হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী কল্পনা চাকমার অপহরণের মামলা আদালতে খারিজের প্রতিবাদে ও চিহিৃতঅপহরণকারীদের বিচারের দাবীতে বুধবার রাঙামাটিতেন বিক্ষোভ-সমাবেশ করা হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি ও হিল ইউমেন্স ফেডারেশনের উদ্যোগে জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বরের সামনে বিক্ষোভ-সমাবেশ করা হয়। এতে পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির জেলা কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক আশিকা চাকমার সভাপতিত্বে অন্যান্যর মধ্যে দেন কল্পনা চাকমার মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী জুয়েল দেওয়ান,আইনজীবী সুম্মিতা চাকমা ও এমএন লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিজয় কেতন চাকমা,পিসিপির জেলা শাখার সভাপতি জিকো চাকমা প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য এনু মারমা। লিখিত বিবৃতি পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সমাবেশের কেন্দ্রীয় সদস্য ভদ্রা দেবী তঞ্চঙ্গ্যা। এর আগে একটি বিক্ষোভ-মিছিল জেএসএসের জেলা শাখার কার্যালয় থেকে শুরু করে বনরুপাএলাকা ঘুরে জেলা প্রশাসন চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশ শেষে অবিলম্বে কল্পনা চাকমা অপহরণ ঘটনার উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত ও যথাযথ বিচার নিশ্চিত, জুম্ম নারী সমাজের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার নিশ্চিতকল্পে এবং পার্বত্য সমাধানের লক্ষ্যে অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নসহ তিন দফা দাবী সম্বলিত দাবী নিয়ে একটি প্রতিনিধি দল জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন।
সমাবেশে বিজয় কেতন চাকমা বলেন, কল্পনা চাকমা অপহরণের ঘটনা ২৮ বছর হলো। রাষ্ট্র তার কোনো হদিস দিতে পারেনি। আবার কল্পনা চাকমার অপহরণ মামলাটিও নিম্ন আদালতে খারিজ করে দেওয়া হলো। স্পষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও সুষ্ঠু বিচার হয়নি। এটা দেশের বিচার ব্যবস্থার জন্য চরম লজ্জার।
আাইনজীবী জুয়েল দেওয়ান বলেন, পার্বত্য চুক্তির পর আমরা আশা করেছিলাম পার্বত্য চট্টগ্রামে মানুষের অধিকার নিশ্চিত হবে। কল্পনা চাকমার অপহরণের বিচার হবে। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে রাষ্ট্র সমস্যাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা জারি রেখেছে। কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলাটি নিম্ন আদালতে খারিজ করে দেওয়া হলো। কিন্তু আমরা দমে যাবো না। ন্যায় বিচারের জন্য যেখানে যা দরকার আমরা সেটা করবো।
আইনজীবী সুস্মিতা চাকমা বলেন, ২৮ বছর পরে আমরা শুনতে পাচ্ছি কল্পনা চাকমাকে কেউ অপহরণ করেনি। কল্পনা চাকমার অপহরণে কেউ দোষী নয়। এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে! একজন কল্পনা চাকমা তার মা, তার ভাইয়ের যে আকুতি, শতশত জনগণের যে চাওয়া তা আজকে পূরণ হচ্ছে না।২৮ বছর পর এসে আমরা শুনতে পাচ্ছি কল্পনা চাকমা অপহৃত হয়েছিলেন সত্যি কিন্তু সেখানে কে জড়িত, কারা করেছে সেটা তদন্তকারী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে অর্থাৎ রাষ্ট্র সেখানে অপরাধীদের খোঁজ পাচ্ছে না। রাষ্ট্রের চোখে ঠুলি পড়ে আছে, রাষ্ট্র দেখে না, রাষ্ট্র অন্ধ হয়ে গেছে। এটা কি স্বাধীন বাংলাদেশ? এটা বিচারহীনতার সংস্কৃতি। পার্বত্য চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণে এ সমস্ত ঘটনাগুলো আরও বেড়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন প্রথম প্রহরে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা লাইল্যা ঘোনা বাড়ী থেকে কল্পনা চাকমা অপহৃত হন। পরদিন বাঘাইছড়ি থানায় তার বড় ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা চিহিৃত অপহরণকারীদের বাদী হয়ে অপহরনের মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ মামলাটি দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে চলার পর গেল ২৩ এপ্রিল রাঙামাটির চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের সিনিয়র ম্যাজিষ্ট্রেট ফাতেমা বেগম মুক্তা মামলাটি খারিজ করে দেন।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.