বান্দরবানের লামার ফাইতং ইউনিয়নে সরকারের অনুমোদন ও লাইসেন্স ছাড়া ২৩টি ইট ভাটা গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ছাড়া আরো ছয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় রয়েছে অসংখ্য ইট ভাটা। অবৈধভাবে এসব ইট ভাটা স্থাপন, পাহাড় কেটে ভাটার মাটি সংগ্রহ ও জ্বালানি হিসেবে বনজ সম্পদ উজাড়ের কারণে ফাইতং ইউনিয়নের পাহাড়ি গ্রামগুলোতে জীব বৈচিত্র ও জনবসতি হুমকির সম্মূখিন হচ্ছেন বলে স্থানীয়দের দাবী।
এদিকে, ইট ভাটা সংলগ্ন পাহাড়ি গ্রাম রাইম্যাখোলা, শিবাতলী পাড়া, মংব্রাচিং কারবারী পাড়া, ফাদু বাগান পাড়া, হেডম্যান পাড়া ও বাঙ্গালি পাড়ার অধিবাসীরা পরিবেশের বিরূপ প্রভাব হতে নিজেদের রক্ষা করার জন্য বান্দরবান জেলা প্রশাসকের বরাবর আবেদন করেছেন। জীবন যাত্রা ব্যাহত হয় এমন স্থান থেকে ইট ভাটা সরিয়ে নিতে বান্দরবান জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে পরিবেশ উন্নয়ন কমিটিকে পত্র দিয়ে তাগিদ দিয়েছেন।
স্থানীয় জনগোষ্ঠীর দেয়া তথ্য মতে, বনজ সম্পদ ব্যবহারের সহজলভ্যতা ও দূর্বল প্রশাসনিক তদারকির কারণে ফাইতং ইউনিয়ন অবৈধ ইট ভাটা স্থাপনের নিরাপদ জোনে পরিণত হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ পার্শ্ববর্তী চকরিয়া, লোহাগাড়া ও সাতকানিয়া উপজেলার সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা সরকারের অনুমোদন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া ফাইতং ইউনিয়নে ২৩টি ইট ভাটা স্থাপন করেছে। চলতি মৌসুমে ২৩টি ইট ভাটায় পাহাড় কেটে ভাটার মাটি সংগ্রহও করা হয়েছে। গেল ৭/৮ বছর এক নাগারে ইট ভাটায় ইট পোড়ানোর কারণে স্থানীয় অধিবাসীদের মাঝে শ্বাসকষ্ট প্রদাহ জনিত রোগ, চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগ বৃদ্ধি পেয়েছে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
ইট ভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কবির আহমদ জানান,আগামী নভেম্বর মাসের শেষের দিকে ইট ভাটায় আগুন দেয়া হবে। ইট ভাটার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় বনজ সম্পদ।
আজিজনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ জসিম উদ্দিন জানান, স্থানীয় ভূমি মালিকদের কাছ থেকে জমি লিজ বা ক্রয় করে ফাইতং ইউনিয়নে ইট ভাটা করা হচ্ছে। জমি মালিকরা এতে লাভবান হচ্ছে।
লামা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ শফিউর রহমান জানান,পরিবেশের এই বিরূপ প্রভাব রোধ করা না হলে স্থানীয় জনসাধারন আরও জটিল রোগে আক্রান্ত হবে। এ ছাড়া ফাইতং ইউনিয়নের বিভিন্ন ফলদ বাগানের ফলন কমে গেছে। বনজ বাগান লাল হয়ে চারা গাছ মারা যাচ্ছে। বন্যপ্রাণী বিলু্িপ্তর পথে।
লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার খিন ওয়ান নু বলেন, ইট ভাটার বিষয় নিয়ে শিবাতলী মার্মা পাড়ার আবেদনের বিষয়টি সরজমিনে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের পরিচালক মাসুদ করিম সাংবাদিককে জানিয়েছেন, বান্দরবান জেলায় সরকারের অনুমোদন প্রাপ্ত কোন ইট ভাটা নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ইট ভাটা স্থাপনের জন্য কোন ছাড়পত্র প্রদান করা হয়নি। জনসাধারণের যেন ক্ষতি না হয় ইট ভাটা স্থাপনের জন্য এমন জায়গা নির্ধারন করতে বান্দরবান জেলা প্রশাসককে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পত্র দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বান্দরবান জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক বলেছেন, অবৈধ ইট ভাটার বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে শীগ্রই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.