দারিদ্রতা পেরিয়ে এসএসসি পাস করেছে পানছড়ি উপজেলার দুই কৃতি শিক্ষার্থী। সরেজমিনে গিয়ে জানাযায় জেলার পানছড়ি উপজেলার আদি ত্রিপুরা পাড়া গ্রামের মৃত শংকর দে ও রিতা দে মেয়ের শ্রাবন্তী দে এই বছর পানছড়ি বাজার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভা থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে পাস করেছে। এর আগে সে জেএসসিতে ভালো রেজাল্ট করে সাধারণ বৃত্তি লাভ করে। সে বড় হয়ে ডাক্তার হতে চাই।
শ্রাবন্তীর মা জানান ২০২০ সালে জুলাই মাসের ২ তারিখে হঠাৎ ষ্ট্রোক করে তার স্বামী মারা গেলে তাদের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসলেও অদম্য এই মেধাবী ছাত্রী লেখাপড়ায় দমে যায়নি। সে নিয়মিত লেখাপড়া করেছে। পরে যখন লেখাপড়া চালাতে হিমছিম খাচ্ছিলেন তখন সফল নামে একটি প্রকল্প চালু হলে, যেখানে অনাথ শিশুদের লেখাপড়া খরচ চালিয়ে নেওয়ার জন্য সহযোগিতা প্রদান করা হয়।
এতে সে জাবারাং “সফল” প্রকল্পের পানছড়ি অফিসের সাথে যোগাযোগ করে শ্রাবন্তীকে প্রকল্পভূক্ত করেন এবং সেখান থেকে তাকে প্রতিমাসে এক হাজার টাকা করে লেখাপড়া সহযোগিতা খরচ বাবদ পেয়ে আসছেন। এই টাকা পাওয়ায় তার জন্য মেয়ের টিউশন ফি খরচ যোগানো কিছুটা হলেও সহজ হয়ে যায়। এই জন্য তিনি সফল প্রজেক্টের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ কৃতজ্ঞতা জানান।
অন্যদিকে একই উপজেলার লতিবান ইউনিয়নের দূর্গম একটি গ্রাম হল রামসিং দেওয়ান পাড়া। এই গ্রামটি পানছড়ি সদর হতে গ্রায় ৬কিলোমিটার দূরে এবং যাতায়তের একমাত্র মাধ্যম হল পায়ে হেটেঁ আসা-যাওয়া। এই গ্রামের ২০০৬ সালে জন্মগ্রহন করেন লক্কন ত্রিপুরা। তিন ভাই বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। রামসিং দেওয়ান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি থেকে ৬ষ্ট শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলে নালকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হলে তার পিতা ননিন্দ্র ত্রিপুরা ২০১৭ সালে মারা যান। মায়ের কষ্টকর দিনমজুরের কাজ আর স্কুলে প্রতিদিন ৬/৭ কিলোমিটার পায়ে হেটেঁ আসা-যাওয়া তার ভবিষ্যৎ জীবনের দিশা যেন খূজেঁ পাচ্ছিলেন না।
২০২১ সালে ডিসেম্বর মাসে সফল প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হলে সেখানে তাকে প্রকল্পভূক্ত করা হলে তিনি যেন নতুন উদ্যম ফিরে পান। লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি গ্রামের কিশোর-কিশোরী দল গঠন করা হলে সেখানে যোগদান করেন এবং নেতৃত্ব উন্নয়ন, কিশোর-কিশোরী মনোসামাজিক বিকাশ এর উপর প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। প্রশিক্ষণ গ্রহনের পরপরই তিনি শিখণ বিষয়বস্তুর উপর সতীর্থদের মাঝে সেশন পরিচালনা করতে থাকেন। এছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়ে কিশোর-কিশোরী ফোরাম গঠন করা হলে তিনি লতিবান ইউনিয়ন পরিষদের কিশোর-কিশোরী ফোরামের সভাপতি নির্বাচিত হন। শুধু সেখানেই নয়, তিনি উপজেলা পরিষদের কিশোর-কিশোরী ফোরামের সর্বসম্মতিক্রমে সভাপতি নির্বাচিত হন।
এসব কর্মকার্ন্ডে অংশগ্রহনের ফলে তার নিজের উপর আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। এরই মধ্যে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হলে তিনি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেন এবং সফলতার সহিত মানবিক বিভাগ থেকে ৪.৩৯ গ্রেড নিয়ে উত্তীর্ণ হন। তার স্বপ্ন হলো সে বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশুনা শেষ করে একজন বিসিএস অফিসার হবেন।” তিনি বলেন- বাবা মারা যাওয়ার পর মা’কে অনেক কষ্ট করতে দেখছি। আমি উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করে মায়ের কষ্ট দূর করতে চায়।” তার এতদুর এগিয়ে আসার পেছনে সফল প্রজেক্টের কর্মকর্তাদের অবদান বলে মনে করেন।
সফল প্রজেক্ট এর মনিটরিং কর্মকর্তা ইশতিয়াক সাবাব জানান সফল প্রজেক্ট থেকে সহযোগীতা পেয়ে শ্রাবন্তী দে ও লক্ষণ ত্রিপুরা মতো এ বছর পানছড়ি ও দীঘিনালা উপজেলার ১২ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পাস করেছে।
---হিলবিডি২৪/সম্পদনা/এ,ই