রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানিতে দ্রুত বর্ধনশীল কচুরীপানার জঞ্জালের কারণে হ্রদে নৌ চলাচল মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এতে করে একদিকে নৌপথে চলাচলকারী সাধারন যাত্রীদের ঝুকিপূর্ন হয়ে উঠেছে অন্যদিকে হুমকিতে পড়েছে মৎস্য উৎপাদনেও।
জানা গেছে, ১৯৬০ সালের দিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য রাঙামাটির কর্ণফুলী নদীর ওপর বাঁধ দেওয়া হয়। এতে ২৫৬ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে কাপ্তাই হ্রদের সৃষ্টি হয়, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ হ্রদ হিসেবে পরিচিত। এ হ্রদ সৃষ্টির ফলে রাঙামাটির ১০ উপজেলার মধ্যে ৬টি উপজেলা- বরকল, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, লংগদু, বাঘাইছড়ি ও নানিয়ারচরের সঙ্গে যোগাযোগ মাধ্যম হয়ে ওঠে নৌপথ। এসব উপজেলার মধ্যে নানিয়ারচর, লংগদু ও বাঘাইছড়িতে সড়ক যোগাযোগ থাকলেও বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলার সঙ্গে একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম হচ্ছে নৌপথ। এসব উপজেলাবাসীকে উৎপাদিত কৃষিপণ্য নেওয়াসহ জীবনের তাগিদে ইঞ্জিন চালিত বোটযোগে প্রতিনিয়ত রাঙামাটি শহরে আসা-যাওয়া করতে হয়। কিন্তু প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও বর্ষা মৌসুমে ভারী বর্ষনের কারণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের তোড়ে ভেসে আসা কাপ্তাই হ্রদের বিভিন্ন স্থানে যত্রতত্র কচুরীপানা স্তুুপ জমে গেছে। এর মধ্যে রাঙামাটির সদর উপজলার বালুখালী ইউনিয়ন পরিষদ এলাকা,বরকল উপজেলার শিলেকঢাক,মাইসছড়ি, আলাম্বা,বিল্লোছাড়া,শুভলং এলাকা, জুরাছড়ি,নানিয়ারচর, লংগদু, বাঘাইছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলার যাওয়ার নৌ রুটের কয়েকটি এলাকা, শহরের রিজার্ভ বাজারস্থ হ্রদ এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে কচুরীপানার জঞ্জালের স্তুপ জমে গিয়ে নৌ চলাচল মারাতœকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে হ্রদে চলাচলকারী ইঞ্জিন চালিত বোট, লঞ্চ কচুরিপানায় আটকা পড়ছে। অনেক সময় ঘটছে দুর্ঘটনাও। বিশেষ করে রাতের বেলায় বিপদজনক হয়ে উঠেছে। ফলে এতে সাধারন মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এদিকে,হ্রদের বুকো কচুরিপানা জঞ্জালের কারণে এতে বিপাকে পড়েছেন মৎস্য ব্যবসায়ীরা। ভোগান্তিতে রয়েছেন জেলেরাও। অনেক সময় কচুরিপানার কারণে জেলেদের জালও নষ্ট হচ্ছে। ফলে কাপ্তাই হ্রদের মৎস্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়া কমছে রাজস্ব আয়ও। ভরা মৌসূমে মাছ না পেয়ে লাভের চেয়ে লোকসান গুনছেন মৎস্য ব্যবসায়ীরা। এছাড়া রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা পর্যটকরা হ্রদের বুকে কচুরিপানা সয়লাভের কারণে অবাধে ঘুরতে পারছেন না। এসব স্তুপ সরাতে প্রশাসন এগিয়ে আসছে না বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। ভুক্তভোগীদের দাবী কচুরিপানা অপসারণ করা খুবই জরুরী।
উল্লেখ্য, গত বছর শুভলং ঝর্ণা থেকে ইঞ্জিনচালিত বোটে করে ফেরার পথে কচুরিপানার জঞ্জাল স্তুপে একদল পর্যটক আটকে পড়েন। অনেক চেষ্টা করেও পর্যটকরা করেও জঞ্জালের স্তুপ সরাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৯৯৯-এ ফোন করেন। এতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে এক ঘন্টা কচুরিপানা পরিষ্কার করে বোটটি (পর্যটকদের) উদ্ধার করতে সক্ষম হন।
বিলাইছড়ি উপজেলার ইঞ্জিন বোট চালক জুয়েল চাকমা ও মুক্ত রঞ্জন চাকমা জানান, উপজেলার কয়েকটি স্থানে কচুরিপানা জঞ্জালের কারণে ঝুকি নিয়ে বোট চালাতে হচ্ছে। বিশেষ করে রাতের বেলায় অত্যান্ত বিপদজনক হয়ে উঠেছে। কচুরিপানার কারণে যেখানে কম লাগছে সেখানে অনেক সময় অপচয় হচ্ছে।
রাঙামাটি লঞ্চ মালিক সমিতির নেতা মোঃ নাজিম আহমেদ জানান, কচুরিপানার জঞ্জালের কারণে লংগদু, বরকল, জুরাছড়ি ও বাঘাইছড়ি নৌ রুটের লঞ্চ চলাচল হুমকিতে পড়েছে। এতে কচুরিপনার কারণে ইঞ্জিন বিকল হচ্ছে। হ্রদ থেকে কচুরিপানা অপসারণ করা না হলে এ সমস্যা আরও প্রকট আকারে ধারণ করবে।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশণ(বিএফডিসি) রাঙামাটির ব্যবস্থাপক লেঃ কমান্ডার মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন,, মৎস্য উৎপাদনের বড় বাঁধা এসব কচুরিপানা। এ সমস্য নতুন নয় দীর্ঘ বছর ধরে রাঙামাটিবাসি এ সমস্যায় ভুগছেন। তারপরও কচুরিপানা অপসারণে নেই কোন কার্যত উদ্যোগ। পাহাড়ি ঢলের কারণে কচুরিপানার সাথে ভেসে আসা কাঠ, বাঁশের কারণে জেলেদের জাল ছিড়ে যাচ্ছে। এছাড়া ভাসমান কচুরিপানার কারণে জাল ফেলা সম্ভব হচ্ছে না। কাপ্তাই হ্রদের কচুরিপানা অপসারণ এখন সময়ের দাবি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর কাপ্তাই হ্রদে কচুরিপানা একটু বেশী রয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একার পক্ষে এসব কচুরিপানা অপসারণ করা সম্ভব না। তাই রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ(বিআইডবিøউটিএ) সাথে আলোচনা করার পর সমন্বয়ের মাধ্যমে হ্রদ থেকে কচুরিপানা অপসারনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.