১৯৯৬ খ্রি: ১৮-১৯ আগস্ট প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র আয়োজিত গণসাংস্কৃতিক জাতীয় কর্মশালা চট্টগ্রামে যোগদানের জন্য রাঙামাটির সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘জুম ঈসথেটিকস্ কাউন্সিল (জাক)’ এর পক্ষ থেকে আমি আর কবি শিশির চাকমা ১৭ আগস্ট বিকাল বেলায় পৌঁছলাম।
আমাদের কর্মশালার ভেন্যু হলো কারিতাস ভবনে। আমাদেরকে দু’সিটের একটি রুম দেওয়া হলো। রাতের খানার সময় ডাইনিং টেবিলে কর্মশালায় অনেক অংশ গ্রহণকারীর সঙ্গে পরিচয় হলো। আমরা দু’জন বাদে রাঙামাটি থেকে আরো দু’একজন যোগদান করতে এসছেন এই মুহূর্তে তাদের নাম আমার মনে নেই, শুধু মনে আছে শিমুল চাকমাকে।
ওখানে জানতে পারলাম কবি সৈয়দ শামসুল হক এসেছেন আমাদের কর্মশালা অংশগ্রহণের জন্য সুদূর ঢাকা থেকে। শুনে মনটা একটু উৎফুল্ল হয়ে উঠলো বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায়ের কবিদের মধ্যে তিনি একজন, আগামীকাল তাহলে কবির সাথে দেখা হচ্ছে। মনে মনে ভাবলাম কর্মশালায় এসে লাভবান হলো এবং নিজেকে খুবই ধন্য মনে করছি। সামান্য লেখালেখির সুবাদে এতবড় লেখকের সাথে কালই দেখা হচ্ছে।
১৮ আগস্ট সকাল নাস্তা ছেড়ে কর্মশালা কক্ষে প্রবেশ করলাম। যার যেখানে সুবিধা মত জায়গায় বসে পরলাম। কিছুক্ষণ পর কবি আসলেন। আমার এখনো মনে আছে, পড়নে সবুজ রঙের জিন্স প্যান্ট আর ইন করা জিন্স শার্ট, বেল্ট লাগানো, জুলফি ফ্রেন্স কার্ট মাথায় বরাবরের মতই চুল নেই। একেবারে অর্ধনেড়া মাথা, বাস্তব চোখে এই প্রথম দেখা, কী স্মার্ট! পত্রিকায় টেলিভিশনে দেখতাম খ্যাতিমান ব্যক্তিদেরকে তার মধ্যে তিনি হচ্ছেন আমার একজন অনুপ্রেরণার উদ্রেককারী। বিভিন্ন সময়ে তাঁর নিজের কবিতা স্বকন্ঠে আবৃতি শুনতে পেতাম, কি ভরাট গলা! আজ থেকে বাস্তবে দেখছি। কর্মশালা চলছে, এর ফাঁকে মনটা একটু ফুড়পুড়ে হয়ে উঠে কবিকে নিয়ে। নিজেকে প্রশ্ন করি ছবিতে দেখেছি পুরোপুরি নেড়া মাথা। এখন দেখছি আসলেই তিনি অর্ধ তাক মাথা। এ রকম নানা প্রশ্ন মনে উদ্রেক হচ্ছে। অনুষ্ঠান যথা সময়ে শুরু হলো। সঙ্গে সঙ্গে পরিচিতি পর্বটাও হলো। ঐ পরিচিতি পর্বের মধ্যে তিনি হয়তো মার্ক করে রেখেছেন আমাদের দু’জনকে।
প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর কর্মশালার অংশ গ্রহণকারীরা কবির কাছে সাক্ষাতের ভিড় করছে। আমরা দু’জন এক পাশ থেকে সেই দৃশ্য দেখছি। সেই ভিড়ের মধ্যে আমাদের থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক, সাহিত্য সংস্কৃতির কথা আলাপ করেন। এইটিই হলো কবির সাথে প্রথম আমার সরাসরি সাক্ষাত।
