• Hillbd newsletter page
  • Hillbd rss page
  • Hillbd twitter page
  • Hillbd facebook page
সর্বশেষ
আহত অবস্থায় উদ্ধার করা সাম্বার হরিণটিকে বাঁচানো গেল না                    রাঙামাটিতে সাংবাদিকতা ও ফ্যাক্ট চেক বিষয়ক যুব প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত                    রাবিপ্রবি’র রিজেন্ট বোর্ডের ৭ম সভা অনুষ্ঠিত                    রাবিপ্রবি`র নির্মানাধীন দুটি ভবন থেকে চাঁদার দাবিতে দুর্বৃত্তদের সশস্ত্র মহড়া                    রাঙামাটি জেলা পরিষদে নিয়োগ ও শিক্ষা বৃত্তিতে বৈষম্য বন্ধ না হলে কঠোর আন্দোলন                    রাঙামাটিতে এইচএসসির পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে জেলা প্রশাসক                    বিলাইছড়িতে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন                    রাবিপ্রবি’তে একাডেমিক কাউন্সিলের ১২তম সভা অনুষ্ঠিত                    রাবিপ্রবি’তে পরিকল্পিত বনায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধন                    রাঙামাটিতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে সনাক-টিআইবি’র অ্যাডভোকেসি সভা                    খাগড়াছড়িতে বীর শহীদদের প্রতি আরাফাত রহমান কোকোর ক্রীড়া পরিষদের শ্রদ্ধাঞ্জলী                    সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের গ্রেড উন্নীতকরণের দাবীতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি                    পাহাড়ে খড়ের পরিবর্তে শুকনা কলা পাতায় মাশরুম চাষে সাফল্য                    লংগদুতে গৃহবধূকে ধর্ষন চেষ্টার অভিযোগে এক যুবক আটক                    পাহাড়ে হাতি ও মানুষরে দ্বন্দ্ব কমছে                    রাঙামাটিতে ৮৫ হাজার ৮৬০ শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ প্লাস খাওয়ানো হবে                    শিশুর যৌন নির্যাতনকারী দাদুকে আটক করেছে পুলিশ                    রাঙামাটিতে দাদুর যৌন নির্যতানের শিকার নাতিনী                    রাজস্থলীতে বাচ্চা প্রসবকালে বন্য হাতির মা ও শাবকের মৃত্যু                    সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানসহ আঃলীগের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা                    পাহাড়ে শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার কমাতে মিডওয়াইফারি নার্সিং সেবা বৃদ্ধির উদ্যোগ                    
 
ads

বৌদ্ধদের কঠিনচীবর দানোৎসব এবং চাকমাদের বুনন শিল্প

শুভ্র জ্যোতি চাকমা : হিলবিডি টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 31 Oct 2017   Tuesday

প্রতি বৎসর আশ্বিনী পূর্ণিমা তিথির পরদিন থেকে শুরু হয়ে কার্ত্তিকী পূর্ণিমা পর্যন্ত অর্থাৎ একমাস ধরে সাড়ম্বরে উদযাপিত হয় বৌদ্ধদের কঠিনচীবর দানোৎসব।

 

বৌদ্ধদের বিশ্বাস, অন্য যে কোনো দানের চেয়ে কঠিনচীবর দানে বেশি পুন্যরাশি অর্জিত হয়। পৃথিবীতে যত প্রকারের দান আছে যা একটি কঠিনচীবর দানের তুলনায় ঐ দানের ফল ষোল ভাগের একভাগও হয় না। এ দানকে যে কোনো দানের চেয়ে উত্তম বলে অভিহিত করা হয়। এজন্য বৌদ্ধরা কঠিনচীবর দান করার জন্য উদগ্রীব থাকে। একমাস ধরে এ দানকার্য চলায় প্রতিটি বৌদ্ধ পল্লীতে বিরাজ করে উৎসব উৎসব আমেজ। যেদিন যে বৌদ্ধ বিহারে কঠিনচীবর দানোৎসব চলে সেদিন সেই বৌদ্ধ বিহারের প্রাঙ্গনসহ আশপাশের পুরো এলাকা যেন পরিণত হয় মেলা প্রাঙ্গনে। নানা ধরনের কল্পতরু গাছ তৈরি করে তাতে নগদ টাকাসহ নানা ধরনের দানীয় সামগ্রী ঝুলিয়ে পুণ্যার্থীরা দলে দলে কেউ কেউ ব্যান্ড দলের বাজনার তালে তালে নেচে-গেয়ে অভিষ্ট বৌদ্ধ বিহারে উপস্থিত হয়।

