রাঙামাত্যা
—সুহৃদ চাকমা
ম’আওঝর রাঙামাত্যা
সাঝন্যের জুম-তুগনোর কাল্লোংবুক্যে জুম্মবী চোগ’ সান,
জিংকানীর বিজোল-আঝার লাঙস্ববনানী দ্বি-চোগত বনজুরে।
ম’ আঝর রাঙামাত্যা,
চলতামঝাঙর সুরকাবচবলা-গাভুরী তজিম আঝা সান
নিত্তাগে আলাঝালা আওঝ ভারন-ভত্তি বিয়েত্রা এগত্তরে
পুন্নিমাবুগ বাগানত লুলং পত্তাপত্তিয়ে সদরর ছাবা আগে।
ম’ আওঝর রাঙামাত্যা,
আউনমাযর ভুলোংফুল’ খবং-দ্য তিন-তেঙি সান
দেবংসি সুঘে খবংয়ান দীপক গদত নাজি-নাজি উধে
রাধামন-ধনপুদি পালার পোত্যা-আমলর রেঙ’ চাগে।
ম’ আওঝর রাঙামাত্যা
পোত্তিদিন বংপাদারত রাধাচুলোফুল পিন্যে নো-নাঙি সান
আরাপাগল্যা উচ্ছোয় থুততো অক্তে-অক্তে গিরগিরে উধে
ঝালাব্বর আওঝে পো-পুদানার মিধে ইজির্যয়।
বাংলা অনুবাদ–-
রাঙামাটি
—সুহৃদ চাকমা
আমার আকাংখার রাঙামাটি,
সন্ধ্যের জুমের মাথায় কুপড়ি পিঠে দাড়াঁনো জুম্মবীর চোখের মতো;
জীবনের পিছল-আশার সুখস্বপ্নগুলো দুচোখে মিতালী করে।
আমার আকাংখার রাঙামাটি,
ঝর্নাচুল-তালাকী যুবতীর বিচিত্র আশার মতো;
অপুরান ইচ্ছার বরদেবতা বিয়েত্রার নিত্য মিলন
পূর্নিমার বুকের বাগানে কামুক-প্রজাপতি প্রেমের আলপনা আঁেক।
আমার আকাংখার রাঙামাটি
অঘ্রানের কাশফুলের ঘোমটা দেয়া থুত্থুরে বুড়ী;
অজানা আনন্দে ঘোমটা দীপক রাগিনী নেচে উঠে
রাধামন-ধনপুদি পালার শেষ প্রহরের উল্লাসে।
আমার আকাংখার রাঙামাটি,
প্রতিদিন ছড়ানো-ছিটানো লালমোরগ ফুলে সাজানো নববধূ
বান-ভাসা উচ্ছাসে ঠোঁট দুটি কেঁেপ কেঁপে ওঠে
স্বপ্ন-কামনায় সন্তান সৃষ্টির মিষ্টি ইশারায়।
**********************************
বার্গী
সুহৃদ চাকমা
কাদিমায ফুত্যে সুদোহলার জুমতুগুনোত জুনোপরহর ফুদিলে
একঝাক সনারঙ মেদোনী-বার্গী উরি যান
মেঘ সেরে কুওর খবং সনারঙ বার্গীজাঙাল জনোপহরে ভিজে মোন
জিংকানীর ঘর-গিরিত্তি-পোচপানা-লুভ-ধাব-আওঝ
কৃঞ্চাগাভুরীর ভরনভিরোন বুগ সান।
মথুরার মেদোনী-বার্গীপাল সোজমেঘ সাজুরি উরি যায়।
জুনোপহরে ভিজে মোন হারেযেয়্যে সুরনত কৃঞ্চার বুগ ভাজি থায়।
বাংলায়
বার্গী
কার্তিকের সতোকলি-ফোটা জুমের আঙিনায় জ্যোৎস্না ফুটলে
এক ঝাঁক সোনালী গর্ভিণী-বার্গী উড়ে যায়
মেঘের আড়ালে কুয়াশার ঘোমটা পরা পাহাড়ের মতো স্বপ্নে।
নীল মেঘ সাতাঁরে সোনালী বার্গীমালা জ্যোৎস্না ভেজা পাহাড়
জীবনের ঘর-ঘেরাস্থালী-ভালোবাসা-স্বপ্ন-কামনা
কৃঞ্চাযুবতীর সুডৌল সুপুষ্ঠ বুকের মতো।
মথুরার গর্ভিণী-বার্গী নীলমেঘ সাতাঁরে উড়ে যায়
জ্যোৎস্না ভেজা পাহাড় হারানো স্মৃতি কৃঞ্চার বুক ভাসমান।
**********************************
কবি সুহৃদ চাকমার জন্মঃ– ২০ জুন ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ, খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার বাগেইছড়ি দোওর-এ গ্রামে।
শিক্ষাঃ– জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাভাষা ও সাহিত্যে বি, এ (অনার্স) ও উচ্চতর এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মঃ– কর্ম জীবনে প্রথমে তিনি বোয়ালখালী অনাথ আশ্রমে এবং রাঙ্গামাটি মোনঘর আবাসিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। পরে মোন ঘর শিশু সদনে ম্যানেজের হিসাবে কর্মরত ছিলেন।
ব্যক্তি জীবনঃ– তিনি প্রথমে জুমিয়া ভাষা প্রচার দপ্তর (জুভাপ্রদ) এবং পরে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বনামখ্যাত সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংগঠন “জুম ঈসথেটিকস কাউন্সিল (জাক)” প্রতিষ্ঠা করেন । তিনি জুম ঈসথেটিকস কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠালগ্নে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি একাধারে কবি, গল্পকার, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও সমালোচক ছিলেন।
তাঁর অবদানঃ– চাক্মা ভাষা ও সাহিত্যে তিনি একটি অনন্য নাম। চাক্মা আধুনিক কবিতার গতানুগতিক ধারাকে পালটে দিতে তিনি নতুন ধারার সৃষ্টি করেন। চাক্মা ভাষা, সাহিত্য ও ঐতিহ্য নিয়ে তার অনেক প্রবন্ধ বাংলাদেশে এবং ভারতের কলকাতায় ও ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন প্ত্র-পত্রিকায় ও সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়। ‘বার্গী’ নামে তাঁর একটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়।
অন্তর্ধ্যানঃ– ০৮ আগষ্ট ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দ।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার--
**কবি মৃত্তিকা চাঙমার সমগ্র থেকে নেয়া কবি সুহৃদ চাকমার সংক্ষিপ্ত জীবনী।**