পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা(সন্তু লারমা) বলেছেন, পাহাড়ে জুম্ম জাতি গোষ্ঠির নিরাপদ জীবন ও সংস্কৃতি কৃষ্টি রক্ষায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বারিত হলেও ২৫ বছরেও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি। নানাবিধ প্রতিকুল পরিবেশে পার্বত্য অঞ্চলের জুম্ম জাতিগোষ্ঠিকে অস্বস্তিকর জীবন অতিবাহিত করতে হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, পাহাড়ের বসবাসরত ১৫টি জাতিগোষ্ঠির মানুষ তাদের নিজস্ব ভাষা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি নিয়ে স্বাচ্ছান্দে জীবন ধারণ করতে চায়। পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী জুম্ম সংস্কৃতি তথা জীবন ধারা সংরক্ষন ও বিকশিত করতে চাইলে অধিকারের কথা ভাবতে হবে। আমাদের অধিকারকে সন্মিনিত রেখে জীবনধারাকে উজ্জীবিত ও সংরক্ষণ করতে হবে। তিনি জুম্মদের সংস্কৃতি সংরক্ষণ, বিকাশ ও অধিকার নিশ্চিতের লক্ষে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে আন্দোলন জোরদার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
রোববার রাঙামাটিতে পাহাড়ী আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী বিজু, সাংগ্রাই,বৈসুক, বিহু, বিষু ও সাংক্রান উৎসবে র্যালী পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
জুম্ম সংস্কৃতি ঐতিহ্য সংরক্ষণ, বিকাশ ও অধিকার নিশ্চিত করণে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসুন- শ্লোগানে রাঙামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গণে আয়োজিত আলোচনা সভায় ঐতিহ্যবাহী বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিহু, বিষু ও সাংক্রান উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি প্রতিকৃতি রঞ্জন চাকমার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী। এতে অন্যর মধ্যে বক্তব্যে দেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ঝর্ণা চাকমা, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির রাঙামাটির সাধারন সম্পাদক পঞ্চানন ভট্টাচার্য্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম হেডম্যান এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক শান্তি বিজয় চাকমা, জ্যোতি পাংখোয়া, সাগর ত্রিপুরা নান্ট, ধনঞ্জয় তংচঙ্গ্যা প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্যে দেন বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিহু, বিষু ও সাংক্রান উৎসব উদযাপন কমিটির সাধারন সম্পাদক ইন্টু মনি তালুকদার। এর আগে পৌর প্রাঙ্গণে বেলুন উড়িয়ে উৎসবের সুচনা করা হয়। এর পর ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী গরোয়া নত্যৃ পরিবেশন করা হয়। আলোচনা শেষে চাকমা, ত্রিপুরা, মারমা, তংচঙ্গ্যা, পাংখোয়া, অহমিয়া, ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠিসহ সম্প্রদায়ের নারী পুরুষের অংশগ্রহনে পৌর প্রাঙ্গণ থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালী বের করা হয়। র্যালিটি শহরের প্রধান প্রদক্ষিণ করে শিল্পকলা একাডেমী চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চুক্তি দর্ঘি দুই যুগ অতিবাহিত হলেও চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে এখানকার আদিবাসী জুম্মরা তাদের ভাষা, সাংস্কৃতি ও রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিহু, বিষু ও সাংক্রান উৎসব যেভাবে আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপন করার কথা ছিল সেভাবে উদযাপন করতে পারছে না।
সন্তু লারমা তার বক্তব্যে আরো বলেন, আদিবাসী জুম্মদের প্রধান উৎসব বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিহু, বিষু ও সাংক্রানকে আমরা নিজ নিজ ভাষায় নানান নামে প্রকাশ করার চেষ্টা করি। কিন্তু যে উৎসব পালন করতে যায় তার বাস্তবতার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগনের সংস্কৃতি তথা তাদের জীবন ধারা হারিয়ে যেতে বসেছে নানাবিধ কারণে।
উল্লেখ্য, আগামী ১২ এপ্রিল থেকে তিন দিন ব্যাপী পার্বত্য চট্টগ্রামের (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) ১৫টি পাহাড়ি জাতিসত্তাদের ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক উৎসব হচ্ছে বিজু-সাংগ্রাইং-বৈসুক- বিষু-বিহু-সাংক্রান উৎসব শুরু হবে। এ উৎসবকে ঘিরে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাড়ায়-মহল্লায় উৎসবের আমেজ বইছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.