ, বিশ্বাস-অবিশ্বাস এবং অবৈধ অস্ত্রের অঘোষিত ঝনঝনানি। পার্বত্য মানুষেরা এখন বসবাস করছেন এক বিপদ সংকুল অবস্থার মধ্যে। চুক্তি সম্পাদনকারী দুপক্ষ অর্থাৎ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি যে হারে একে অপরকে দুষছে তাতে মনে হয় অনতিবিলম্বে এ অবস্থার উন্নতি ঘটনানো না গেলে অচিরেই পার্বত্যাঞ্চল আবারও অশান্ত হয়ে উঠবে যা পূর্বেকার অবস্থা চাইতেও খারাপের দিকে মোড় নিতে পারে। ইতোমধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান সন্তু লারমা চুক্তির ১৭তম বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সন্মেলনে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন। তিনি চুক্তি বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ৩০ এপ্রিল সময় বেঁধে দিয়ে বলেছেন, এ সময়সীমার মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় দৃশ্যমান অগ্রগ্রতি না হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সরকারের বিরুদ্ধে ১ মে থেকে অসহযোগ আন্দোলনের পথে পা বাড়াবে। পার্বত্য চুক্তি পরিপন্থী ও জুম্ম স্বার্থ বিরোধী সকল কার্যক্রম বন্ধ করা এবং চুক্তি বাস্তবায়নের কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতে বিদ্যমান পরিস্থিতি দায়ী বলে অসহযোগ আন্দোলন শান্তিপূর্ণ হবে না বরংশ অশান্তিপূর্ণ হবে বলেও ঘোষনা করেছেন। অন্যদিকে সরকারের পক্ষের আওয়ামীলীগ নেতা ও পার্বত্য মন্ত্রনালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার গতকাল সোমবার রাঙামাটিতে চুক্তির বর্ষপূতি উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সন্মেলনে বলেছেন, পার্বত্য চুক্তির অধিকাংশ ধারা সরকার বাস্তবায়ন করলেও জনসংহতি সমিতি’র অসহযোগিতার কারণে চুক্তির অনেক ধারাই এখনো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। পার্বত্য চুক্তি নিয়ে জনসংহতি সমিতি ক্রমাগত সত্য গোপন করে অসত্য তথ্য দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে চলেছে। তিনি সন্তু লারমার অসহযোগ আন্দোলনকে রাজপথে মোকাবেলা করা হবে বলে পাল্টা হুশিয়ারী দিয়ে বলেছেন অসহযোগ আন্দোলনের নামে সহিংসতা করে পাহাড়ে অশান্তি আর অরাজগতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তা প্রতিহত করবে। পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেছেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তির অধিকাংশ ধারা পূরণ হয়েছে। বাদবাকী ধারাগুলো বর্তমান সরকারের মেয়াদকালেই বাস্তবায়ন করা হবে। চুক্তি বাস্তবায়নে এ সরকার পুরোপুরি আন্তরিক। এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ১৭ তম বর্ষ পদার্পন উপলক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার বিভাগ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে প্রচারপত্র বের করেছে। এতে বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের লক্ষেই ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর এই ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসার স্বপ্ন দেখেছিল পার্বত্যবাসী। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের মাধ্যমে বিশেষ শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে এতদাঞ্চলের মানুষের শাসনতান্ত্রিক অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা পাবে। শাসনতান্ত্রিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এ অঞ্চলের পাহাড়ি-বাঙালি স্থায়ী অধিবাসীরা নিজেদের উন্নয়ন নিজেরাই নির্ধারণ করার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা তৈরি করতে সক্ষম হবে। কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষরের পর ১৭ বছরেও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণে পার্বত্যবাসীর সেই শাসনতান্ত্রিক অংশীদারিত্ব যেমন নিশ্চিত হয়নি, তেমনি অর্জিত হয়নি পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সেই কাংখিত রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ন সমাধান। এতে আরও বলা হয় সরকার একদিকে যেমন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়নে তালবাহানা করে চলেছে। অন্যদিকে তেমনি চুক্তি বাস্তবায়ন বিষয়ে দেশে-বিদেশে অসত্য, বিভ্রান্তিমূলক ও মনগড়া বক্তব্য প্রচার করে আসছে। প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের অনেক মন্ত্রী-আমলারা প্রচার করে আসছেন যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মোট ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি