পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পষিদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা(সন্তু লারমা) বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ১৭ বছর পেরিয়ে গিয়ে ১৮ বছর হতে চললেও চুক্তি বাস্তবায়নে কোন শুভ দিক দেখা যাচ্ছে না। বরাবরের মত প্রত্যেকটি সরকার আদিবাসী জুম্মদের অস্তিত্বকে বিপন্ন করার জন্য নানান ধরনের উদ্যোগ গ্রহন করে থাকে। পাশাপাশি উন্নয়নের নামে জুম্ম জনগনের অস্তিত্ব ধ্বংসের বাস্তবতা খুঁজে পাওয়া যায়।
সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগনের অস্তিত্ব বিলুপ্তির জন্য তথা পার্বত্য চট্টগ্রাম বুকে ইসলামিক মৌলবাদ জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মুসলিম অধ্যূষিত পরিণত করতে যড়যন্ত্র চলছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
তিনি আরও বলেন, যদিও আনন্দঘন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু বিহু পালন করছি। কিন্তু এ অনুষ্ঠান পালনের মধ্য জুম্ম জনগন ভুলে যেতে পারে না তাদের জীবনের উপর যে নিমর্ম বাস্তবতা। সেই বাস্তবতা আমাদেরকে সন্দিহান গড়ে তুলে যে আমাদের প্রতি মহুর্তে জীবন কিভাবে থাকবে ও কিভাবে চলছে।
শনিবার রাঙামাটি স্টেডিয়ামে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু বিহু-এর উদযাপন কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সন্তু লারমা এসব কথা বলেন।
জুম্ম জনগনের যে মৌলিক অধিকার রয়েছে তা শাসক গোষ্ঠী দিতে চায় না অভিযোগ করে সন্তু লারমা বলেন, মৌলিক অধিকার দিতে চায় না বিধায় পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধানের জন্য ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। কিন্তু সেই চুক্তি বাস্তবায়িত হতে পারছে না। তাই পার্বত্য চুক্তি যদি বাস্তবায়িত না হয়ে থাকে তাহলে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু বিহু-এর যে অনুভুতি, উপলদ্ধি সেই বাস্তবতা থাকতে পারে না। তিনি এ উৎসবের উদযাপনের মধ্য দিয়ে উজ্জীবিত ও প্রেরণা নিয়ে মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই সংগ্রামে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, কিছু দিন আগে পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রনালয় থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদকে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু বিহু-এর উৎসবকে পরিবর্তন করে বৈসাবি নামকরণ করার জন্য চিঠি এসেছিল। এতে আঞ্চলিক পরিষদের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে বৈসাবি নামে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জাতি তথা কোন জাতির সামাজিক অনুষ্ঠান নেই। তাই এটাও একটা অস্তিত্বকে ধ্বংস করার একটা অন্যতম দিক ও ষড়যন্ত্র। তিনি বলেন, আঞ্চলিক পরিষদ থেকে এ উৎসবের জন্য চার দিন ছুটি মঞ্জুর করার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে পার্বত্য মন্ত্রনালয় তথা সরকারকে। কিন্তু সরকার তার কোন প্রাধান্য দিচ্ছে না।
সন্তু লারমা যুব সমাজকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ভিন্ন ভাষাভাষি জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব বিলুপ্তিরকরণের ষড়যন্ত্র অনেক দূর এগিয়ে গেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বুকে ইসলামিককরণের ষড়যন্ত্রের বিস্তৃতি অনেক ঘটে গেছে। তাই জুম্ম জনগনের অধিকার প্রতিষ্ঠা পেতে হলে যুব সমাজকে আরও বেশী করে আন্দোলনে যুক্ত হয়ে সংঘবদ্ধভাবে সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হবে।
বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু বিহু-এর উদযাপন কমিটির সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন ২৯৯নং রাঙামাটি আসনের নির্বাচিত সাংসদ উষাতন তালুকদার, বিশিষ্ট সাহিত্যক শিশির চাকমা। স্বাগত বক্তব্যে রাখেন বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু বিহু-এর সমন্বয়ক বিজয় কেতন চাকমা। আলোচনা সভা শেষে গিরিসুর শিল্পী গোষ্ঠীর মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা পরিবেশিত হয়।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.