 

তবে শর্ত এই, যে বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বর্ষাবাসব্রত পালন করে থাকেন একমাত্র সেই বিহারে বৎসরে একবার কঠিনচীবর দানোৎসবের আয়োজন করা যায়। এবং বর্ষাবাসব্রত পালন করা বৌদ্ধ ভিক্ষুগণই কঠিনচীবর গ্রহণ করতে পারেন। প্রসঙ্গত যে, আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা তিনমাসের জন্য বর্ষাবাসব্রত শুরু করে আশ্বিনী পূর্ণিমা তিথিতে সমাপ্ত করে থাকেন। এ তিনমাসে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা স্ব স্ব বিহারে একাগ্রচিত্তে অবস্থান করে বুদ্ধদেশিত জ্ঞান আহরণে নিমগ্ন থাকেন এবং ধ্যান-তপস্যা, সাধনায় ব্যতিব্যস্ত থাকেন। তাঁরা আহরিত জ্ঞান-শিক্ষা পরবর্তীতে কঠিনচীবর দানোৎসবে সমবেত সধম্মপ্রাণ দায়ক-দায়িকা এবং সকল জীবের হিতার্থে বিলিয়ে দেন। এভাবে কঠিনচীবর দানোৎসবের মাধ্যমেও বুদ্ধের শিক্ষা-জ্ঞানের বিস্তৃতি বা প্রসারিত হয়ে থাকে। 

 

পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলটি বাংলাদেশের একমাত্র বৌদ্ধ অধ্যূষিত অঞ্চল। এখানকার অধিকাংশ পাহাড়ি মানুষ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। সংখ্যাগরিষ্টের দিক থেকে দেশে চাকমা নৃ-গোষ্ঠীরা বুদ্ধের অনুসারীদের মধ্যে প্রথম অবস্থানে রয়েছে। সুতরাং তাদের মাধ্যমে বৌদ্ধ ধর্মের বিস্তৃতি, প্রসার ও প্রচারের ন্যায় মহৎ কার্যাবলী উল্লেখ্যযোগ্য হারে সম্পন্ন হবে তাতে সন্দেহ নেই। বিগত সময়ে এ ধরনের দৃষ্টান্তই আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। বৌদ্ধ ধর্মের নীতি-আদর্শ বিনির্মাণে এ যাবৎ যে সকল বৌদ্ধ ভিক্ষু অবদান রেখে চলেছেন তাতে চাকমা ভিক্ষুদের অবদান কোনো অংশে কম নয়। সুদূর অতীত থেকে ঐতিহাসিক যোগসূত্র না থাকলে চাকমাদের মাধ্যমে বৌদ্ধ ধর্মের এত উন্নতি বা বিস্তৃতি সম্ভব হতো না বলে মনে হয়। তাদের জাতীয় ইতিহাসের মধ্যবর্তী সময়ে বৌদ্ধ ধর্মের নীতি-আদর্শ কিছুটা বিকৃতি হলেও তারা সধর্ম ত্যাগ করেনি। বরঞ্চ প্রতিকুল পরিবেশেও চাকমারা বৌদ্ধধর্মকে আকড়ে ধরে রেখেছিল। সেটি হতে পারে নিভু নিভু অবস্থায়।

 

পরবর্তীতে চাকমা রানী কালিন্দী ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে আরাকান থেকে সারমেধ মহাস্থবিরকে আমন্ত্রণ করে নিয়ে এসে এতদাঞ্চলে বৌদ্ধধর্মের হীনযান মতবাদ প্রসারে অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। অনেক সমালোচক বলেন, রানী কালিন্দী হিন্দু ধর্মের অনসারী ছিলেন। যা আদৌ সত্য নয়। তিনিতো রাজবাড়ির কাছে মসজিদও নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। আসলে বুদ্ধের শিক্ষা হলো-সকল জীবে দয়া। পালিভাষায় বলা হয়-সব্বে সত্ত্বা সূখিতা হোন্তু। অর্থাৎ জগতের সকল প্রাণি সুখি হোক। বুদ্ধ প্রবর্তিত নীতিতেই রানী কালিন্দী বিশ্বাসী ছিলেন বলে তাঁর রাজবাড়ির ধারে কাছে হিন্দু মন্দির এবং মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। বলা যেতে পারে, সুদূর অতীত থেকে চাকমারা বৌদ্ধধর্মের অনুসারী না হলে রানী কালিন্দী বৌদ্ধ ধর্মের উন্নতি ও প্রসারের জন্য ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হতেন না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, বাংলাভাষায় সর্বপ্রথম বৌদ্ধধর্মের বই প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছিলেন চাকমা রানী কালিন্দী। যদিও তাঁর মৃত্যুর পরে বইটি(বৌদ্ধ রঞ্জিকা) প্রকাশিত হয়েছিল।


