আজ মঙ্গলবার বিশ্ব পর্যটন দিবস। সারা বিশ্বের ন্যায় রাঙামাটিতেও পর্যটন দিবসটি পালিত হচ্ছে। দেশের পর্যটন স্থানের মধ্যে রাঙামাটি প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য পর্যটকের কাছে অন্যতম জনপ্রিয়। কিন্তু রাঙামাটির পর্যটনের অবকাঠামো,নিরাপত্তা থেকে আধুনিক সু-ব্যবস্থা গড়ে না উঠায় সম্ভাবনাময় এ শিল্প দিন দিন মার খাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি জেলায় কৃত্রিম কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টি হওয়ার কারণে রাঙামাটিতে গড়ে উঠে আকর্ষনীয় পর্যটন স্পট। ৭০ দশকের শেষের দিকে সরকার রাঙামাটি জেলাকে পর্যটন এলাকা হিসেবে ঘোষনা এবং পর্যটন কর্পোরেশন পর্যটকদের সুবিধার্থে আকর্ষনীয় স্পট স্থাপন করে। পর্যটন কর্পোরেশন স্পটে হোটেল, অফিস এবং মনোরঞ্জনের জন্য দুই পাহাড়ের মাঝখানে তৈরী করা হয় আকর্ষনীয় ঝুলন্ত সেতু। এ ঝুলন্ত সেতুর পূর্বের দিকে তাকালে দেখা মিলে অপূর্ব স্বচ্ছ জলরাশিসহ ছোটবড় অপরুপ নৈসর্গিক সবুজ পাহাড়। এছাড়া পর্যটকদের জন্য আকর্যনীয় স্পট হিসেবে রয়েছে শুভলং এর মনোমুগ্ধকর ঝর্ণা, রাজ বন বিহার, জেলা প্রশাসনের বাংলো, বীর শ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের সমাধি সৌধ, বালুখালী কৃষি খামার, টুক টুক ইকোভিলেজ এবং আদিবাসী শান্ত সবুজ গ্রাম ও তাদের জীবনযাত্রা।
এছাড়াও রয়েছে রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলা দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য্য উপভোগ করার মত কর্ণফুলী নদীর তীরে গড়ে উঠা আকর্যনীয় পর্যটন স্পট, কাপ্তাই জল বিদ্যূৎ উৎপাদন কেন্দ্র, কর্ণফূলী পেপার মিলস্ ও কাপ্তাই জাতীয় উদ্যোন। এছাড়া জেলা বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকে রয়েছে মন মাতানো পর্যটন স্পট।
এদিকে, পাহাড়ের স্থানীয় পর্যটনকে এগিয়ে নিতে ২০১৪ সালে পর্যটনকে পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট হস্তান্তর করা হয়। এতে বলা হয় পর্যটকদের আধুনিক ও চিত্তবিনোদনের সব সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা হবে। রাঙামাটির জন্য নেওয়া হবে পরিকল্পনা। পর্যটন খাত বিকাশে জেলা পরিষদের উন্নয়ন পরিকল্পনায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
কিন্তু বাস্তবে এগুলোর এখনো কিছুই হয়নি। স্থানীয় বিশেষায়িত জন প্রতিনিধিত্বশলি প্রতিষ্ঠান গুলোর অভিযোগ পর্যটনকে পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট হস্তান্তর করা হলেও এতে শুভংকরের ফাঁকি রয়েছে। মূলত পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটনের জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা আছে। কিন্তু চোখে পড়ার মতো কোনো উদ্যোগ বা বিনোয়োগ নেই এখনো।
পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মতে, রাঙামাটির পর্যটনের অবকাঠামো,নিরাপত্তা থেকে আধুনিক ব্যবস্থা গড়ে না উঠায় সম্ভাবনাময় এ শিল্প দিন দিন মার খাচ্ছে। পাশাপাশি নীতিনির্ধারকদের আন্তরিকতা ও প্রচার নেই বলে পাহাড়ের সম্ভাবনাময় এই খাতটি এখনো পিছিয়ে রয়েছে। আবার স্থানীয় পর্যটন ব্যবসার জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, এশিয়ার সবচেয়ে বড কৃত্রিম হ্রদ, পাহাড় আর বন থাকার পরও রাঙ্গামাটি তার পর্যটনকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে পারছে না।
রাঙামাটির স্থানীয় দৈনিক গিরিদর্পণ পত্রিকার সম্পাদক এ কে এম মকছুদ আহমেদ বলেন, পর্যটন নিয়ে তেমন কোনো প্রচার নেই। ফলে আশানুরূপ পর্যটক আসছেন না। আবার পার্বত্য পরিস্থিতিসহ নানা সমস্যার কারণে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে রাঙ্গামাটি থেকে। তার মতে, পাহাড়ের ‘পর্যটন যে বিশাল সম্ভাবনাময় খাত, সেটাই অনেকে বুঝতে চায় না। পর্যটক আনার জন্য যে প্রচার,বিনিয়োগ দরকার তাও হচ্ছেনা। ফলে পাহাড়ে এর সুফল আসছেনা।
এজন্য স্থানীয় পর্যটনের উৎসাহ বাড়তে সত্যিকার অবকাঠামো গড়ে তোলার পরামর্শ সাধারণ মানুষের। আগে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের মূল গন্তব্য ছিল রাঙামাটি। রাঙামাটি যদি বিশাল এই বাজার ধরতে পারতো, তাহলে পর্যটনের হাত ধরেই বদলে যেতে পারে পার্বত্য রাঙামাটির অর্থনীতি। গেল বছর ধরে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার আর পার্বত্য পরিস্থিতির কারণে পর্যটকের আগমন কমে গেছে।
রাঙামাটি সরকারী পর্যটন কর্পোরেশনের কর্মকর্তা সাহাদাৎ হোসেন বলেন, পাহাড়ের বৈচিত্রময় নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠী ও তাদের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের জন্য রাঙামাটি শহর দেশি বিদেশী পর্যটকদের কাছে অনেক বেশি আকর্ষনীয়। আর পার্বত্য রাঙামাটির পরিস্থিতিও এখন অনেক শান্ত ও স্থিতিশীল। তাই আসন্ন পর্যটন মৌসুমে পর্যটকদের সরব উপস্থিতি ঘটবে লেক ঘেরা এই রাঙামাটি শহরে।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা বলেন, রাঙামাটিকে আধুনিক পর্যটন শহরে গড়ে তুলতে ১’শ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের অর্থায়নে ইতোমধ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষে মাষ্টার প্লান তৈরীর কাজ শুরু হয়েছে ।
তিনি আরো বলেন, ২০১৪ সালে সরকার পার্বত্য শান্তি চুক্তি অনুযায়ী পর্যটন বিভাগকে জেলা পরিষদের নিকট হস্তান্তন করেছে।জেলা পরিষদ রাঙামাটিকে পর্যটন নগরীতে পরিণত করতে এ বছর থেকে কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে মাষ্টার প্লান তৈরীর জন্য কনসালটেনসী ফান্ড নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ডিসেম্বর নাগাদ মাষ্টার প্লান তৈরীর কাজ শেষ হবে বলে জানান তিনি।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.