পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা দেশের সর্ব বৃহৎ বৌদ্ধ মন্দির রাঙামাটির রাজ বন বিহারে বৃহস্পতিবার থেকে দুদিন ব্যাপী প্রধান ধর্মীয় উৎসব দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে।
রাজ বন বিহার পাশে অবস্থিত রাঙামাটির রাজ বন বিহারের ৪৬তম কঠিন চীবর দানোৎসবের গতকাল বিকালে প্রথম দিনে পুন্যবতী উপাসিকা বিশাখা কর্তৃক প্রবর্তিত নিয়মে ২৪ ঘন্টার মধ্যে চরকা সূতা কাটা থেকে কাপড় তৈরীর স্থান বেইন ঘর উদ্ধোধন করেন চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়। এছাড়া চাকমা রাজা চরকায় তুলা থেকে সূতা কাটা উদ্ধোধন করেন। এর আগে বেইন ঘরে আগত পুর্নার্থীদের পঞ্চশীল প্রার্থনা প্রদান করেন রাঙামাটি রাজ বন বিহারের ভিক্ষু-সংঘের প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির। এ সময় অন্যান্যর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজ বন বিহার উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সভাপতি গৌতম দেওয়ান, জাতীয় মানবধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরুপা দেওয়ান, আইনজীবি সুস্মিতা চাকমা প্রমুখ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চাকমা রাজা দেবাশীষ রায় সবাইকে শান্তিপূর্ন ও যথাযথ মর্যাদায় কঠিন চীবর দানোৎসব পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেন,২৪ ঘন্টার মধ্য দিয়ে তৈরীকৃত কঠিন চীবর দানের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি সংরক্ষিত হবে অন্যদিকে বুনন ও বয়ন শিল্পের সাথে আড়াই হাজার বছর পূর্বের বৌদ্ধ কৃষ্টির সাথে সংমিশ্রন ঘটবে। তার পাশাপাশি এ কঠিন চীবর দান সম্পাদনের মাধ্যমে সর্ব জীবের মঙ্গল বয়ে নিয়ে আসবে এবং সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে একটা সুসম্পর্ক সৃষ্টি হবে।
উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির দেশ ও বিশ্বের সকল প্রাণীর হিতো মঙ্গল, শান্তি ও সুখ কামনা করে বলেন, ২৪ ঘন্টার মধ্যে যে চীবর তৈরী করা হবে তা একাগ্রচিত্তে, মনচিত্ত ও একতাবদ্ধ হয়ে কার্য সুসম্পন্ন করতে হবে। এর ফলে অফুরন্ত পূর্ন রাশির প্রাপ্তি, আনন্দ-সুখ- প্রীতি লাভের সম্ভব হবে।
রাজ বন বিহার পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, এ বছর বেইনের (কোমড় তাঁত) মাধ্যমে সেই সূতা, কাপড় বুনন, রং ও সেলাই করে চীবর(রং বস্ত্র) তৈরীতে দেড় শতাধিক প্রায় প্রায় এক হাজার পূর্নার্থী সারারাত চীবর প্রস্তুত করবেন। ২৪ ঘন্টার মধ্যে তৈরীকতৃ চীবর আজ শুক্রবার বিকাল ৩টায় ধর্মীয় অনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে লক্ষাধিক পূনার্থীর উপস্থিতিতে ভিক্ষু সংঘের উদ্দেশ্য দান করা হবে।
এদিকে, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও তিন পার্বত্য জেলা থেকে বিপুল বৌদ্ধ পূনার্থী ছাড়াও পাশ্ববর্তী ভারতসহ কয়েকটি বৌদ্ধ ধর্মালম্বী দেশ থেকে পূর্নার্থীদের সমাগম ঘটেছে। এছাড়া এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে রাজ বন বিহারের পাশে বিভিন্ন সামগ্রির মেলার দোকান বসেছে।মেলায় আদিবাসীদের তৈরী হস্তশিল্প, বস্ত্র, ধর্মীয় গানের সিডি ক্যাসেড, বইপত্র, নানান স্বাদের খবরসহ বিভিন্ন পণ্যর সমাহার ঘটেছে। এছাড়া বিনোদনের জন্য নাগরদোলাসহ নানান খেলাধুল্ওা বসেছে।কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশের পাশশাপাশি সাদা পোশাকে পুলিশ ও গোয়েন্দারা মাঠে থাকবে।
উল্লেখ্য, প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে ভগবান গৌতম বুদ্ধের জীবব্দশায় মহাপূর্নবতী বিশাখা কর্তৃক প্রবর্তিত ২৪ ঘন্টার মধ্যে সূতা কাটা শুরু করে কাপড় বয়ন, সেলাই ও রং করাসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করা হয় বলেই একে কঠিন চীবর দান হিসেবে অভিহিত করা হয়।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.