ধারা ইতিমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে এবং অবশিষ্ট ধারাগুলোর মধ্যে ১৫টি ধারার আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে এবং বাকি ৯টি ধারার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বস্তুত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন বিষয়ে সরকারের উক্ত বক্তব্য বা প্রতিবেদন সর্বাংশে সত্য নয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মূল্যায়নে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সর্বমোট ৭২টি ধারার মধ্যে মাত্র ২৫টি বাস্তবায়িত হয়েছে। আর অবাস্তবায়িত রয়েছে ৩৪টি ধারা এবং আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে ১৩টি ধারা। তার অর্থ হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দুই-তৃতীয়াংশ ধারা এখনো অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়েছে। প্রচার পত্রে আরও বলা হয়, সরকার কেবল চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বছরের পর বছর ধরে অবাস্তবায়িত অবস্থায় রেখে দিয়ে কিংবা চুক্তি বাস্তবায়ন সম্পর্কে অসত্য, বিভ্রান্তিমূলক ও মনগড়া তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে ক্ষান্ত থাকেনি। অধিকন্তু চুক্তি বাস্তবায়নের দোহাই দিয়ে চুক্তি পরিপন্থী ও জুম্মস্বার্থ বিরোধী আইন প্রণয়ন ও কার্যক্রম হাতে নিয়ে চলেছে। চুক্তির অবাস্তবায়িত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ না নিয়ে সরকার উল্টো পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি লঙ্ঘন করে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে বা পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রযোজ্য কোন আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের সাথে আলোচনাক্রমে এবং পরামর্শ করে আইন প্রণয়নের যে বিধান রয়েছে সেই আইনী বিধিব্যবস্থাকে পদদলিত করে একতরফাভাবে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন সংশোধন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আইন প্রণয়ন এবং রাঙামাটিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এভাবেই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী ও পার্বত্যাবাসীর আশা-আকাক্সক্ষার বিপরীতে এই অগণতান্ত্রিক ও জনবিরোধী আইন প্রণয়ন ও কার্যক্রম গ্রহণের ফলে, সর্বোপরি আদিবাসী জুম্মদের অধিকার ও অস্তিত্বকে বিপন্নতার দিকে ঠেলে দেয়া হলে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে এভাবে সরকারের তালবাহানার নীতি অব্যাহত থাকলে তার জন্য সরকারকেই চরম খেরাসত দিতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক উল্লেখ করে প্রচার পত্রে বলা হয়, সরকারের চুক্তি বাস্তবায়নে অব্যাহত গড়িমসি ও কায়েমী স্বার্থবাদীদের ষড়যন্ত্রের কারণে রাষ্ট্রযন্ত্রে বা রাষ্ট্রযন্ত্রের বাইরে ঘাপতি মেরে থাকা সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠী এবং উগ্র জাতীয়তবাদী শক্তি তাদের অপতৎপরতা বৃদ্ধি করেছে। চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণভাবে নস্যাৎ করার লক্ষ্যে এসব অপশক্তি তিন পার্বত্য জেলায় সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী জঙ্গী তৎপরতা জোরদার করেছে। প্রচারপত্রে অভিযোগ করা হয়, সম্প্রতি বিজিবি, সেনাবাহিনী, বন বিভাগ, বহিরাগত প্রভাবশালী ব্যক্তি, সেটেলার বাঙালি কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন পার্বত্য জেলায় জুম্মদের আবাসভূমি ও ধর্মীয় স্থানসহ রেকর্ডীয় ও ভোগদখলীয় ভূমি বেদখল এবং স্বভূমি থেকে তাদেরকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বেসরকারি নানা উদ্যোগের পাশাপাশি বিশেষ করে সরকারি বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে এই বেদখলের প্রক্রিয়া জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে সেনাক্যাম্প স্থাপন ও সম্প্রসারণের পাশাপাশি সম্প্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে যত্রতত্র বিজিবি ক্যাম্প স্থাপন ও সম্প্রসারণের তৎপরতা। এর সাথে পাল্লা দিয়ে আদিবাসী জুম্মদের আবাসভূমি, জুমভূমি, ভোগদখলীয় ও বিচরণভূমিতে অহরহ গড়ে তোলা হচ্ছে বিভিন্ন পর্যটন স্পট, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট, বিলাসবহুল মোটেল ইত্যাদি নানা বিনোদন ও বাণিজ্য কেন্দ্র। এতে অনেক আদিবাসী জুম্ম পরিবার হয় ইতোমধ্যে নিজের বাস্তুভিটা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে, নতুবা