রাঙামাটিতে বৌদ্ধধর্মীয় মহাসাধাক শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের রোববার বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ১০তম পরিনির্বাণ দিবস পালিত হয়েছে।
এ উপলক্ষে রাঙামাটি সদরের যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্র দিনব্যাপী কর্মসূচির মধে পুষ্পম্যাল্য অর্পন, পঞ্চশীল প্রার্থনা, বুদ্ধপূজা, ত্রিপিটক পূজা, সংঘদান, অষ্টপরিস্কার দান, বুদ্ধমূর্তি দান ও ধর্মীয় সভার আয়োজন করা হয়। বনভান্তের অমৃতময় বাণীর উদ্ধৃতি দিয়ে পুণ্যার্থীদের মাঝে ধর্মদেশনা দেন, দীঘিনালা বন বিহারের অধ্য ভদন্ত শ্রীমৎ শুভবর্ধন মহাস্থবির, ধুতাঙ্গটিলা বিহারের অধ্য ভদন্ত শ্রীমৎ দেবধাম্মা মহাস্থবির,সাজেক বনবিহারের বিহার অধ্যক্ষ ভদন্ত শ্রীমৎ ধ্যানমতি ভিক্ষুসহ যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্রের বিহার অধ্যক্ষ কল্যাণজ্যোতি মহাস্থবির প্রমুখ।
এসময় ধর্মীয় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য বিপুল ত্রিপুরা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি পূর্ণচক্র চাকমা। পঞ্চশীল প্রার্থনা পাঠ করেন বিহার পরিচালনা কমিটির অর্থ সম্পাদক প্রদীপ চাকমা। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বিহার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রূপক চাকমা। এছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিহার পরিচালনা কমিটির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক প্রভাত চাকমাসহ বিহার পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ প্রমূখ। যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্র বিহার পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে গুনীজনদের দেওয়া হয় সম্মাননা স্মারক। অনুষ্ঠানে দূর-দূরান্ত থেকে হাজারো বৌদ্ধ পুণ্যার্থী অংশ নেন। এ উপলক্ষে নানা রঙে তৈরি তোরণ ও বেলুনে সাজানো হয় গোটা বিহার এলাকা। বিকালে প্রজ্জালন করা হয় মঙ্গল প্রদীপ।
খাগড়াছড়ি পানছড়ি থেকে যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্রে আসা পূণ্যার্থী পহেল চাকমা বলেন,‘পার্বত্য চট্টগ্রামে সুউচ্চ পাহাড়ে অবস্থিত যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্রে প্রথমবার আসছি পূজ্য বনভান্তেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে। প্রায় ৫০ মিনিটের মত হেঁটে পাহাড় উঠে বিহারে পৌঁছতে হয়েছে। কষ্ট হলেও এখানে এসে খুব খুশি হয়েছি।’
নিজেনী চাকমা বলেন,‘প্রতি বছর পূজ্য বনভান্তেকে শ্রদ্ধা জানাতে বিহারে আসি। ১০ বছর আগে পূজ্য ভান্তেকে হারিয়েছি। তবে তাঁর প্রচারিত বৌদ্ধধর্মকে বিশ^াস করে বিহারে আসছি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য।’
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য বিপুল ত্রিপুরা বলেন,‘পূণ্যভূমি এ উঁচু পাহাড়ে পূণ্যার্থীরা আসেন মূলত বনভান্তেকে শ্রদ্ধা করে। তাঁর স্মৃতি এখানে অনেক রয়েছে। এ প্রথম যমচুগ বিহারে আসা। বিহারের আশে পাশে ঘুরে দেখেছি। বিহার এখনও উন্নত হয়নি। সব ধরনের প্রতিষ্ঠান বিহার উন্নয়নে এগিয়ে আসতে হবে। তখন বৌদ্ধধর্ম প্রচারের পাশাপাশি বিহার উন্নয়ন সম্ভব হবে।’ পরে তিনি বিহার উন্নয়নে ২০ লাখ টাকা সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দেন।
অপরদিকে বনভান্তের ১০তম পরিনির্বাণ বার্ষিকী উপলক্ষে রাঙামাটি রাজবন বিহারে ধর্মীয় সভাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এছাড়া নানিয়ারচরের রত্নাংকুর বন বিহারসহ বিভিন্ন শাখা বনবিহারে আয়োজন করা ধর্মীয় সভাসহ নানান অনুষ্ঠান।
উল্লেখ্য,২০১২ সালের ৩০ জানুয়ারী ৯৩ বৎসর বয়সে পরিনির্বাণ(দেহত্যাগ) লাভ করেন। তিনি ১৯২০ সালের ৮ জানুয়ারী রাঙামাটি সদর উপজেলার মগবান ইউনিয়নের মোড়ঘোনা গ্রামের জন্ম গ্রহন করেন। বর্তমানে বনভান্তের মরদেহটি বিজ্ঞান ও বিনয় সম্মতভাবে পেটিকাবদ্ধ(বিশেষ কফিন) অবস্থায় রাঙামাটির রাজ বন বিহারে রাখা হয়েছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.