খাগড়াছড়ি’র শহরে মধুবাজার এলাকায় গত ১২ এপ্রিল সর্বজনীন বৈসাবি উদযাপন কমিটি কর্তৃক আয়োজিত বৈসাবি শোভাযাত্রায় বিনা উস্কানিতে আইন-শৃংখলা বাহিনীর হামলা সম্পর্কে প্রশাসনের দেয়া বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন খাগড়াছড়ির ২৩ জন বিশিষ্ট নাগরিক। এতে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণের প্রধান ও ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসব বৈসাবি উপলক্ষ্যে আয়োজিত উক্ত শোভাযাত্রায় হামলাকে আমরা আমাদের ঐহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐক্য-সংহতির উপর উদ্দেশ্যমূলক ন্যাক্কারজনক হামলা বলে দাবি করেছেন।
শনিবার সর্বজনীন বৈসাবি উদযাপন কমিটি সদস্য সচিব ও খাগড়াছড়ি পৌর কাউন্সিলর মিলন দেওয়ান মনাঙ-এর স্বাক্ষরিত এক প্রেস বার্তায় এ কথা জানানো হয়েছে।
প্রেস বার্তায় খাগড়াছড়ির ২৩ জন বিশিষ্ট নাগরিক বলেছেন, বৈসাবি উদযাপন কমিটির পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানের বহু আগে জেলা প্রশাসকের সাথে সাক্ষাত করে বৈসাবি শোভাযাত্রা ও অন্যান্য কর্মসূচী বিষয়ে তাকে অবগত করা হয়েছিল এবং তিনিও এতে যথারীতি মৌখিকভাবে সম্মতি দিয়েছিলেন। আর জেলা পরিষদ বৈসাবি র্যালি করেছে বলেই আর অন্য কেউ বৈসাবি র্যালির আয়োজন করতে পারবে না এ রকম নির্বোধ যুক্তি আমরা কোন কালে শুনিনি। তাছাড়া এ যদি প্রশাসনের সত্যিকার অভিপ্রায় হতো, তাহলে আমাদের ১২ এপ্রিল বৈসাবি র্যালির পর আরো অনেকে র্যালি বের করলে তাতে বাধা দেয়া হয়নি কেন? আরও প্রশ্ন, যদি জেলা পরিষদের বৈসাবি র্যালি ছাড়া অন্য কোন বৈসাবি র্যালি বের করা যাবে না বলে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত থেকে থাকে, তাহলে তা আগে ভাগে আমাদের জানিয়ে দেয়া হলো না কেন?
প্রেস বার্তায় ২৩ জন বিশিষ্ট নাগরিক আরও বলেন, আমরা মনে করি সরকারের একটি মহল চায় না পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ সকল পাহাড়ি জাতিগুলো বৈসাবির (বৈসু, সাংগ্রাই, বিজু) চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হোক। তারা পাহাড়িদের ভাগ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে চিরকাল শাসন শোষণ জারী রাখতে চায়। এ কারণে তারা বৈসাবির মতো একটি ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসবের র্যালিতে হামলা চালিয়েছে। তবে আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, এভাবে ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়ে কিংবা কোন ধরনের ষড়যন্ত্র করে বৈসাবির চেতনাকে ধ্বংস করা যাবে না, আবহমান কাল ধরে এ অঞ্চলে বসবাসরত পাহাড়ি জাতিগুলোর নিবিড় বন্ধনের শেকড়কে উপড়ে ফেলা যাবে না এবং তাদের শত শত বছরের ঐক্য-সংহতি ও ভ্রাতৃত্ববোধকে বিনষ্ট করা যাবে না।
প্রেস বার্তায় বিনা উস্কানিতে বৈসাবি শোভাযাত্রায় আইন-শৃংখলা বাহিনীর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং এ হামলার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও আটককৃত খাগড়াছড়ি সরকারী কলেজের ছাত্র এলটন চাকমার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে।
বিবৃতিদানকারী বিশিষ্ট নাগরিকরা হলেন, শিক্ষাবিদ অনন্ত বিহারী খীসা, জুম্ম শরণার্থী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক সন্তোষিত চাকমা বকুল, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমা, নুনছড়ি মৌজার হেডম্যান ক্ষেত্র মোহন রোয়াজা, অপসরপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রার্থনা কুমার ত্রিপুরা, জেলা পরিষদের প্রাক্তন সদস্য ও সমাজকর্মী বিনোদ বিহারী খীসা, খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত প্রভাষক মধু মঙ্গল চাকমা, সমাজকর্মী জীবলাল চাকমা, সমাজকর্মী পুরুষোত্তম চাকমা, সমাজসেবক সুকৃতি জীবন চাকমা, নারী নেত্রী ও মানবাধিকার কর্মী নমিতা চাকমা, স্বনির্ভর বাজার চৌধুরী যশোবন্ত দেওয়ান, খাগড়াছড়ি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রণিক ত্রিপুরা, ভাইবোন ছড়া ইউপি চেয়ারম্যান কান্তি লাল চাকমা, বিশিষ্ট মুরুব্বী সরোজ কুমার চাকমা, অবসরপ্রাপ্ত বিদ্যালয় পরিদর্শক অর্ধেন্দু শেখর চাকমা, দশবল বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি জ্ঞান বিকাশ চাকমা, আইনজীবী সমারি চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি সোনালী চাকমা, পৌর সমাজ উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক দীপায়ন চাকমা, হুয়াঙ বোইও বা’র সভাপতি ও সর্বজনীন বৈসাবি উদযাপন কমিটির সদস্য অনুপম চাকমা এবং ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও সর্বজনীন বৈসাবি উদযাপন কমিটির সদস্য ধীমান খীসা।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.