দ্বিতীয় দিনের কর্মক্রম শেষ হয়ে তার রুমে আমাদেরকে ডেকে নেন। অনেক কাজের কথা হয় তার মধ্যে হেলিকপ্টারে করে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে দেখার সুযোগ হয়েছে বলে একথা শুনালেন। আমরা আমন্ত্রণ জানালাম, দাদা এবার আছেন আমাদের সড়ক পথে। তিনি কথা দিলেন আসবেন। এরপর কবির সাথে দ্বিতীয়বার সাক্ষাত হয় প্রশিকা ভবনে। সেই মিরপুর ১৩ তলায়। সেখানে আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী মানুষের সাহিত্য, সংস্কৃতিসহ নানা বিষয় নিয়ে আলাপ হয়। এক সময় তার একান্ত ইচ্ছায় প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র আমাদের ‘জুম ঈসথেটিকস্ কাউন্সিল (জাক)’কে সহযোগিতার হাত প্রসার করে। সেই সময়ের প্রশিকার কর্ণদ্বার যারা ছিলেন তাদেরকে আজ এ সুযোগে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
তৃতীয় বারের মতো দেখা হয়েছে রাঙামাটি শিল্পকলা একাডেমী মঞ্চে ‘বাংলা একাডেমী’ একটি জেলা পর্যায়ের অনুষ্ঠানের সময়। সেখানেও অনেক কথা হয়েছে কবির সাথে। একটা কবিতার বই প্রকাশ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে বললেন, মৃত্তিকা - আমরা একটি চাকমা বাংলা কবিতা গ্রন্থ করবো। তুমি পান্ডুলিপিটা তৈয়ার কর, আমি কোনো এক প্রকাশককে দিয়ে প্রকাশ করে নেব।
এরপর একদিন হঠাৎ ফোন পেলাম সময় আর তারিখটা মনে নেই। বিষয়টা হচ্ছে- হে ফেসটিভাল ওই অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য। আমার এখনো কানে বাজে, মৃত্তিকা- ভাই তোমার তো ঢাকায় আসতে হবে। তুমি তো জানো আন্তর্জাতিক সাহিত্য সংস্কৃতি বিষয় নিয়ে বাংলা একাডেমীর মাঠে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একটি আন্তর্জাতিক সাহিত্য বিষয়ক অনুষ্ঠান। ওখানে তোমাদের আদিবাসীদের একটা সেশন রাখা হয়েছে। ওই অনুষ্ঠানে তোমাকে যোগদান করতে হবে এবং আলোচনা করতে হবে, ভাই তুমি না করো না। তোমার খাওয়া-দাওয়া, আসা-যাওয়া সব কর্তৃপক্ষ বহন করবে। না করো না ভাই। তারপর যথা সময়ে গেলাম। অনুষ্ঠান করে এলাম, দুঃখের বিষয় তার সাথে দেখা বা তাঁকে জানিয়ে আসতে পারিনি। কারণ তিনি তখন প্রচুর ব্যস্ত । তাই না না জানিয়ে শেষ পর্যন্ত রাঙামাটি ফিরে এলাম। কোন একটি ফোনও দিলাম না, এটিই আমার মনে মনে আপসোস রয়ে গেল। সে পরে অনেকবার ফোনে আলাপ হয়, সুখ দুঃখের কথা সাহিত্য সংস্কৃতির কথা।
আমাদের থেকে লিটল ম্যাগ প্রকাশ হলে তাঁকে পাঠিয়ে দিতাম। পাঠানোর পরে আমি জেনে নিতাম। অথবা তিনি বলতেন মৃত্তিকা তোমার পাঠানো বইগুলো এই আজকে পেলাম। তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তাই আমারও আর বই পাঠানো হয় নি। অতি সম্প্রতি কবির স্ত্রী ডাঃ আনোয়ারা সৈয়দ হক ফোন করে বললেন আমার একটি লেখা দিতে হবে ছোট হোক বড় হোক। আমি বৌদিদিকে কি করে বলি দাদাকে নিয়ে আমি কি লিখবো! আমার তো এতটুকু সাহস বা যোগ্যতাও নেই।
