সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ৬০ জন নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে বরকল থানায় ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে মামলা প্রত্যহারের দাবী জানিয়েছে সংগঠনটি।
সোমবার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক গুণেন্দু বিকাশ চাকমার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বার্তায় এ দাবী জানানো হয়েছে।
প্রেস বার্তায় বলা হয়, রাঙামাটির বরকল উপজেলার সুবলং এলাকায় গেল ২৭ জুন স্মৃতিময় চাকমা ওরফে কোকো নামে সুধাসিন্ধু-তাতিন্দ্র-এর নেতৃত্বাধীন সংস্কারপন্থীদের একজন সশস্ত্র সন্ত্রাসী চাঁদাবাজি করতে গিয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের গুলিতে নিহত হয়। এ ঘটনার সাথে কেন্দ্র করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য ও সমর্থক ৬০ জনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করা হয়।
প্রেস বার্তায় আরো দাবী করা হয়, ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা ও চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনরত জনসংহতি সমিতির নেতৃত্ব ধ্বংস করার হীন উদ্দেশ্যে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী, পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত আইন-শৃংখলা বাহিনীর কর্তৃপক্ষ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীকে নানাভাবে মদদ প্রদান করে আসছে। ২০০৭-২০০৮ সালে দেশে জরুরী অবস্থা চলাকালে কায়েমী স্বার্থবাদী মহল কর্তৃক সুধাসিন্ধু-তাতিন্দ্র নেতৃত্বাধীন সংস্কারপন্থীদের জন্ম দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে চুক্তি বিরোধী সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করা হয়। তারই অংশ হিসেবে গেল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী ও সংস্থা কর্তৃক পূর্ণ নিরাপত্তা ও সহায়তা দিয়ে সশস্ত্র সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসীদেরকে বাঘাইছড়ি, লংগদু, নানিয়ারচর, কাপ্তাই ও রাজস্থলীতে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তারা অস্ত্রের মুখে অবাধে চাঁদাবাজি ও একের পর এক হত্যাকান্ড চালিয়ে যেতে থাকে। ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী ও সংস্থা একইভাবে স্থানীয়ভাবে মগ পার্টি নামে খ্যাত বিদেশী সন্ত্রাসী সংগঠন আরাকান লিবারেশন পার্টির (এএলপি) সশস্ত্র সন্ত্রাসীদেরকে বান্দরবান সদর উপজেলা এবং রাঙামাটি জেলার রাজস্থলী ও কাপ্তাই উপজেলায় নিয়ে এসে এসব এলাকায় তাদেরকে অবাধে একের পর এক হত্যা, অপহরণ, হুমকি ও চাঁদাবাজি চালিয়ে যেতে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতে থাকে বলে অভিযোগ করা হয় প্রেস বার্তায়।
প্রেস বার্তায় দাবী করা হয়, সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনকে মদদ দিয়ে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস চালানো এবং কোন ঘটনা ঘটলেই জনসংহতি সমিতির সদস্য ও প্রতিবাদী ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করার ক্ষমতাসীন মহল ও সংস্থার ষড়যন্ত্রের সর্বশেষ ঘটনা সংঘটিত হয় গেল ২৭ জুন । ওদিন চাঁদা আদায়ের উদ্দেশ্যে সুবলঙে অবস্থানরত সংস্কারপন্থী দলের তিনজন সশস্ত্র সন্ত্রাসী একটি স্পীড বোট যোগে একটি বালুবাহী দেশীয় বোট ধাওয়া করতে গেলে স্মৃতিময় চাকমা কোকো নামে একজন সংস্কারপন্থী হ্রদের পানিতে পড়ে ডুবে গেলে ঘটনাস্থলে নিহত হয়। এসময় সুবলঙে অবস্থানরত অপর সংস্কারপন্থী সদস্যরা ও সরকারী সংস্থার সদস্যরা গিয়ে বালুবাহী বোট ধাওয়ারত সংস্কারপন্থী সশস্ত্র চাঁদাবাজদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে। কিন্তু অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় যে, সংস্কারপন্থী অস্ত্রধারী ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর মদদে জনৈক প্রীতিময় চাকমা কর্তৃক জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয়, জেলা, থানা ও বিভিন্ন স্তরের সদস্যসহ ৬০ জন নিরীহ ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে উক্ত ঘটনার সাথে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জড়িত করে বরকল থানায় একটি সাজানো, ভিত্তিহীন ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয়।
প্রেস বার্তায় অভিযোগ করা হয়, এধরনের ষড়যন্ত্র চালিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান নস্যাৎ করা হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতার দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে, যা দেশের সামগ্রিক স্বার্থে কখনোই শুভফল বয়ে আনতে পারে না।
প্রেস বার্তায় পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের নিরাপত্তা ও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের স্বার্থে প্রীতিময় চাকমার দায়ের করা জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয়, জেলা, থানা ও বিভিন্ন স্তরের সদস্যসহ ৬০ জনের নিরীহ ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে বরকল থানায় দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা এবং সংস্কারপন্থীদের চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস বন্ধের জোর দাবি জানানো হয়েছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.