অনেকেই উচ্ছেদের মুখে রয়েছে। প্রকাশিত প্রচার পত্রে বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। সরকারের চুক্তি বাস্তবায়নে অব্যাহত গড়িমসি ও কায়েমী স্বার্থবাদীদের ষড়যন্ত্রের কারণে রাষ্ট্রযন্ত্রে বা রাষ্ট্রযন্ত্রের বাইরে ঘাপতি মেরে থাকা সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠী এবং উগ্র জাতীয়তবাদী শক্তি তাদের অপতৎপরতা বৃদ্ধি করেছে। চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণভাবে নস্যাৎ করার লক্ষ্যে এসব অপশক্তি তিন পার্বত্য জেলায় সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী জঙ্গী তৎপরতা জোরদার করেছে। তারা পার্বত্য চট্টগ্রামকে পশ্চাদভূমি হিসেবে ব্যবহার করে সারাদেশে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক জঙ্গী তৎপরতা বিস্তৃত করে চলেছে। তারা সাম্প্রদায়িক জিগির তুলে জুম্মদের উপর একের পর এক সাম্প্রদায়িক হামলা সংঘটিত করে চলেছে। তারই ধারাবাহিকতায় নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসনের ছত্রছায়ায় এ সরকারের আমলে অন্তত ৭টি সাম্প্রদায়িক হামলা সংঘটিত হয়েছে। গত ৩ আগস্ট ২০১৩ তারিখে সংঘটিত মাটিরাঙ্গা-তাইন্দং-এর সাম্প্রদায়িক হামলা হলো তার অন্যতম একটি ঘটনা। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৫ জুলাই ২০১৪ রাঙ্গামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক কমিশনের সফররত সদস্যদের উপর সেটেলার বাঙালিদের উগ্র সাম্প্রদায়িক সংগঠনের সন্ত্রাসী কর্তৃক নৃশংস হামলা করা হয়েছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে আদিবাসী নারীর উপর সহিংসতার মাত্রা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। অতি সম্প্রতি সেপ্টেম্বর-নভেম্বর তিন মাসে পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং সমতল অঞ্চলে কমপক্ষে ১৬ জন আদিবাসী নারী যৌন ও শারীরিক সহিংসতা ও অপহরণের শিকার হয়েছে। প্রচার পত্রে আরও অভিযোগ করা হয় যে, প্রশাসনের একটি বিশেষ মহলের ছত্রছায়ায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী ইউপিডিএফ নামধারী সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও সংস্কারপন্থী নামে খ্যাত বিপথগামী গোষ্ঠী অবাধে চাঁদাবাজি, অপহরণ, হত্যা ইত্যাদি সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর এযাবৎ এই চুক্তি বিরোধী ইউপিডিএফ ও সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসীরা জনসংহতি সমিতির ৯৩ জন সদস্যসহ তিন শতাধিক লোককে খুন ও অসংখ্য নিরীহ লোককে অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। সরকারের নির্লিপ্ততা তথা প্রকারান্তরে প্রত্যক্ষ মদদদানের কারণে সংস্কারপন্থী-ইউপিডিএফ এভাবে একের পর এক সশস্ত্র সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে। উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামের দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশী সময় ধরে চলা সশস্ত্র সংঘাত অবসানের লক্ষ্যে তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে ১৯৯৭ সালের এই দিনে(২ডিসেম্বর) ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সই হয়। চুক্তি শর্ত মোতাবেক ৯৮সালের ১০ফের্রুয়ারী থেকে ২৯ মার্চ পর্ষন্ত জনসংহতি সমিতির প্রায় দুই হাজার সদস্য(তৎকালীন সামরিক শাখার শান্তি বাহিনী) মোট চার দফায় অস্ত্র জমাদানের মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন।
১৭ বছরে পক্ষ-বিপক্ষের সংঘর্ষে নিহত কমপক্ষে ৬শ জন নিহত
১৯৯৭ সালে সম্পাদিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির স্বাক্ষরের পর চুক্তির পক্ষ-বিপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৬শ জনের অধিক নিহত হয়েছে, অপহৃত হয়েছে দুই হাজারের অধিক এবং আহত হয়েছে দেড় হাজারের অধিক। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭বছরে প্রতিপক্ষ ইউনাইটেড পিলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের(ইউপিডিএফ) হাতে জনসংহতি সমিতির সদস্য ও সমর্থক নিহত হয়েছে কমপক্ষে তিশজন, অপরহরণ ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এক হাজারের অধিক। প্রতিপক্ষের হাতে ইউপিডিএফের ২শ ৬৪ জন সদস্য ও সমর্থক নিহত, অপহরন হয়েছে প্রায় এক হাজারের অধিক। সুধাসিন্ধু ও রুপায়নের নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) ৩৫জন নেতাকর্মী ও সমর্থকের প্রাণহানী ঘটেছে।
পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে প্রতিক্রিয়া
