রোববার রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলায় বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)-এর উদ্যোগে “সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বসবাসরত আদিবাসী জণগণের অধিকার: ফারুয়া প্রেক্ষাপট” বিষয়ক এক এডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ফারুয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিলাইছড়ি উপজেলার চেয়ারম্যান শুভমঙ্গল চাকমা। ফারুয়া ইউপির চেয়ারম্যান তেজেন্দ্রলাল তঞ্চঙ্গ্যার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিরূপা দেওয়ান। অন্যান্যর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ব্লাস্ট’র প্রধান কার্যালয়ের এডভোকেসি এন্ড কমিউনিকেশন সেলের উপপরিচালক মাহবুবা আক্তার, সিনিয়র রিসার্চার এডভোকেট রেজা সিদ্দিকি, ব্লাস্টের প্রধান কার্যালয় এর এডভোকেসি অফিসার ফারজানা ফাতেমা এবং রাঙামাটি ইউনিটের এডভোকেসি অফিসার কনিম চাকমা। সভার সঞ্চালনা করেন ব্লাস্ট রাঙামাটি ইউনিটের সমন্বয়কারী এডভোকেট জুয়েল দেওয়ান। এছাড়া মুক্ত আলোচনায় ফারুয়া ইউনিয়নের হেডম্যান, কার্বারী, সাধারণ জনগণ, শিক্ষক, অত্র ইউপি ওয়ার্ড সদস্য , কৃষিজীবীরা অংশ নেন।
উল্লেখ্য, বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসীগণের অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, বিশেষ করে বিভিন্ন বন মামলায় তাঁরা যেভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন তা থেকে নিষ্কৃতি লাভে করণীয় নির্ধারনের জন্য এ এডভোকেসী সভার আয়োজন করা হয়।
সভার প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিলাইছড়ি উপজেলার চেয়ারম্যান শুভমঙ্গল চাকমা বলেন, হয়রানিমূলক বন মামলায় অনেকে বিলাইছড়ি উপজেলায় যেতে পর্যন্ত ভয় পান, এ ধরনের মামলার আসামীদের আইনী সহায়তা নেওয়ার জন্য ব্লাস্টের কাছে যাওয়ার জন্য তিনি অনুরোধ করেন।
মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিরূপা দেওয়ান তার বক্তব্যে ফারুয়া অঞ্চলের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কি ধরনের কর্মপন্থা অবলম্বন করা যায় তা নির্ধারন করার দায়িত্ব সবার এ বিষয়টা তিনি পলিসি লেভেলে জানাবেন বলে জানান।
সভাপতির বক্তব্য তেজেন্দ্রলাল তঞ্চঙ্গ্যা বলেন,উন্নয়নের জন্য অবকাঠামো দরকার কিন্তু সেই কাঠামো এই ফারুয়াতে কখনো হয়না কারণ জমির কোন মালিকানা নাই। বিদ্যালয়ের অনেক প্রয়োজন থাকলেও এখানে করা সম্ভব নয় কারণ সব সংরক্ষিত ।
মাহবুবা আক্তার সভায় উপাস্থিত ধারনা পত্রে বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বসবাসকারী আদীবাসীদের বিরুদ্ধে বন আইনে দায়ের করা মামলা ও বিভিন্ন মিথ্যা মামলা থেকে অব্যহতি প্রদান এর বিষয়ে করনীয় নির্ধারণ, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কি ধরনের কর্মপন্থা অবলম্বন করা যায় এবং বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের সংরক্ষিত বনাঞ্চলকে অবমুক্তি করার বিষয়ে কর্ম কৌশল নির্ধারন বিষয়ে তুলে ধরেন।
এডভোকেট রেজা সিদ্দিকি বন আইন ১৯২৭ এর অধ্যায় দুই, প্যারা ৩-২৭ ধারা দ্বারা সংরক্ষিত বন এলাকায় নিয়ন্ত্রণ করা হয়,সরকার কিভাবে জমি অধিগ্রহণ করতে পারে, কিভাবে সংরক্ষিত বনাঞ্চল গঠন করতে পারে, কখন দাবি প্রত্যাখ্যান করা হয় এবং সরকারের কি করনীয় এ সব বিষয়ে উপস্থিত অংশগ্রহণকারীদের কাছে তুলে ধরেন।
সঞ্চালক এডভোকেট জুয়েল দেওয়ান বলেন, তৃণমূল পর্যায় থেকে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে পলিসি লেভেলে তুলে ধরার জন্যই এ সভা যা ভবিষ্যতে এ এলাকার উন্নয়নমূলক কর্মকৌশল নির্ধারণে আরও সহায়ক হবে।
সভায় মুক্ত আলোচনায় উপস্থিত ফারুয়া ইউনিয়নের হেডম্যান, কার্বারী, সাধারণ জনগণ, শিক্ষক, ইউপি ওয়ার্ড সদস্য, কৃষিজীবি সবাই হয়রানিমূলক বন মামলার নিজ নিজ অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এবং এ থেকে অবিলম্বে মুক্তি চান।
এছাড়া স্থানীয় জনসাধারন তাদের দূর্দশার চিত্র তুলে ধরে আরো বলেন, ইউনিয়ন হলেও প্রশাসনিক যে কোন ধরনের নুন্যতম সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত। স্বাস্থ্য সেবার সুযোগ নেই, ডাকঘর,ব্যাংক-বীমা, স্কুল-কলেজ রাস্তাঘাট বিদ্যুত কোন কিছু এখানে নেই। কারণ এখানে কোন ব্যক্তি মালিকানা জমি নেই, সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে সব বন বিভাগের আওতায়। যতদিন এ জায়গার অবমুক্তি না ঘটবে ততদিন এ অবস্থা থেকে কোন ধরনের উত্তরণ সম্ভব নয়, বরঞ্চ বংশপরম্পরায় এ ধারা বহমান থাকবে। তারা সরকারের কাছে থেকে এ অবস্থার থেকে আশু মুক্তির দাবী জানান।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.