আসলে দাদার সাথে অনেক আমার স্মৃতি জড়িয়ে আছে। বৌদিদির অনুরোধের প্রেক্ষিতে এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিলাম না লিখা তাই ভালো হবে। তাই ছেড়ে দিলাম লিখবো না। এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বৌদিদির আবার ফোন। আর পারি না এবার বোধহয় লেখা না দিলে বৌদিদি দুঃখ পাবেন। দাদার অত্মা হয়তো কষ্ট পাবে। তার ফোন করা কষ্টটা দূর করার জন্য আমার সামান্য অংশ গ্রহণ করা মাত্র। তবে তিনি প্রয়াত হওয়ার আগে তার কিছু কবিতা চাকমা ভাষায় অনুবাদ করেছি সেগুলোর মধ্যে ‘ইতিহাসের পথ হাঁটা লোকের স্বগতোক্তি’কবিতাটি তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এখানে সংযুক্ত করে দিলাম।
চাঙমা অনুবাদ
বিজগর পদত আথ্যা মানুষ্যর ভুদভুদনি
সৈয়দ শামসুল হক
পিধি উগুরে চোলের দের মনি বস্তা
বাজারত নিবেত্যায় যার
নাদংসা উক্ক মানুষ।
মুই কি কবিতে লিঘিম
তারে নিনে ? কঙত্তে, তে মরই আরুক ওক ?
উক্ক মানুষ বৈই আঘে, কেয়্যা হাচ্ছোর
চুলত্তুন চিন্দেই টানের উগুন,
চাবের নককুনিলোই।
তারপরও বৈদ্যর সিধু যেইনে
কী অভ’ মর সিয়েনী
মনর শূলর কধা কোইনে ?
একজন ঝাবেই পল্ল মিজিলত,
মর কবিতে লেখ্যা আত্থই
দিল’ হকিষ্টিগর মুগর।
তারপরও কবিউনর সমারে বৈ
এ মুই আলাবন গোরিম
গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ?
পদ পার অহ্ধে যেই থধর’ ওইয়্যা গুর’
উক্ক আদুর দেগিলুং
আত্থান ধরি গুর’বরে পার গরাদে।
তারপরও মুই যেম
দর্শনশাস্ত্রর বিজগ
আ অস্তিত্ববাদ পরিবেত্যায় ?
উক্ক মানুষ কাঝের খুগ খুগ গোরি,
মুক্তিযোদ্ধা এল-
গোত্তোনিত্তুন লো পরের ।
ইয়েন কি মানেব’ খুব মরে- যুদি কং সিয়েন্দই মিল আঘে
সরানদিনত পজ্যা কবিতের ?
একজন উই ধানকাবা ভূয়োত
আহ্্রুং কারুং দশচো নখকই মাদি আঙুদি
লাগেই দের চারা।
কিঙিরি তুও মুই
কবিতের পর কবিতে লিঘি যেই পারং
মনিপুরি ন’ পাজ্যা রহস্য ?
উই উক্ক রাজমিস্ত্রী আদেক্যা চালত্তুন
পরি গেল’ মরি গেল-
চুদ’ এল’তা পান্তা ভাদর টবা।
তারপরও কীয়েজীর আগুন জ্বালেই
মুই কিঙিরি নুও কন’
বানেই পারিম ?
গম দেগানাত্তুন জিনিশ দেদন কিনিয়্যারে
খাদি জিনিশ কোইনে-
হালিক জিনজিরাত বানেয়্যা নকল।
তারপরও,
ক’ তারপরও আলাবন গোরি পারং
সাধারণ নির্বাচনত জিনিবের শল ?
কজ্জ খেইয়্যাউনে যা বাজেই বেরান বুগফুলেই-
পার্সিয়ান কার্পেট আ মার্সিডিজে
এজ’ টেঙা ঘুচ্ছি মারদন ঝল্ল পল্লয়।
সালেন আর কধক কানেবা-কানেই পারন
তরে তুইদে-তুই
দেখখোস মহিলা সমিতির নাটক ?
ইহ্ঝিব জারকাল্যা রেদোত, কনাথ তুল্যা বেঙা লুলো থেং
তে পরি আঘে দানদারাঙ্যা পধত-
নেই নরম এক্কান খেরও।
তুও মুই ফিরি যেম কুধুম শল্লাত-
আর সাঝন্যাত্তুন রেদ সংভাগ
আলাবন গোরিম পিকাসো ?