জেলা আইনজীবি সমিতির সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট মিহির বরণ চাকমা পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে বলেন, আওয়ামীলীগের নির্বাচনী ইস্তেহারে চুক্তি বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় পাহাড়ীরা হতাশাগ্রস্থ। সরকারের উচিত চুক্তি বাস্তবায়ন করা।বিশিষ্ট আইনজীবি জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা বলেন, সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার, শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স গঠনসহ কয়েকটি বিষয় ছাড়া এখনো কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। এখনো ভূমি বিরোধ ও অভ্যন্তরীণ উদ্ধাস্তু সমস্যাসহ বেশ কয়েকটি সমস্যা সমাধান হয়নি। তিনি বলেন সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। সরকরের মধ্যে উদাসীনতার লক্ষ্য করা যচ্ছে। যদি সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম ইস্যূকে জরুরী ইস্যূ হিসেবে মনে করতো তাহলে এতদিন চুক্তি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতো। ইউপিডিএফের মূখপাত্র মাইকেল চাকমা বলেন, গত ১৭ বছর ধরে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি তথা সন্তু লারমা একই কথা বলে আসছেন। এর আগেও সশস্ত্র সংগ্রাম, মহা সমাবেশে হুমকি দিলেও আন্দোলন তো দূরের কিছুই দাবি আদায় করতে পারেননি। তাই আমরা মনে করি চুক্তির বর্ষ পূর্তি এলেই সন্তু লারমাদের হাঁকডাক বেড়ে যায়। অর্থাৎ সাধারন মানুষকে বোকা বানিয়ে আন্ধকারে রাখতে সন্তু লারমার এ একটা রাজনৈতিক ভাওতাবাজি ছাড়া আর কিছুই না। তিনি আরও বলেন, সন্তু লারমা ১ মে থেকে চুক্তি বাস্তবায়নে অসহযোগ আন্দোলনে ঘোষনা দিলেও তা তিনি পরিস্কার করেননি। কি নিয়ে আন্দোলন করবেন তা তিনি পরিস্কার করুক। তাই সন্তু লারমা এ অসহযোগ আন্দোলনের কথাটি এটাও একটা ভাওতাবাজি। বরং এসব ভাওতাবাজি না করে সন্তু লারমা আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে রাজপথে আন্দোলনে নামুক। জনগণ অবশ্যই তাকে সমর্থন দেবে। জনসংহতি সমিতি সহ-তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা বলেন, সরকার শুধু চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়টি মূখে বলে যাচ্ছে। কিন্তু কার্যকারী ক্ষেত্রে সেরকম বাস্তব ফলাফল আমরা দেখতে পাচ্ছি না। সরকার যে চুক্তির ৭২ ধারা ৪৮টি ধারা বাস্তবায়নের কথা বলছে তা বাস্তব যুক্তিসঙ্গত নয়। কারণ চুক্তির এমন কয়েকটি মৌলিক ধারা রয়েছে যেগুলো বাস্তবায়িত না হলে চুক্তির ৮০-৯০ বাস্তবায়নের কোন তাৎপর্য থাকে না। যেমন পার্বত্য ভুমি কমিশন, অভ্যন্তরীন উদ্বাস্তুদের পুর্ণবান, স্থায়ী বাসিন্দাদের ভোটার তালিকা প্রনয়ন জেলা পরিষদগুলোর নির্বাচন ইত্যাদি ধারা রয়েছে। তাই এসব ধারা বাস্তবায়িত না হলে চুক্তির প্রকৃত বাস্তবায়ন নির্নয় করা যায় না। জাতীয় মানবধিকার কমিশনের সদস্য নিরুপা দেওয়ান বলেন,পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের পর আমরা পার্বত্যাঞ্চলে শান্তিপুর্ন সমাধান আশা করেছিলাম সেই আশাটা এখনো পূরিপুর্ন হয়নি। বিভিন্ন কারণে চুক্তি বাস্তবায়নে বিলম্বিত হচ্ছে। অনেকটা সরকারের চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে দীর্ঘসূত্রিকার কারণে পার্বত্যবাসীদের মনে হতাশার কাজ করছে। তিন পার্বত্য জেলা সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ ফিরোজা বেগম চিনু বলেন, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তির স্বাক্ষরের পর থেকে আওয়ামীলীগ সরকারের তিন মেয়াদে চুক্তির সিংহ ভাগ বাস্তবায়িত হয়েছে, আরও বাকী অংশগুলো বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। বর্তমান সরকার চুক্তি বাস্তবায়নের অত্যন্ত আন্তরিক। চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন দেশনেত্রী শেখ হাসিনা সরকার সেহেতু তিনি চুক্তির বাকী অংশগুলো অন্তে অস্তে বাস্তবযন করছে। আমি আশাকরি বর্তমান সরকারের মেয়াদেই পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সম্পুর্ন শেষ হবে। এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম ১৭ তম বর্ষ পূর্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) রাঙামাটিতে জনসমাবেশের আয়োজন করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির জেলা শাখার উদ্যোগে জিননেসিয়াম প্রাঙ্গনে জনসমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক প্রনতি বিকাশ চাকমা।
¬ –হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.