পূরাতন বছরের সমস্ত গ্লানি দূঃখ-কষ্টকে দূর করে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে বৃহস্পতিবার রাঙামাটিতে মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী জলকেলী(পানি খেলা) উৎসব ও সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উৎসবের উদ্ধোধক ও প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম দেশের বোঝা নয়,দেশের সম্পদ। ৭৫”র পরবর্তী ও ৯৭”র আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে আনন্দঘন পরিবেশে বৈসাবী ও বাংলা নববর্ষ বরণ উৎসব করা ছিল স্বপ্নের মতো। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর ও পার্বত্য শান্তি চুক্তি সম্পাদনের পর থেকে এখানে এ উৎসব সার্বজনীন ও আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপিত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সংঘাত কখনো শান্তি আনতে পারবে না। যে কোন সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। পার্বত্য শান্তি চুক্তি পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন না হলেও যেসব সমস্যা চিহ্নিত করা গেছে তা অচিরেই সমাধান করা হবে।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে ভূমি সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানের জন্য পার্বত্য ভুমি কমিশন আইনের বিল সংশোধনের জন্য চেষ্টা চলছে। আশা করি আগামী সংসদ অধিবেশনে বিলটি উত্থাপন করা হবে।
মারমা সাংস্কৃতিক সংস্থা(মাসাস)এর কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গাল হালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত উৎসবের সভাপতিত্ব করেন মারমা সাংস্কৃতিক সংস্থা(মাসাসের)এর উদেষ্টা উথিন চিং মারমা। বিশেষ সন্মানিত অতিথি ছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন তিন পার্বত্য সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ ফিরোজা বেগম চিনু, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈ হ্লা,রাঙামাটি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ সানাউল হক পিএসসি,জেলা প্রশাসক সামসুল আরেফিন, পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান।
উৎসবের শুরুতে ফিতা ও পানি ছিটিয়ে দিয়ে ঐতিহ্যবাহী জলকেলী উৎসবের উদ্ধোধন করেন প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি। এর পর মারমা তরুন-তরুনীরা একে অপরকে পানি ছিনিয়ে দিয়ে আনন্দে উৎসবে মেতে উঠেন। উৎসবে হাজার হাজার মারমা সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ ছাড়াও অন্যান্য জনগোষ্ঠীর লোকজন অংশ নেয়ায় মিলন মেলায় পরিণত হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু, সাংগ্রাইং, বৈসুক, বিষু উৎসবের চার দিন ছুটির জন্য পার্বত্য মন্ত্রনালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানোর পর প্রধানমন্ত্রী তার অনুমোদন করেছেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ইসলাম ধর্মের পাশাপাশি অন্যান্য সকল সম্প্রদায়ের ধর্মের ব্ষিয়টি ও সংবিধানে অন্তভূক্ত করেছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর অধিকারের বিষয়টি ও সুনিশ্চিত করেছেন। এসব সফলতা হচ্ছে আওয়ামীলীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের।
সন্মানিত অতিথির বক্তব্যে সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার বলেন, একসময় পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর সাংবিধানিক কোন পরিচয় ছিল না। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর সাংবিধানিক নিশ্চিত করেছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর উৎসব বৈসাবীর প্রতি সম্মান জানিয়ে ৪দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে। এর মাধ্যমে আবারো প্রমানিত হলো একমাত্র আওয়ামীলীগই অসাম্প্রদায়িক জনবান্ধব রাজনৈতিক দল। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পার্বত্য এলাকার জনগনের কল্যাণে অনেক কাজ সম্পন্ন করা হলে ও এখনো অনেকে আওয়ামীলীগকে নিয়ে বিভিন্ন বিভান্তিমূলক কথাবার্তা বলেন। আওয়ামীলীগের প্রতি বিশ্বাস রেখে এসব হতাশাব্যঞ্জক বক্তব্য না দিতে তিনি সকলকে আহবান জানান।
তিনি বলেন, জনগন বিএনপির ৯৩দিনের ধংসাত্মক কর্মসূচী দেখেছে। এতে করে বিএনপি লাভবান হয়নি, দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, জনগন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং তারা জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের জন্য ক্ষতিকর এমন দল ও কর্মসূচীর প্রতি জনগন আর সমর্থন দিচ্ছে না।
উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু, সাংগ্রাইং, বৈসুক, বিষু-কে কেন্দ্র করে প্রতি বছর মারমা সম্প্রদায় কেন্দ্রীয়ভাবে পূরাতন বছর বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করে নিতে এই ঐতিহ্যবাহী জলকেলী উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.