পার্বত্য চট্টগ্রামকে তামাক চাষের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করতে হলে আখ চাষে চাষীদের আরো বেশী করে উদ্ধুদ্ধ করতে প্রনোদনা দিয়ে আখ চাষ বাড়ানোর গুরুত্বারোপ করেছেন কৃষিবিদ ও বক্তারা।
তারা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আখ চাষের একটি সম্ভাবনাময় অঞ্চল। তবে এই আখ চাষে চাষীদের নায্য মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিতকরাসহ কৃষকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে আখ চাষে এ অঞ্চলের কৃষকদের যেমনি আয় বৃদ্ধি হবে তেমনি এ অঞ্চলের আর্থ সামাজিক অবস্থারও উন্নতি ঘটবে।
সোমবার রাঙামাটিতে আখ ও আখের সাথী ফসল প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং মূল্য সংযোজনের জন্য স্থানীয় পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের সৃজন শীর্ষক দিন ব্যাপী কর্মশালায় কৃষিবিদ ও বক্তারা এসব মন্তব্য করেন।
স্থানীয় আশিকা হল রুমে আয়োজিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা। বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষনা ইনস্টিটিউটের কেজিএফ প্রকল্পের কর্মকর্তা ড. এবিএম মফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন, রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কেএম হারুন অর রশীদ, রাঙামাটি কৃষি ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ সুদেন্দু শেখর মালাকার। মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এগ্রো প্রসেসিং এ্যান্ড ভ্যালু এডিশন এক্সপার্ট মাহবুবুল হক। স্বাগত বক্তব্যে রাখেন বিএসআরআই ইনচার্জ ও উর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ধনেশ্বর তংচংগ্যা।
বক্তব্যে রাখেন রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক উপ-পরিচালক কাজল কালুকদার, রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক তপন কুমার পালসহ খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। কর্মশালায় তিন পার্বত্য জেলা থেকে কৃষিবিদ, উদ্যোক্তা, কৃষক, সাংবাদিকরা অংশ গ্রহন করেন।
কর্মশালার মূল প্রবন্ধে বলা হয়, পার্বত্যাঞ্চলে অনেক পূর্ব থেকেই স্থানীয় কৃষকদের নিজস্ব উদ্যোগে কিছু কিছু হলেও সংগঠিতভাবে আধুনিক পদ্ধতিতে আখ চাষ সাম্প্রতিককালে শুরু হয়েছ। বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষনা ইনস্টিটিউটের(বিএসআরআই) পার্বত্যাঞ্চলে আখ চাষের বিস্তার ঘটানোর লক্ষে গেল ২০০৭ সাল থেকে বিএসআরআই, কৃষি গবেষনা ফাউন্ডেশন এর অর্থায়নে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ইক্ষু গবেষনা ও উন্নয়ন জোরদারকরণ প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পটি রাঙামাটি,বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলার ৯টি উপজেলায় চালু রয়েছে।
এই প্রকল্পের আওতায় ইক্ষু গবেষনা ও উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০১৯ সালে প্রকল্পের সমাপ্তি বছরে আখ চাষের পরিমাণ ৭শ হেক্টর থেকে ২ হাজার ৫শ হেক্টর উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আখ ও সাথী ফসল চাষাবাদ বৃদ্ধির মাধ্যমে এলাকার কৃষকদের আয় বৃদ্ধি ও আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করা এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।
এছাড়া আখের সাথে সাথী ফসল হিসেবে উৎপাদিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ন স্বপ্ল মেয়াদি ফসল এবং এই এই এলাকার কয়েকটি ফসল প্রক্রিয়াজাতকরণ ও মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে কৃষকদের আয় বৃদ্ধি ও স্থানীয় পর্যায়ের উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে কৃষি ভিত্তিক প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তোলার জন্য এ প্রকল্পের অপর একটি লক্ষ্য রয়েছে।
প্রবন্ধে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে আখ চাষাবাদ বাংলাদেশের প্রায় ৪ লাখ একর জমিতে চাষ করা হয়। আখ চাষ এলাকাকে দুভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হল চিনিকল এলাকা(সুগামিলস জোন) এবং অপরটি হল চিনিকল বর্হিভূত এলাকা(নন মিলস জোন)।
প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা তামাক চাষ বন্ধে কৃষিবিদদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে কৃষকদের তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করে প্রনোদনা দিয়ে আখসহ অন্যান্য ফসলের চাষে আগ্রহী করতে হবে। এ লক্ষে চাষীদের সচেতন করে তুলতে মাঠ পর্যায়ে কৃষিবিদদের আরো উদ্যোগী হতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর দেশ। যে কোন ফসল এখানে উৎপাদন হয়। তার জন্য আরো গবেষনা করতে হবে। তাই কোন জমিতে কি ফসল ফলে এবং কোন সময়ে কি ফসল চাষ করা হলে লাভ হবে তার জন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার পাশাপশি ও সচেতনা বাড়াতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন ধরনের চাদাবাজী হয়ে থাকে তা আমাদের জন্য অত্যন্ত দূর্ভাগ্যজনক উল্লেখ করে পরিষদ চেয়ারম্যান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ও উন্নয়নের জন্য এবং চাদাবাজী থেকে মুক্তির পাওয়ার জন্য ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু চুক্তির দু বছর পর আবার চাদবাজী শুরু হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকায় এবং এখানে কোন কর্ম সংস্থান থাকার কারণে হয়তোবা আঞ্চলিক দলগুলোর মধ্যে দ্বন্ধ বিরাজমান রয়েছে ও সাধারন মানুষ এর কারণে নানান ভোগান্তির শিকার হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.