ভগবান গৌতম বুদ্ধের প্রতি অবমানকর কটুক্তি ও রাজ বন বিহার সম্পর্কে বিরুপ তথ্যে উপস্থাপন করে প্রতিবেদন প্রকাশের প্রতিবাদে বুধবার রাঙামাটিতে সংবাদ সন্মেলন করেছে রাঙামাটি রাজ বন বিহার পরিচালনা কমিটি।
সংবাদ সন্মেলনে অভিযোগ করে বলা হয়, গেল ২৪ এপ্রিল দৈনিক জনকন্ঠে প্রকাশিত ফিরোজ মান্নার প্রতিবেদনে ‘পার্বত্য এলাকায় নতুন অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টায় ভাবনা কেন্দ্র’ শীর্ষক সংবাদটির প্রতিবাদে দৈনিক জনকন্ঠে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বৌদ্ধ ধর্ম, বৌদ্ধ বিহার ও ভাবনা কেন্দ্র সম্পর্কে ঢালাওভাবে মনগড়া ও কল্পনা প্রসূত তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে। জনকন্ঠের প্রতিবেদক বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে না জেনে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যায়িত করে বৌদ্ধদের ধর্মীয় অনুভূতিতে চরমভাবে আঘাত হেনেছেন।
শহরের একটি রেষ্টুরেন্টে আয়োজিত সংবাদ সন্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন রাজ বন বিহার উপাসক-উপাসিকা কার্য নির্বাহী পরিষদের সভাপতি গৌতম দেওয়ান। এসময় কমিটির সহ-সভাপতি নিরুপা দেওয়ান, অবসর প্রাপ্ত উপ-সচিব প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা দীপক খীসা,প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান মিনতি চাকমা, প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান মিনতি চাকমা, বালুখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিজয়গিরি চাকমা, এ্যাডভোকেট সুস্মিতা চাকমা, প্রাক্তন সরকারী কর্মকর্তা সুকুমার দেওয়ানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সন্মেলনে দাবী করে বলা হয়, প্রতি বেশি রাষ্ট্র মায়ানমারের রোহিঙ্গ্যা ইস্যূকে টেনে এনে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ সাধারণ বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী ও বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে মুখোমুখী দাঁড় করানোর পাঁয়তারা চালানো হয়েছে। এতে এ প্রতিবেদনের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিরাজমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উপর আঘাত হানার অপচেষ্টা করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
সংবাদ সন্মেলনে দাবী করা হয়, ফিরোজ মান্নার তার প্রতিবেদনে ‘সরকারের খাস জমি’ দখল কওে ভাবনা কেন্দ্র বাকিয়াংগড়ে তোলে এসব ভাবনা কেন্দ্রে বসে মিয়ানমারের উগ্রবাদী গোষ্ঠী ৯৬৯-এর কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে যা উল্লেখ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
সংবাদ সন্মেলনে পাল্টা প্রশ্ন রেখে আরো বলা হয়, মিয়ানমারের উগ্রবাদী গোষ্ঠীর ব্যাপাওে যদি গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য থেকে থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কেন উপযুক্ত পদক্ষেপ না নিয়ে কোন উদ্দেশ্যে মিডিয়ায় গোয়েন্দাদেও এসব স্পর্শকাতর তথ্য ফলাও কওে প্রচার করা হচ্ছে?
মিয়ানমারের উগ্রবাদী গোষ্ঠীর ভান্তেদের পরামর্শে বান্দরবানের স্বর্ণমন্দির, রাঙামাটির বনবিহার ও রাজ বনবিহাওে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না বলে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা প্রতিবেদক ফিরোজ মান্নার চরম মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয় বলে সংবাদ সন্মেলনে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদক রাঙামাটিতে ‘বনবিহার’ ও ’রাজ বন বিহার’নামে দু’টি প্যাগোডার কথা বললেও বাস্তবে তা নয়। মূলত এটি একটি প্রতিষ্ঠান যা রাজ বন বিহার নামে পরিচিত, যা প্রতিবেদকের জানা ছিল না।
গৌতম দেওয়ান দাবী করে বলেন, ইউকিপিডিয়ার নাম ভাঙিয়ে মিয়ানমারের ৯৬৯ গোষ্ঠীর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে জনকন্ঠের প্রতিবেদনে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কিন্তু উইকিপিডিয়ায় কোথাও ‘সন্ত্রাসী’ শব্দ প্রয়োগ করা হয়নি। এর মাধ্যমে কেবল গৌতম বুদ্ধকে নয়, তার অনুসারী হিসেবে সমগ্র বৌদ্ধ সমাজকে সন্ত্রাসী বানানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে। তিনি এ ধরনের হীন প্রচেষ্টাকে তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে গৌতম দেওয়ান বলেন,বৌদ্ধ ধর্মে সহিংসতার কোন স্থান নেই। কেবল মানব জাতি নয়, সকল প্রাণীর প্রতি মৈত্রীভাব পোষণ করা এবং তাদের দু:খ লাঘবে কাজ করাই গৌতম বুদ্ধের অন্যতম শিক্ষা। এদেশে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হতে পাওে এমন অসত্য ও মনগড়া তথ্য ও সংবাদ পরিবেশন না করার জন্যে সংবাদ সন্মেলনে দৈনিক জনকন্ঠসহ সকল মিডিয়ার প্রতি আহবান জানানো হয়েছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.