উই উক্ক মানুষ কানের মুরগুজি এঘেরেই
রায়র বাজারত চবাশালত
গায় উক্ক মানুষ।
তুও নেতাউনরে মুই
আহ্্ধ কোজোদি কোজোদি মালিশ গরিম,
এবার কিন্তু মরে দিএ্যা পরিব’ একুজর পদক।’
কনহেত্যায় নয় কনহেত্যাত ইখ্্কু কিউয়
বন্দুগত ভরার গুলি, পুঝের মেশিন গান।
আর কধক কিজেক কারিম মুই?
আর কধক টানিম কধক হিঝি
রেজ্যর কান ?
কন’ একজন দেঘঙর উই-দ’
আহ্্ধত কর গনদে গনদে তে-
আহ্ধের বিজগর পধ।
হামাক্কাই অসদ ন’ অহ্লে কিঙিরি মুই
তুও কোই পারং- না, মুই নয়,
মুই নয় বিজগর পধ আহ্ধিয়্যা মানুষ ?
মূল বাংলা কবিতা
ইতিহাসের পথ হাঁটা লোকের স্বগতোক্তি
সৈয়দ শামসুল হক
পিঠের ওপর চালের দেড় মণ বস্তা-
বাজারের দিকে বয়ে নিয়ে চলেছে
গরীব একটা লোক।
আমি কি পদ্য লিখবো
তাকে নিয়ে ?-
বলব, সে আমারই প্রতিচ্ছবি হোক ?
একটি লোক বসে পড়েছে, ঘা চুলকোচ্ছে
চুল থেকে খুঁটে বের করছে উকুন,
টিপছে আঙুলে।
তারপরও ডাক্তারের কাছে গিয়ে
কী হবে আমার সব
মানসিক ব্যাধির কথা তুলে ?
একজন ঝাঁপিয়ে পড়লো মিছিলে,
আমার কবিতা লেখার হাতে
করলো হকিস্টিকের আঘাত।
তারপরও কবিদের সঙ্গে বসে
এই আমি আলোচনা করব
গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ?
রাস্তা পার হতে গিয়ে থমকে আছে শিশু-
এক পঙ্গুকে দেখলাম
হাত ধরে শিশুটিকে সাহায্য করতে।
এরপরও আমি যাবো
দর্শনশাস্ত্রের ইতিহাস
এবং অস্তিত্ববাদ পড়তে ?
একটি লোক কাশছে খক্খ্ক করে,
মুক্তিযোদ্ধা ছিল-
গলা দিয়ে রক্ত পড়ছে তার।
এটা কি মানাবে খুব আমাকে-
যদি বলি এর সঙ্গে মিল আছে
বিজয়দিবসে পড়া কবিতার ?
একজন ওই ফসলের কাটা মাঠে
কংকাল দশটি নখে মাটি চিরে
খুঁটে চলেছে শস্য।
কি করে তারপরও আমি
রচনার পর রচনায় লিখে যেতে পারি
অসীম ও অনন্তের রহস্য ?
ওই এক রাজমিস্ত্রি হঠাৎ ছাদ থেকে
পড়ে গেলো, মরে গেলো-
শূন্য ছিলো তার পান্তাভাতের হাঁড়ি।
তারপরও প্রতিভার আগুন জ্বালিয়ে
আমি কী করে নতুন কোনো
চিত্রকল্প উদ্ভাবন করতে পারি ?
সুপার ষ্টোরে জিনিস দিচ্ছে খদ্দেরকে
খাঁটি জিনিস বলে-
কিন্তু জিঞ্জিরায় বানানো নকল !
তারপরও, বলো তারপরও,
আলোচনা আমি করতে পারি
সাধারণ নির্বাচনে জেতার কৌশল ?