আমরা নি:সন্দেহে বলতে পারি স্মরণাতীত কাল থেকে চাকমারা বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। এজন্য সধর্ম প্রচারে, প্রসারে তারা সর্বদা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাভাষায় সর্বপ্রথম পূর্ণাঙ্গ ত্রিপিটিক খন্ড প্রকাশেও তাদের ভূমিকা অগ্রগণ্য। আমরা প্রত্যক্ষ করছি, প্রতি বছর কঠিনচীবর দানোৎসবে কঠিনচীবর বুননেও চাকমারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে নিজস্ব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সুতা তৈরি করে সে সুতাকে রঙ দিয়ে ঐতিহ্যবাহী বেইনে(কোমর তাঁত) কাপড় বুনে চীবর(ভিক্ষুদের পরিধেয় বস্ত্রকে চীবর বলা হয়) সেলাই করা হয়। দিবা-রাত্রী নির্ঘুম নিরলস পরিশ্রম করে বুনন করা চীবর তৈরি করে দান করতে পারলেই যেন সকল মনবাসনা পূরণ হয়। তাই সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে বর্তমানে চাকমা অধ্যুষিত অনেক বৌদ্ধ বিহারে ২৪ ঘন্টার মধ্যে চীবর বুনন করে ভিক্ষুদের দান করা হচ্ছে।

 

এ কঠিন ও দুরূহ কাজটি বৌদ্ধ জাতিদের মধ্যে একমাত্র চাকমারাই সুসম্পন্ন করতে পারে। বৌদ্ধ জাতিদের মধ্যে চাকমাদের এ অবদান নি:সন্দেহে গর্বের। এ অবদানের মাধ্যমে চাকমাদের সুনাম সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। শুধু তাই নয়, বর্তমানে দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে ভারত এবং মায়ানমারেও চাকমাদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে ২৪ ঘন্টার মধ্যে চীবর বুনন প্রক্রিয়া সম্পাদন করে দানপ্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য। চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে চীবর বুনন প্রক্রিয়ায় আমরা দু’টি উদ্দেশ্য সম্পন্ন হতে দেখি। প্রথমত ধর্মীয় দিক থেকে দানপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়, দ্বিতীয়ত ঐতিহ্যবাহী চাকমাদের বুনন শিল্পটিও লুপ্তপ্রায় অবস্থা থেকে রক্ষা পাচ্ছে। আমরা বুঝতে পারলাম, কঠিনচীবর দানোৎসবের সাথে চাকমাদের ঐতিহ্যবাহী বুনন শিল্পটির নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।

 

আমি নিশ্চিত যে, কঠিনচীবর বুননের প্রক্রিয়াটির মাধ্যমে চাকমারা অনেক দূর এগিয়ে যাবে। পাশাপাশি তাদের জাতীয়, ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির শেখরও মজবুত হবে তাতে সন্দেহ নেই। প্রসঙ্গত যে, চাকমারা নিজেদের শাক্যবংশীয় বলে মনে করে থাকে। বুদ্ধ নিজেও ছিলেন শাক্যবংশীয়। সুতরাং জাতিগতভাবে চাকমারা বৌদ্ধধর্মের উত্তরাধিকার লালন-পালন, চর্চা করবে এটিই স্বাভাবিক। সহস্র বছর পূর্বে মহাউপাসিকা বিশাখা কঠিনচীবর দান করেছিলেন। বিশাখার সেই ঐতিহ্য চাকমা বৌদ্ধদের মাধ্যমে এখনো টিকে রয়েছে এটি চাকমাদের জন্য নি:সন্দেহে গর্বের বিষয়।
৩১.১০.২০১৭ খ্রি:


লেখক: শুভ্র জ্যোতি চাকমা, রিসার্চ অফিসার, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, রাঙামাটি। shuvrachakma71@yahoo.com

ads
ads
আর্কাইভ