বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর জাতি সংঘের মানবাধিকার পরিষদের ইউনিভার্সেল পিরিওডিক রিভিউ (ইউপিআর) অধিবেশনে বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্র পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে।
গেল ১৪ মে জেনেভায় জাতি সংঘের কার্যালয়ে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর মানবাধিকার পরিষদের ওয়ার্কিং গ্রুপের তৃতীয় বারের মতো পরিবীক্ষণ অনুষ্ঠিত অধিবেশনে এ সুপারিশ করা হয়।
কাপেং ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপক হিরণ মিত্র চাকমার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বার্তায় বলা হয়, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রতিনিধি দল এই অধিবেশনে যোগ দিয়েছে। টিআইবি চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল, আইন ও সালিশ কেন্দ্রেন নির্বাহী পরিচালক শিফা হাফিজা,কাপেং ফাউন্ডেশনের পল্লব চাকমা, সেভ দ্যা চিলড্রেন-এর লায়ালা খন্দকার, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের রাশেদা আখতার, হিউম্যান রাইটস ফোরামের পাঁচ জন কর্মীসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এই অধিবেশনে অংশ গ্রহণ করেন।
অধিবেশনে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সময় ভিত্তিক কর্ম পরিকল্পনা (রোডম্যাপ) ঘোষণা করা, পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি সমস্যা নিষ্পত্তির জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনকে সচল করা, ভূমি কমিশনের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ বরাদ্দ করা, জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষা করা ও তাদের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা ইত্যাদি বিষয়ে সুপারিশ উত্থাপিত হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক, মালদ্বীপ, নিউজিল্যান্ড, পেরু, আর্জেন্টিনা, ইরান, ফ্রান্স, বাহরাইন, সার্বিয়া ইত্যাদি রাষ্ট্রসমূহ এসব বিষয় তুলে ধরেছেন।
এছাড়া অধিবেশনে নারী ও কন্যা শিশুর প্রতি সহিংসতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, মানবাধিকারকর্মীদের সুরক্ষা, অধিকারকর্মীদের বিচার বহির্ভূত হত্যা ও জোরপূর্বক গুম, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দায়মুক্তি, দু:স্থ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তা, মৃত্যুদ- রহিতকরণ, কিশোরী বিবাহ নিরোধ ইত্যাদি বিষয়ে সুপারিশ উত্থাপিতহয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনা ও সুপারিশ উঠে আসে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে। রোহিঙ্গা আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশকে ভূয়সী প্রসংশা করা হয়েছে।
প্রেস বার্তায় আরো উল্লেখ করা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার তার প্রতিবেদনে পূর্বের মতো উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে পার্বত্য চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে সরকার বদ্ধ পরিকর। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিতকরণের লক্ষ্যে সরকার ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি পুনর্গঠন করেছে। ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির কাজ ত্বরান্বিত করা এবং এ অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভূমি অধিকার সংরক্ষণের লক্ষ্যে ২০১৬ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তিক মিশন আইন সংশোধন করেছে।
প্রেস বলা হয়, যে সমস্ত দলিলাদির ওপর ভিত্তি করে এই পর্যালোচনা করা হয়েছে তা হল জাতীয় রিপোর্ট - বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক পেশকৃত তথ্য, স্বাধীন মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ এবং প্রুপ সমূহের প্রতিবেদন, যা বিশেষ কার্য প্রণালী হিসেবে পরিচিত, মানবাধিকার ট্রিটি বডি এবং অনান্য জাতিসংঘ সত্বাসমূহের তথ্য সমৃদ্ধ প্রতিবেদনসমূহ,অন্যান্য অংশীদারদের মধ্যে জাতীয় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানসমূহ,আঞ্চলিক সংস্হাসমূহ এবং আদিবাসী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিগণ কর্তৃক প্রদত্ত তথ্য।
প্রেস বার্তায় আরো বলা হয়, অধিবেশনে আদিবাসী জাতিসমূহের জাতীয় পর্যায়ের মানবাধিকার সংগঠন কাপেং ফাউন্ডেশনের সহায়তায় কোয়ালিশন অব ইন্ডিজেনাস পিপলস অর্গানাইজেশন কর্তৃক একটি প্রতিবেদন পেশ করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, ইউপিআর জাতি সংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের একটি স্বতন্ত্র প্রক্রিয়া যা জাতি সংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নতির লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত। এই প্রক্রিয়ার অধীনে বর্তমানে পাঁচ বছর অন্তর অন্তর জাতি সংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের নিজ নিজ রাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয় এবং সেটির আলোকে মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নতি করণে এবং নাগরিকদের প্রতি মানবাধিকারের দায়দায়িত্ব পরিপূরণে গৃহীত পদক্ষেপ সমূহ ঘোষণা করা হয়। ইউপিআর তুলনামুলকভাবে জাতি সংঘের মানবাধিকার পরিষদের একটি নতুন এবং অধিককাযকর ব্যবস্থা হিসেবে মানবাধিকার পরিস্থিতিকে উন্নীত করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
জাতি সংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে ইউপিআর বা সার্বজনীন পুনর্বীক্ষণ পদ্ধতিএর আওতায় ২০০৯ সালে এবং ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির পর্যালোচনা করা হয়। দেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে আদিবাসী প্রতিনিধিরাও ইউপিআর ব্যবস্থার দুটি অধিবেশনে অংশগ্রহণ করে এবং ছায়া প্রতিবেদন পেশ করে। হেল ১৪ মে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর তৃতীয় চক্রের যে রিভিউ হয় সেখানেও দেশের বিভিন্ন সুশীল সামাজিক সংগঠনের ছায়া প্রতিবেদনে আদিবাসীদের মানবাধিবারের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পাশাপাশি কাপেং ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গঠিত ৩০টি আদিবাসী সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ইউপিআর কোয়ালিশনএর মাধ্যমে আদিবাসীদের পক্ষ থেকে ইউপিআর ফোরামে প্রতিবেদন পেশ করা হয় বলে প্রেস বার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.