মঙ্গলবার থেকে পাহাড়ের তিন দিন ব্যাপী ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, বিহু উৎসব শুরু হয়েছে। উৎসবের প্রথম দিন ফুল বিজু। তাই পাহাড়ের প্রতিটি জনপদ এখন উৎসবে মূখরিত। বাংলা বর্ষের শেষ দুদিন ও নতুন বছরের প্রথম দিন এই উৎসব পালন করে আদিবাসীরা। তাই পাহাড়ী জনপদ এখন উৎসবে মূখরিত।
মঙ্গলবার উৎসবের প্রথম দিন ফুল বিজু। এ দিন ভোরে পানিতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এদিনে শিশু-কিশোর-কিশোরীরা খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফূল সংগ্রহ করে বাড়ি অঙ্গিনা সাজায় ও তরুন-তরুনীরা পাড়ায় বৃদ্ধদের শ্রদ্ধার সাথে স্লান করায়। আদিবাসী মেয়েরা বাড়ি-ঘর পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে থাকে। সন্ধ্যায় বৌদ্ধ মন্দির, নদীর ঘাটে, বাড়ীতে প্রদীপ প্রজ্জালন করা হয়।
বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, বিহু উদযাপন কমিটির উদ্যোগে ভোরের দিকে রাঙামাটির রাজ বন বিহারের পুর্ব ঘাট এলাকায় নদীতে ফুল ভাসানোর উদ্ধোধন করেন রাঙামাটির সাংসদ উষাতন তালুকদার। অপরদিকে অপরদিকে, ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নদীতে ফুল ভাসানো এবং বয়স্কদের বস্ত্র বিতরণ, স্নান, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা। এসময় জেলা পরিষদ সদস্য স্মৃতি বিকাশ ত্রিপুরা ও অমিত চাকমা রাজুসহ ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এসব অনুষ্ঠানে আদিবাসী তরুন-তরুনীরা রঙবেরঙের ঐতিহ্যবাহী পোশাক-পরিচ্ছেদ পড়ে ফুল ভাসানো উৎসবের যোগদান করেন।
বুধবার উৎসবের দ্বিতীয় দিন মূল বিজু। এ দিনে বাড়িতে বাড়িতে শুধূ চলে খাওয়া-দাওয়ার পর্ব ও আন›ন্দ-পূর্তি। বিভিন্ন রকমের সুস্বাদু খাবার আগত অতিথিদের পরিবেশন করা হয়। সব ধরণের ভেদাভেদ ভ’লে গিয়ে এদিনে সব বয়সের সকল শ্রেণীর মানুষ পাড়ায় পাড়ায় ঘুড়ে বেড়ায়, যে বাড়ীতে যাকনা কেন বাড়ীর লোকেরা সাদরে আগত অতিথিদের গ্রহন করে সাধ্যমত খাবার পরিবেশন করে ।
রাঙামাটির সংসদীয় আসনের সাংসদ উষাতন তালুকদার বলেন, ফুলের মত পবিত্র হয়ে যেন সবাই সুন্দর মন নিয়ে নিজেদের উন্নত জীবন নিয়ে বসবাস করতে পারি এবং নতুন বছর সুন্দর ও নিরাপদ হয় এবং সবাইয়ের সুখ সমৃদ্ধি কামনা করার জন্য আমরা ফুল বিজু’র দিনে আমরা নদীতে ফুল ভাসায়।
তিনি বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, বিহু এর শূভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, এ উৎসবটি সবাইয়ের নিরাপদ, শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ হবে এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠিতসহ মানুষের অধিকার সুনিশ্চিত হবে। এ নতুন বছরের মধ্যে সরকার পার্বত্য চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে যেন সম্পাদিত পার্বত্য চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন করে পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি স্থাপন এবং পাহাড়ে সার্বিক উন্নয়ন ঘটাবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামের (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) ১৪টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আদিবাসী পাহাড়ি জাতিসত্তাদের ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক উৎসব হচ্ছে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, বিহু। উৎসবটির উচ্চারনগত ভাবে বিভিন্ন নামের হলেও এর তাৎপর্য একই, এবং একই নিয়মে হয়ে থাকে। তাই এ উৎসবটি আদিবাসী পাহাড়িদের শুধু আনন্দের নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল সম্প্রদায়ের সামাজিক, রাজনৈতিক অর্থনৈতিক, ঐক্য ও মৈত্রী বন্ধনের প্রতীকও বটে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.