পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশিষ্ট আদিবাসী লেখক ও সমাজকর্মী বীর কুমার তংচংগ্যা বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাঙামাটি শহরের কালিন্দীপুরস্থ নিজ বাস ভবনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন(বুদ্ধ-ধর্ম-সংঘ)।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বৎসর। তিনি স্ত্রী, কন্যাসহ অসংখ্য আত্বীয়-স্বজন রেখে গেছেন।তিনি দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে অচল জীবনযাপন করছিলেন।
জানা গেছে,স্বর্গীয় বীর কুমার তংচংগ্যা ১৯৩৪ সালের ১২ এপ্রিল রাঙামাটি পার্বত্য জেলাধীন তৎকালীন বিলাইছড়ি উপজেলার কুতুবদিয়ার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাহার পিতার নাম রাজ্যমণি তংচংগ্যা। কানুনগোপাড়া স্যার আশুতোষ কলেজে শিক্ষা গ্রহণ করে বাংলাদেশ সংস্কৃত ও পালি বোর্ড হতে ত্রিপিটকের “সুত্ত ও বিনয়” এ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। সাহিত্য ক্ষেত্রে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য তিনি সমাজের বিভিন্ন স্তরের সম্মানিত হন।
তার সাহিত্য জীবনে অসংখ্য কবিতা, নাটক, গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তার লেখা উপন্যাসের মধ্যে অন্যতম “সাতচল্লিশের পরে”, “রুনু খাঁর উপাখ্যান”, অরণ্যে ফুলের গন্ধ ইত্যাদি। নাটকের মধ্যে অমিতাভ, মুড়া যেক্কেনে কানে ইত্যাদি। প্রবন্ধের মধ্যে রয়েছে ভাগ্য রত্ন, তংচংগ্যাা পরিচিতি, চাকমা-তংচংগ্যার লোকায়ত দর্শন, তংচংগ্যা রূপকথা ইত্যাদি।
তিনি সাহিত্য কর্মের অবদান স্বরূপ ২০০১ সালে সাবেক প্রধান বিচারপতি ও তত্তাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান এর কাছ থেকে পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃক বিশেষ সম্মাননা লাভ করেন। এছাড়াও চট্টগ্রামের “অবসর সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী”, জাক, বিষু উদযাপন কমিটি, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থা কর্তৃক সম্মানিত ও পুরস্কৃত হন।
একসময় তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় পত্রিকা পার্বত্য বাণী, কলিকাতা থেকে প্রকাশিত “বোধি ভারতী” ও ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা হতে প্রকাশিত মাদি পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন। এছাড়াও স্থানীয় বিভিন্ন সাময়ীকি ও পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে। তাছাড়াও চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত খ্যাতিমান দৈনিক সুপ্রভাত বাংলদেশ-এর ঝিরি-ঝরণা পাতায়ও তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে।
এদিকে,পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা এক বিবৃতিতে বীর কুমার তংচংগ্যার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জানিয়েছেন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, তিনি দীর্ঘ দিন ধরে আদিবাসী সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় লেখালেখি করে আদিবাসী সাহিত্য চর্চাকে নানাভাবে অনুপ্রাণিত ও সমৃদ্ধ করেছেন। পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডসহ আদিবাসী জুম্মদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনের ক্ষেত্রেও সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন।
বিশিষ্ট আদিবাসী লেখক বীর কুমার তংচংগ্যার মৃত্যুতে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভিত্তিক অনলাইন নিউজ পেপার ও ফটোগ্রাফী ওয়বে পোর্টাল হিলবিডি২৪ ডটকমের পরিবারের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জানাচ্ছে।
–হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.