চলতি বছরের আগষ্ট মাস পর্যন্ত প্রায় ৪১জন আদিবাসী নারী ও শিশু ধর্ষণ, গণ ধর্ষণ, হত্যা, অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এছাড়্ বান্দরবান জেলার আলিকদম-থানচির মধ্যবর্তী পাহাড়ি এলাকার কমপক্ষে পাঁচশতাধিক আদিবাসী নিরাপত্তার অভাবে মায়ানমারে দেশান্তরিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় আদিবাসী মানবাধিকার সুরক্ষাকর্মীদের সম্মেলনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
কাপেং ফাউন্ডেশন সমন্বয়কারী সোহেল হাজং এর স্বাক্ষরিত এক প্রেস বার্তায় বলা হয়, কাপেং ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে দিনব্যাপী সন্মেলনের উদ্বোধন করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান। সম্মেলনের উদ্বোধনী সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ্যাড. সুলতানা কামাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার পেনীমর্টন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিব দ্রং। উদ্বোধনী সভাটি সভাপতিত্ব করেন কাপেংফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ও জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্র নাথ সরেন। সম্মেলনের এ অধিবেশনে স্বাাগত বক্তব্য রাখেন কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা।
সন্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আইপিএইচআরডি সদস্যরা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে গিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। সম্মেলনের তৃতীয় অধিবেশনে আইপিএইচআরডি নেটওয়ার্ক কিভাবে কাজ করবে তার একটি কৌশল পত্র পরিকল্পনা তৈরি নিয়ে আলোচনা হয়। সমাপনী অধিবেশনে আদিবাসী সংগঠন ছাড়াও দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন এবং এ সম্মেলনে একটি ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করা হবে। এ সম্মেলনে প্রথমবারের মতো সারাদেশ থেকে প্রায় ১শ জন আদিবাসী মানবাধিকার সুরক্ষাকর্মীরা অংশ গ্রহণ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুলতানা কামাল বলেন দেশে যারা মানবাধিকার নিয়ে কাজ করছে তারা এখন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাদেরকে হুমকী ও মধ্যে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। একদিকে রাষ্টপক্ষ নিজেও মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করছে না, আবার যারা এসব কাজ করছে তাদের পাশে গিয়েও দাঁড়াচ্ছে না। বরং মানবাধিকার কর্মীদেরকে সরকার মাঝে মাঝে রাষ্ট্রদ্রোহী বলে সম্বোধন করছে।
তিনি আরো বলেন, আদিবাসীরা এদেশে অন্যন্ত খারাপ অবস্থায় রয়েছে।তাদের ভূমি দখল করা হচ্ছে, আদিবাসী নারীদের নির্যাতন করা হচ্ছে, তাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এখানে রাষ্ট্র তাদের পাশে না দাঁড়িয়ে বরং নির্যাতনকারীদের পাশে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। একটি সুন্দর দেশ গড়ার লক্ষ্যে তিনি আদিবাসী ও অ-আদিবাসী মানবাধিকারকর্মীদের একসাথে এগিয়ে এসে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান জানান।
উদ্বোধনী বক্তব্যে ড. মিজানুররহমান দেশের আদিবাসীদের মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। সামনে জাতীয় নির্বাচনে যেন আদিবাসী সংখ্যালঘুরা কোনভাবেই নির্যাতন বামানবাধিকার লঙ্ঘণের শিকার না হন সেজন্য তিনি সরকারকে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিতে।
অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার পেনীমর্টন বলেন, অস্ট্রেলিয়ান সরকার আদিবাসী অধিকার প্রতিষ্ঠায় খুব তৎপর এবং অস্ট্রেলিয়ায় এবং সারা বিশ্বে সে সরকার বিভিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়া সরকার আদিবাসী অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্র (ইউএনড্রিপ)সমর্থন করেছে। এদেশেও অস্ট্রেলিয়ান সরকার বাংলাদেশ সরকার ও নানা এনজিওদের সাথে আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন,আগামী বছর থেকে অস্ট্রেলিয়া এ্যাওয়ার্ড বৃত্তি আদিবাসীদের জন্য ১০% কোটা সংরক্ষিত থাকবে।
সন্মেলনে সন্মেলনে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে আদিবাসী নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কাপেংফাউন্ডেশন ২০১৭ সালেই এরূপ ৫৭ জন আদিবাসী ভিকটিমের ৪৮টিরও অধিক ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছে। উত্তরবঙ্গে কয়েকশত আদিবাসী, সাম্প্রদায়িক হুমকি ও আক্রমণের কারণে এবং ভূমি দস্যুদের ভয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের অবস্থা আরও সংকটজনক। পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেক আশা নিয়ে ১৯৯৭ সালে সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, এ চুক্তির ২০ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও মৌলিক বিষয়গুলো এখনও অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে। এসব কিছুর পরও আদিবাসীজনগণ তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে চলেছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.