ঋণখেলাপিরা ঘুরে বেড়াচ্ছে বুকটান-
পার্সিয়ান কার্পেটে আর মার্সিডিজে-
এখনো টাকা মারছে দেদার।
তাহলে আর কত কাঁদাবে-কাঁদাতে পারে
আপনাকে আপনি যে-আপনি
দেখছেন মহিলা সমিতির থিয়েটার ?
র্নিজন শীতের রাতে, কাঁধের ওপর বাঁকানো নুলো পা-
ওই শুয়ে আছে কঠিন ফুটপাথে-
নেই নরোম একটি ঘাসও।
তারপরও আমি ফিরে যাবো আড্ডায়-
আর সন্ধ্যে থেকে মধ্যরাত
আলোচনা করবো পিকাসো ?
ওই একজন কাঁদছে বড় নিঃশব্দে
রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে-
একা একটি লোক।
তারপরও নেতাদের আমি
ধরে ধরে তদ্বির করব,
‘এবার কিন্তু আমাকে দিতেই হবে একুশে পদক !’
কোথাও না কোথাও এখন কেউ
বন্ধুকে ভরছে গুলি,
সাফ করছে মেশিন গান।
আর কত চিৎকার করবো আমি ?
আর কত টান দেবো কত জোরে
রাষ্ট্রের কান ?
কেউ একজন দেখছি ওইতো-
হাতে কর গুণতে গুণতে সে
হাঁটছে ইতিহাসের সড়ক।
নিতান্ত দুঃশীল না হলে কী করে আমি
তারপরও বলতে পারি-‘না, আমি নই,
আমি নই ইতিহাসের পথ হাঁটা লোক ?’
শেষ দেখা: ২৭ নভেম্বর ২০১৪ মুনীর চৌধুরী সম্মাননা ও মোহাম্মদ জাকারিয়া স্মৃতি পদক প্রদান অনুষ্ঠান। ২৬ তারিখ রাত্রে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা। পরদিন ২৭ তারিখ আমাকে মুনীর চৌধুরী সম্মাননা পদক প্রদান। সন্ধ্যে বেলায় পদক গ্রহণ করার জন্য ঢাকা শিল্পকলা অনুষ্ঠানে গেলাম। সঙ্গে আমার দু’মেয়ে দ্যানিস আর নিসা। তাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া কয়েকজন ছাত্র এদের মধ্যে আমার স্নেহের ছাত্র শুভকর চাকমা একজন। কিন্তু স্নেহের ছাত্র সুবল চাকমা ব্যস্ততার কারণে অনুষ্ঠানে আসতে পারেনি।
যাই হোক যথাসময়ে অনুষ্ঠান আরম্ভ হলো, এক্সপেরিমন্টাল থিয়েটার হল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী মঞ্চে। মঞ্চে উপস্থাপক একে একে নাম ঘোষণা করে দেওয়ার পর কবি আমাদেরকে মঞ্চের নির্ধারিত স্থানে নিয়ে গেলেন। শুরু হলো বক্তব্য পালা। বক্তব্য শেষ হওয়ার পর পদক প্রদান অনুষ্ঠান।
প্রথমে ঘোষণা করে দেওয়া হলো আমার নাম এবং আমাকে পদক প্রদান অনুষ্ঠানের মেডেল পরিয়ে দিলেন কবি সৈয়দ শামসুল হক এবং পঁচিশ হাজার টাকার একটি চেক আমার হাতে তুলে দিলেন।
পদক গ্রহণ করার পর অভিব্যক্তি প্রকাশের জন্য আমাকে আহ্বান করা হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে তিনি আমাকে চুপি চুপি অনুরোধ করে বললেন ‘মৃত্তিকা, তুমি তোমার চাকমা ভাষায় বক্তব্যটি বল’। আমি তার অনুরোধ রেখে আমার নিজের মাতৃভাষায় অভিব্যক্তি প্রকাশ করলাম এবং সাথে সাথে দর্শক সারি থেকে করতালি মধ্য দিয়ে আমাকে সাদরে গ্রহণ করে নেয়। এটিই হলো তাঁর সাথে আমার শেষ দেখা। কবি আজ আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তার স্মৃতি রবে আমার হৃদয়ের মণিকোঠায়।
**লেখক একজন সুনামধন্য কবি ও সাহিত্যক**