বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কোন রকম অনুমতি ছাড়া বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার ঘনফুট পাথর অবৈধভাবে উত্তোলন করে পাচর করে দিচ্ছে পাচারকারী একটি চক্র৷ এ চক্রটি পাহাড় কেটে আর মাটি খুঁড়ে এসব পাথর উত্তোলন করছে৷ অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করার অপরাধে গেল ছয় মাসে আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান ভ্রাম্যমান অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে ৪৬৭৮০ ঘনফুট পাথর জব্দ করেছেন৷
এদিকে আলীকদম উপজেলা প্রশাসন শুরু থেকে অবৈধভাবে পাথর জব্দের অভিযান অব্যাহত রাখলেও বর্তমানে তা বন্ধ থাকায় পাথর পাচারকারীরা বেপরোয়া উঠে প্রকাশ্যে পাথর উত্তোলন করে পাচার করে দিচ্ছে৷
এ বিষয়ে আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, আলীকদম উপজেলার ২৮৭নং তৈন মৌজার ছোট ভরি, বর ভরি, ঠান্ডাঝিরি, মাংগুঝিরির শাখা প্রশাখা থেকে পাথর উত্তোলনের জন্য গত ৫ ডিসেম্বর বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে হুমায়ুন কবির, পিতা- মৃত মাওলানা মোহাম্মদ ইসলাম এর নামে ২০ হাজার ঘনফুটের একটি পারমিট অনুমোদন হয়৷ কিন্ত উক্ত পারমিটের অনুবলে পাথর গুলো পরিবহনের কোন অনুমোদন নেই৷ তাই উক্ত পারমিটের কোন পাথর উল্লেখিত স্থান থেকে পরিবহন করা সম্পূর্ণ অবৈধ৷ সেহেতু আলীকদম উপজেলার যে কোন স্থান থেকে পাথর উত্তোলন করা সম্পূর্ণ অবৈধ৷ অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করার অপরাধে গত ছয় মাসে আলীকদমের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমান অভিযান চালিয়ে ৪৬৭৮০ ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়েছে৷ অভিযান অব্যাহত রয়েছে৷
আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান আলীকদম উপজেলা থেকে পাথর উত্তোলন সম্পূর্ণ অবৈধ বলে জানালেও বর্তমানে উপজেলার ভরিখাল, কলারঝিরি, রোয়াম্ভু খাল, আলীকদম-থানচি সড়কের আলীকদম অংশের ১০ থেকে ১৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বিভিন্ন ঝিরি থেকে, মাতামুহুরী রিজার্ভের ধুমচি খাল, ভূজিখাল, তুলাতলী ঝিরি, চৈক্ষ্যংয়ের ডুপ্পুর ঝিরি, পাট্টাখাইয়া, বাঘের ঝিরি ও তৈন খালের এবং অসথু ত্রিপুরা পাড়া ঘাট এলাকা থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার ঘনফুট পাথর উত্তোলন করছে এ পাথর উত্তোলনকারী চক্র৷ এসব স্থানে রাস্তার পাশে স্তুপে স্তুপে জড়ো করে রেখেছে পাথর৷ এ সব পাথর গুলো ছোট-বড় ট্রাক যোগে পাচার করে দিচ্ছে৷ এর কারণে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে তেমনি রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকর৷
একাধিক সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ২৯১ ও ২৯২ নং তৈন মৌজার এলাকার পাইয়া পাড়ার বাসিন্দা চংঅং ম্রো বলেন, গত ১ বছর ধরে তৈন খালের বিভিন্ন স্থান থেকে পাথর উত্তোলন করে চলছে উপজেলা সদরের প্রভাবশালী কিছু লোকজন৷ পাথর উত্তোলনের কারণে আমরা বসবাসকারী ম্রো, ত্রিপুরা ও মার্মা সম্প্রদয়ের লোকজনের বিভিন্ন রকম সমস্যা হচ্ছে৷ তদের বাধা দিলে তারা বাধা শুনে না৷ উল্টা অপমান জনক কথা কলে৷ তারা ইঞ্জিন চালিত নৌকায় করে প্রতিদিন প্রায় ৮০ থেকে ১শত বোট পাথ বোঝাই করে আলীকদম সদরে নিয়ে যায়৷ বিভিন্ন স্থানে মজুদ করেছে লক্ষাধিক ঘনফুট পাথর। প্রশাসন অভিযান চালালেই পাথর গুলো জব্দ করা সম্ভব হবে।
এদিকে চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের বাঘের ঝিরি, ডুপ্পুর ঝিরি এলাকা ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার আয়েশা আক্তার জানান, ইউনিয়নের বাঘের ঝিরি আর ডুপ্পুর ঝিরি থেকে চৈক্ষ্যং এলাকার কিছু লোক প্রতিনিয়ত পাথর পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে৷ এ কারণে আবাসিক থেকে পাট্টাখাইয়া ব্রিক সলিনের রাস্তাটি ভেঙ্গে যাচ্ছে৷ এলাকাবাসীর চলাচলের ভীষণ অসুবিধা হচ্ছে বিধায় আমি কয়েকবার পাথর বোঝাই ট্রাক আটক করি৷ তবুও তারা কথা শুনে না৷ তারা অনেক বেশি বেপরোয়া৷ কথা বলতে ভয় হয়৷ আমি এ বিষয়ে চেয়ারম্যানকে অবহিত করেছি৷
সেখানকার পাট্টাখাইয়া এলাকার দোকানদার মোঃ বেলাল উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, বাঘের ঝিরির আগা থেকে ট্রাক যোগে পাট্টাখাইয়া রাস্তা দিয়ে পাথর পরিবহনের কারণে রাস্তাটি ভেঙ্গে যাচ্ছে৷ এলাকার মেম্বারদের আমরা জানিয়েছি৷ এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০টি পাথর বোঝাই করে নিয়ে যায়৷ গাড়ীর আওয়াজে পাড়ার কেই ঘুমাতে পারেনা৷ এ এলাকার বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার ঘনফুট জড়ো করে রেখেছে।
পাথর উত্তোলনকারী মোঃ রুকন মাষ্টার, মোঃ হুমায়ুন কবির, জাহেদ মিস্ত্রি ও বাতেন মাষ্টার এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, আমরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে পুঁজি খাটিয়ে পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে ব্যবসা করছি৷ আমরা চুরি করছি না৷
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মোঃ মকবুল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পাথর উত্তোলনের ফলে পাহাড় ধস, পানির জলাধার নষ্ট ও প্রাকৃতিকভাবে বিপর্যয় হতে পারে৷ আলীকদমে পাথর উত্তোলন বন্ধের বিষয়ে আমি বান্দরবান জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলেছি৷ জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় প্রশাসন পাথর উত্তোলন ও পাচার চাইলেই বন্ধ করতে পারে৷
এ ব্যাপারে বান্দরবান জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক বলেন, আলীকদমে অবৈধ ভাবে পাথর উত্তোলনের বিষয়ে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ আলীকদমে পাথর উত্তোলনে কোন অনুমতি দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাথর উত্তোলনে কাউকে এখনো পর্যন্ত অনুমতি দেয়া হয়নি৷
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.